প্রবৃত্তি দিয়েই আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা দিয়েছেন। অন্তরের যতগুলো রোগ আছে প্রবৃত্তির অনুসরণ তার অন্যতম। আল্লাহ তাআলা সমস্ত নবী-রাসূল ও মুমিন বান্দাদেরকে প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করতে নিষেধ করেছেন এবং যারা প্রবৃত্তির তাড়নায় কাজ সম্পাদন করে, তাদেরকেও অনুসরণ-অনুকরণ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, তিনটি কাজ মানুষকে রক্ষা করে এবং তিনটি কাজ মানুষকে ধ্বংস করে। রক্ষাকারী কাজ তিনটি হচ্ছে-এক. প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করাদুই. সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে হক কথা বলা এবংতিন. সচ্ছলতায় ও অসচ্ছলতায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসকারী কাজ তিনটি হচ্ছে-এক. প্রবৃত্তির অনুসরণ করাদুই. কৃপণতাকে মেনে নেওয়া এবংতিন. আত্ম-অহংকার করা। আর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন। (বায়হাক্বী, মিশকাত, হাদীস নং ৫১২২)নিম্নোক্ত প্রবন্ধে আমরা প্রবৃত্তির শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ, কোরআন-হাদিসে শব্দটির মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিভিন্ন নির্দেশনা জানার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।الهواء في اللغه: مصدر هوی، یقال هویه: اذا أحبه واشتهاہ، ثم سمی به المهویالمشتهی، محمودا كان او مذموما، ثم غلب على غير المحمود، فقیل: فلان التبع هواہ: اذا أريد ذمه،وفي التنزيل قوله تعالى: ولا تتبع الهوى، (سورة ص /٢٦)قوله تعالى: ولا تتبعوا أهواء قوم قد ضلوا من قبل وأضلوا کثیرا ، سورة المائدة/٧٧হাউয়া (هوی) শব্দটির মূল ধাতু হলো ہ و ی। (হাবিয়া) ہهوِیَ মাসদার থেকে নির্গত। এর বহুবচন (اهواء، هوایا) আহউয়া, হাউয়াইয়া। যে প্রবৃত্তি তথা কামনা-বাসনার অনুসরণ করে আরবীতে তাকে বলা হয় (مهوی) মাহবী, প্রবৃত্তি বা নফসের অনুসারী।প্রবৃত্তি তথা নাফসের অনুসরণ করা, মনের চাহিদা, কামনা-বাসনা অনুযায়ী কাজ করা, এটা সবসময় খারাপ বা নিন্দনীয় না। মানুষের নফস কখনো কখনো ভালো কাজ করতে উদ্ভুদ্ধ করে, তখন সেটি প্রশংসনীয় হয়। তবে নফস অধিকাংশ সময়ই খারাপ কথা বা কাজে উদ্ভুদ্ধ করে।অতএব, কোন ব্যক্তি যখন প্রবৃত্তির তাড়নায় খারাপ কথা বা কাজে লিপ্ত হয়, আরবরা তখন তাকে ইত্যাবা হওয়া (فلان اتبع هواہ ) বলে অর্থাৎ অমুক ব্যক্তি নফস ও খাহেশাতের অনুসরণ করেছে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-ولا تتبعوا اهواء قوم قد ضلوا من قبل واضلوا كثيرا وضلوا عن سواء السبيلতোমরা ঐ সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অন্যকে পথভ্রষ্ট করেছে। (সুরা মায়েদা, আয়াত ৭৭)শরীয়তের পরিভাষায় هواالهواء اصطلاحا: قال عبد العزيز البخاري رحمه الله تعالى: الهوى ميلان النفس الى ما تستلذ به من الشهوات من غير داعية الشرع (كشف الأسرار عن أصول البزدوي ٣/٥٠)আবদুল আজিজ আল বোখারী রাহিমাহুল্লাহ তা’আলা বলেন ہوا হলো, শরীয়ত বহির্ভূত উপভোগ্য জিনিসের/বিষয়ের প্রতি অন্তরের আকর্ষণ।হাউয়া (هوا) এর সমার্থবোধক শব্দ شهوةশাহওয়াত (شهوة) এর শাব্দিক অর্থ, নফসের চাহিদা অনুযায়ী মন ধাবিত হওয়া। বহুবচন (شهوات، اشبهة، شهی) (আল মুজামুল ওয়াসিত)শরীয়তের পরিভাষায় শাহওয়াত (شهوة) হলোحركة النفس طلبا للملائمঅর্থাৎ সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন জিনিস অন্বেষণে অন্তর বা নফস ধাবিত হওয়া। (কাওয়ায়েদুল ফিকহ)তবে هوا এবং شهوة এর মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। هوا মানুষের চাহিদা এবং বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত। আর شهوة হলো উপভোগ্য জিনিস অর্জনের সাথে সম্পৃক্ত। সে হিসেবে শাহওয়াত, هوا এর নতিজা বা ফলাফল। شهوة খাস তথা নির্দিষ্ট। আর هوا হলো আম তথা ব্যাপক।পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা هوا এর অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُونُواْ قَوَّٰمِينَ بِٱلۡقِسۡطِ شُهَدَآءَ لِلَّهِ وَلَوۡ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ أَوِ ٱلۡوَٰلِدَيۡنِ وَٱلۡأَقۡرَبِينَۚ إِن يَكُنۡ غَنِيًّا أَوۡ فَقِيرٗا فَٱللَّهُ أَوۡلَىٰ بِهِمَاۖ فَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلۡهَوَىٰٓ أَن تَعۡدِلُواْۚ وَإِن تَلۡوُۥٓاْ أَوۡ تُعۡرِضُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٗاহে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র, তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে- পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা এড়িয়ে যাও তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত। [সূরা নিসা, আয়াত: ১৩৫]আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন -يَٰدَاوُۥدُ إِنَّا جَعَلۡنَٰكَ خَلِيفَةٗ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَٱحۡكُم بَيۡنَ ٱلنَّاسِ بِٱلۡحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ ٱلۡهَوَىٰ فَيُضِلَّكَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَضِلُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ لَهُمۡ عَذَابٞ شَدِيدُۢ بِمَا نَسُواْ يَوۡمَ ٱلۡحِسَابِহে দাঊদ, নিশ্চয় আমি তোমাকে যমীনে খলীফা বানিয়েছি, অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার কর আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে। কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল। (সূরা ছোয়াদ, আয়াত: ২৬)আল্লাহ তায়ালা তার নবীকে (সা.) নির্দেশ দিয়ে বলেন, আপনি কাফেরদের বলুন-قُلۡ إِنِّي نُهِيتُ أَنۡ أَعۡبُدَ ٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِۚ قُل لَّآ أَتَّبِعُ أَهۡوَآءَكُمۡ قَدۡ ضَلَلۡتُ إِذٗا وَمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلۡمُهۡتَدِينَবল, ‘নিশ্চয় আমাকে নিষেধ করা হয়েছে তাদের উপাসনা করতে, যাদেরকে তোমরা ডাক আল্লাহ ছাড়া। বল, ‘আমি তোমাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করি না, (যদি করি) নিশ্চয় তখন পথভ্রষ্ট হব এবং আমি হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হব না। (সূরা আনআম, আয়াত: ৫৬)فَٱحۡكُم بَيۡنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُۖ وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلۡحَقِّসুতরাং, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা মায়দো, আয়াত: ৪৮) فَلِذَٰلِكَ فَٱدۡعُۖ وَٱسۡتَقِمۡ كَمَآ أُمِرۡتَۖ وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡۖএ কারণে তুমি আহবান কর এবং দৃঢ় থাক যেমন তুমি আদিষ্ট হয়েছ। আর তুমি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না। (সূরা শুরা, আয়াত: ১৫)وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَلَا تُطِعۡ مَنۡ أَغۡفَلۡنَا قَلۡبَهُۥ عَن ذِكۡرِنَا وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ وَكَانَ أَمۡرُهُۥ فُرُطٗاআর তুমি নিজকে ধৈর্যশীল রাখ তাদের সাথে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে, তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশে এবং দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে। তোমার দু’চোখ যেন তাদের থেকে ঘুরে না যায়। আর ওই ব্যক্তির আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার