২৭ বছর এক ছাদের নিচে থাকার পর বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন মাইক্রোসফটের কর্ণধার বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস। সোমবার টুইটারে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে তারা জানান, ‘আমরা এটা আর বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমাদের জীবনের পরের ধাপে দম্পতি হিসেবে আমরা একসঙ্গে থাকতে পারব।’
মূলত প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন বিল ও মেলিন্ডা গেটস। কাজের সুবাদে পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেম। ৭ বছর প্রণয়ের পর দুজন ঠিক করেন এক ছাদের নিচে থাকবেন। এভাবে কেটে গেছে ২৭ টি বছর। এই সময়ে তাদের ঘর আলো করে এসেছেন তিন সন্তান। সেই সম্পর্ককে আর বয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না ধনকুবের এই দম্পতি।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মেলিন্ডা মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছিলেন প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে ১৯৮৭ সালে। ওই বছর তারা নিউইয়র্কে একটি বিজনেস ডিনারে মিলিত হয়েছিলেন।
নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারিতে বিল গেটস নিজেদের সম্পর্কের বিষয়ে বলেছেন, আমরা একে অন্যের যথেষ্ট যত্ন করেছি এবং সেখানে দুটি সম্ভাবনা ছিলো- হয় বিচ্ছেদ নয়তো বিয়ে।
১৯৯৪ সালে তারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ১৯৭৫ সালে মাইক্রসফট নিয়ে কাজ শুরু করেন বিল গেটস। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ৪৯ ভাগ সম্পদের মালিক। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা বিলিওনিয়ারে পরিণত হন।
মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠার এক যুগ পর মেলিন্ডার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হয়েছিল বিলের। জানা যায়, ১৯৮৭ সালে চার চোখ প্রথম এক হয়েছিল। এরপর তারা সাত বছর প্রেম করেছিলেন। অতঃপর বিয়ে।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, বিল গেটস ও মেলিন্ডার সম্পর্কের শুরুটা ছিল পেশাভিত্তিক। ১৯৮৭ সালে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছিলেন মেলিন্ডা। এরপর দুজনের মধ্যে জানাশোনা শুরু হয়।
এরপরের গল্প দুজনের সামনে এগিয়ে যাওয়া। শুরু হয় দুজনের চুটিয়ে প্রেম। নেটফ্লিক্সে প্রচারিত এক তথ্যচিত্রে বিল গেটস বলেছেন, ‘আমরা একে অপরের খুব খেয়াল রাখতাম। এখানে দুটি সম্ভাবনা ছিল। হয় আমাদের প্রেমে বিচ্ছেদ হবে, নয়তো আমাদের বিয়ে করতে হবে।’
মেলিন্ডা বলেন, তিনি বিল গেটসকে একজন সুশৃঙ্খল মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করেছিলেন। এমনকি তাকে বিয়ে করার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিও দিয়েছিলেন বিল—এমনটাই জানিয়েছিলেন মেলিন্ডা।
এরপর প্রেম আরও গভীর হয়েছে। প্রেম শুরুর সাত বছর পর ১৯৯৪ সালে তারা এক ছাদের নিচে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
হাওয়াই দ্বীপের লানাইয়ে হয়েছিল সেই আয়োজন। এরপর মাইক্রোসফট বড় হয়েছে। কিন্তু গত বছর তারা এ প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরে যান, ব্যস্ত হয়ে পড়েন দাতব্যকাজে।
এজন্য ২০০০ সালে দুজনে মিলে গড়ে তোলেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থা। এ ফাউন্ডেশন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে সংক্রামক রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই ও শিশুদের টিকাদানে উৎসাহিত করতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে এ ফাউন্ডেশন।
কিন্তু যে পথ বেঁধে দিয়েছিল বন্ধন, তার বিচ্ছেদের ঘোষণা এল সোমবার। দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে গেল বেঁকে। দীর্ঘ ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন বিল ও মেলিন্ডা। টুইটার বার্তায় তারা এ ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার টুইটারে পোস্ট করা যৌথ বার্তায় গেটস দম্পতি বলেন, ‘ব্যাপক চিন্তাভাবনা করে আমরা বিয়ের সম্পর্কের সমাপ্তি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এ ছাড়া টুইটবার্তায় বিল গেটস ও মেলিন্ডা বলেন, ‘গত ২৭ বছরে আমরা অসাধারণ তিনটি সন্তান পেয়েছি। এমন একটা ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি, যে ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে মানুষের স্বাস্থ্য ও সক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। আমরা যে বিশ্বাস থেকে ফাউন্ডেশনটি চালু করেছি, সেটা থাকবে। এই ফাউন্ডেশনের কাজ একসঙ্গে চালিয়ে যাব। কিন্তু আমরা এটা আর বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমাদের জীবনের পরের ধাপে দম্পতি হিসেবে আমরা একসঙ্গে থাকতে পারব।’
গেটস দম্পতির তিন সন্তান- জেনিফার (২৫), রোরি (২১) ও ফোয়েব (১৮)।
ইনস্টাগ্রামে জেনিফার গেটস লিখেছেন, ‘আমাদের পুরো পরিবারের জন্য একটা দুঃসময় ছিল।’ জীবনের পরবর্তী ধাপে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি বোঝার জন্য সবাইকে অগ্রিম ধন্যবাদ দেন গেটস দম্পতির বড় মেয়ে জেনিফার।
মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বিশ্বের অন্যতম ধনী। ফোর্বস সাময়িকীর তথ্যমতে, বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় বিল গেটস চতুর্থ অবস্থানে আছেন। তার সম্পদের পরিমাণ ১২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বিশ্বের অন্যতম ধনী ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে ‘দ্য গিভিং প্লেজ’ উদ্যোগে জড়িত। এ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের ধনীদের সম্পদের একটি বড় অংশ দাতব্যকাজে লাগানো।
এই দম্পতির প্রতিষ্ঠিত দ্য গেটস ফাউন্ডেশন মূলত বিশ্বের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে কাজ করে। ফাউন্ডেশনটি করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ও টিকা তৈরিতে সবচেয়ে বড় তহবিল সরবরাহকারী। ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে তিনি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করতে চান বলে জানান বিল গেটস।সূত্রঃ যুগান্তর।