যিকির থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে। (সূরা কাহাফ, আয়াত: ২৮)রাসুল সা. তাঁর হাদীস শরীফে ہوا এর অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ قَالَ لِإِنْسَانٍ إِنَّكَ فِي زَمَانٍ كَثِيرٌ فُقَهَاؤُهُ قَلِيلٌ قُرَّاؤُهُ تُحْفَظُ فِيهِ حُدُودُ الْقُرْآنِ وَتُضَيَّعُ حُرُوفُهُ قَلِيلٌ مَنْ يَسْأَلُ كَثِيرٌ مَنْ يُعْطِي يُطِيلُونَ فِيهِ الصَّلَاةَ وَيَقْصُرُونَ الْخُطْبَةَ يُبَدُّونَ أَعْمَالَهُمْ قَبْلَ أَهْوَائِهِمْ وَسَيَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ قَلِيلٌ فُقَهَاؤُهُ كَثِيرٌ قُرَّاؤُهُ يُحْفَظُ فِيهِ حُرُوفُ الْقُرْآنِ وَتُضَيَّعُ حُدُودُهُ كَثِيرٌ مَنْ يَسْأَلُ قَلِيلٌ مَنْ يُعْطِي يُطِيلُونَ فِيهِ الْخُطْبَةَ وَيَقْصُرُونَ الصَّلَاةَ يُبَدُّونَ فِيهِ أَهْوَاءَهُمْ قَبْلَ أَعْمَالِهِمْ.ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) থেকে বর্ণিতঃ:আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলেছেন, তুমি এমন এক যুগে বাস করছ, যে যুগে ধর্মীয় বিষয়ে বিজ্ঞ অনেক আলিম রয়েছেন, কারী আছেন কম (অর্থাৎ আমল ও জ্ঞান ছাড়া কেবল কুরআন পাঠকারীদের সংখ্যা অতি অল্প)। এই যুগে কুরআনের আদেশ নিষেধ প্রভৃতি হিফাযত করা হয়, শব্দের দিকে মনোযোগ দেয়া হয় কম, ভিক্ষুকের সংখ্যা কম, দাতার সংখ্যা বেশি, নামায আদায় করেন দীর্ঘ আর খুতবা পাঠ করেন ছোট। সে যুগে প্রবৃত্তি বা খাহেশাতের তাঁবেদারীর পূর্বে তাঁরা আমল শুরু করে দেন। অদূর ভবিষ্যতে মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে, সে যুগে বিজ্ঞ উলামা হবেন অল্প। কারিগণ হবেন অনেক, কুরআনের শব্দসমূহের হিফাযত করা হবে, অপরদিকে আহকামে কুরআনকে বরবাদ করা হবে (আমলের প্রতি নযর দেবে কম)। ভিক্ষুক হবে অনেক, দাতার সংখ্যা হবে অল্প। খুতবা লম্বা প্রদান করবে আর নামায আদায় করবে মুখতাসার, আমলের নয়, খাহেশাত বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করা হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ৪০৫عن أبي يعلى شداد بن أوس رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: “ الكيس من دان نفسه، وعمل لما بعد الموت ، والعاجز من أتبع نفسه هواها، وتمنى على الله الأماني” (رواه الترمذي وقال حديث حسن).শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তি জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন, যে তার নিজের আত্মপর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য (নেক) আমল করে। আর ঐ লোক দুর্বল যে স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, আবার আল্লাহর কাছে অবাস্তব আশা পোষণ করে। (রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৬৭)حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبُو رَوَاحَةَ يَزِيدُ بْنُ أَيْهَمَ، عَنِ الْهَيْثَمِ بْنِ مَالِكٍ الطَّائِيِّ قَالَ: سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ يَقُولُ عَلَى الْمِنْبَرِ، قَالَ: إِنَّ لِلشَّيْطَانِ مَصَالِيًا وَفُخُوخًا، وَإِنَّ مَصَالِيَ الشَّيْطَانِ وَفُخُوخَهُ: الْبَطَرُ بِأَنْعُمِ اللَّهِ، وَالْفَخْرُ بِعَطَاءِ اللَّهِ، وَالْكِبْرِيَاءُ عَلَى عِبَادِ اللَّهِ، وَاتِّبَاعُ الْهَوَى فِي غَيْرِ ذَاتِ اللَّهِহায়সাম ইবনে মালেক আত-তাই (র) থেকে বর্ণিতঃ:আমি নোমান ইবনে বশীর (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছি, শয়তানের অনেক রকম জাল ও ফাঁদ আছে। শয়তানের জাল ও ফাঁদ হচ্ছে আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে অহংকার করা, আল্লাহর দান সম্পর্কে গর্ব করা, আল্লাহর বান্দাগণের উপর অহংকার করা এবং আল্লাহর সত্তা ব্যতীত নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করা (বায়হাকীর শুআবুল ঈমান, জামে সগীর, ইবনে আসাকির)।হাদিসের মান: হাসান মাওকুফعَنْ أَبِيْ بَرْزَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّمَا أَخْشَى عَلَيْكُمْ شَهَوَاتِ الْغَيِّ فِيْ بُطُوْنِكُمْ وَفُرُوْجِكُمْ وَمُضِلَّاتِ الْهَوَى.আবু বারযাহ আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ব্যাপারে তোমাদের অবৈধ উপার্জনের প্রবৃত্তি এবং অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়ার প্রবৃত্তি সম্পর্কে ভয় করি এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সুন্নাতের ব্যাপারে ভ্রান্ত পথে চলার আশংকা করি’ (মুসনাদু বাযযার হা/৩৮৪৪; আত-তারগীব হা/৭৭)।(صحيح) عَنْ أَبِي بَرْزَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ مِمَّا أَخْشَى عَلَيْكُمْ شَهَوَاتِ الْغَيِّ فِي بُطُونِكُمْ وَفُرُوجِكُمْ وَمُضِلَّاتِ الْهَوَى. رواه أحمد والبزار والطبرانيআবু বারযাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর যা আশংকা করছি তা হচ্ছে, পেটের ব্যাপারে এবং যৌনাঙ্গের বিষয়ে লোভে পড়ে পথভ্রষ্ট হওয়া এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করে বিভ্রান্ত হওয়া।”(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আহমদ, ত্বাবরানী ও বাযযার)হাদিসের মান: সহিহ হাদিসعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: ثَلَاثٌ مُنْجِيَاتٌ وَثَلَاثٌ مُهْلِكَاتٌ فَأَمَّا الْمُنْجِيَاتُ: فَتَقْوَى اللهِ فِي السِّرِّ وَالْعَلاَنِيَّةِ وَالْقَوْلُ بِالْحَقِّ فِي الرِّضَى وَالسُّخْطِ وَالْقَصْدُ فِي الْغِنَى وَالْفَقْرِ. وَأَمَّا الْمُهْلِكَاتُ: فَهَوًى مُتَّبَعٌ وَشُحٌّ مُطَاعٌ وَإِعْجَابُ الْمَرْءِ بِنَفْسِهِ وَهِيَ أَشَدُّهُنَّ.আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তিনটি কাজ মানুষকে রক্ষা করে এবং তিনটি কাজ মানুষকে ধ্বংস করে। রক্ষাকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- (১) প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা (২) সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে হক কথা বলা এবং (৩) সচ্ছলতায় ও অসচ্ছলতায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- (১) প্রবৃত্তির অনুসরণ করা (২) কৃপণতাকে মেনে নেওয়া এবং (৩) আত্ম-অহংকার করা। আর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫১২২)হাদীসে রাসুল সা. শাহওয়াত (شہوة) থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।إِسْمَاعِيلُ قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ عَنْ أَبِي الزِّنَادِ عَنْ الأَعْرَجِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ حُجِبَتْ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ وَحُجِبَتْ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِআবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত-রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, জাহান্নাম কামনা বাসনা দ্বারা বেষ্টিত। আর জান্নাত বেষ্টিত দুঃখ-মুসিবত দ্বারা।সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৪৮৭হাদিসের মান: সহিহ হাদিসশাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির অনুসরণ করে প্রবৃত্তি তাঁকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে দেয়, ফলে সে ভালো-মন্দ বুঝতে পারেনা।পরিশেষে বলব, প্রবৃত্তির অনুসরণ করে জাহান্নামের পথ থেকে বেছে থাকা সকলের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমরা ব্যক্তিজীবনে প্রবৃত্তির অনুসরণ করছি, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবনেও প্রবৃত্তির অনুসরণ করছি। আজকে সমাজ ও রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রনায়কদের খামখেয়ালীপনা, অর্থনৈতিক বিশৃংখলা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অস্থিরতা, এ সবকিছুর মূল কারণ হলো প্রবৃত্তির অনুসরণ। মন যা চায় তাই করা। আমরা কখনো ভাবছি না, আমাদের এ চাওয়া, খামখেয়ালীপনা এবং নফসে খাহেশাত এর অনুসরণ ইসলাম বিরুদ্ধ, কোরআন হাদীসের বিপরীত, ইসলামের সাথে সাংর্ঘষিক। অতএব, আমরা যদি আমাদের প্রবৃত্তিকে কন্ট্রোল করে কোরআন হাদিস অনুযায়ী ইসলামের সঠিক ধারায় প্রবাহিত করতে পারি এবং ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালিত করতে পারি, তাহলেই আমাদের জীবন ও আখেরাত সফল ও সার্থক হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক ভাবে চলার তৌফিক দান করুন।তথ্যসুত্র-১। কোরআনুল কারীম২। তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন, মুফতী শফী রহ.৩। তাফসীরে ইবনে কাছীর, হাফেজ ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর৪। সহীহ বুখারী, আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে ঈসমাইল বুখারী রহ.৫। সহীহ মুসলিম, আল্লামা মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল কুশাইরী রহ.৬। সুনানে আবু দাউদ, আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে আল-আশআস আল-আজদি আল-সিজিস্তানি রহ.৭। জামে আত্ তিরমিযী, আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত তিরমিজি (র.)৮। লিসানুল আরব, আল্লামা জামালুদ্দীন আবুল ফজল ইবনে মানযুর৯। আল মু’জামুল ওয়াফী, ড. মুহাম্মাদ ফজলুর রহমান১০। আল মু’জামুল ওয়াসীত, মাজমায়ু লুগাতিল আরাবিয়্যা কায়রো, মিশর১১। আল মুনজিদ, আল্ লুগাতুল আরাবিয়্যা, আরবী-আরবী১২। আল মাউসূয়াতুল ফিকহিয়্যা,কুয়েত১৩। উইকিপিডিয়ালেখকমুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাকদাওরায়ে হাদিস ও ইসলামী আইন ও গবেষণা ( ইফতা)জামিয়া কারিমিয়া সাঈদনগর,ভাটারা, ঢাকা।
প্রবৃত্তি দিয়েই আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা দিয়েছেন। অন্তরের যতগুলো রোগ আছে প্রবৃত্তির অনুসরণ তার অন্যতম। আল্লাহ তাআলা সমস্ত নবী-রাসূল ও মুমিন বান্দাদেরকে প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করতে নিষেধ করেছেন এবং যারা প্রবৃত্তির তাড়নায় কাজ সম্পাদন করে, তাদেরকেও অনুসরণ-অনুকরণ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, তিনটি কাজ মানুষকে রক্ষা করে এবং তিনটি কাজ মানুষকে ধ্বংস করে। রক্ষাকারী কাজ তিনটি হচ্ছে-
এক. প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা
দুই. সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে হক কথা বলা এবং
তিন. সচ্ছলতায় ও অসচ্ছলতায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসকারী কাজ তিনটি হচ্ছে-
এক. প্রবৃত্তির অনুসরণ করা
দুই. কৃপণতাকে মেনে নেওয়া এবং
তিন. আত্ম-অহংকার করা। আর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন। (বায়হাক্বী, মিশকাত, হাদীস নং ৫১২২)
নিম্নোক্ত প্রবন্ধে আমরা প্রবৃত্তির শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ, কোরআন-হাদিসে শব্দটির মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিভিন্ন নির্দেশনা জানার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
الهواء في اللغه: مصدر هوی، یقال هویه: اذا أحبه واشتهاہ، ثم سمی به المهوی
المشتهی، محمودا كان او مذموما، ثم غلب على غير المحمود، فقیل: فلان التبع هواہ: اذا أريد ذمه،
وفي التنزيل قوله تعالى: ولا تتبع الهوى، (سورة ص /٢٦)
قوله تعالى: ولا تتبعوا أهواء قوم قد ضلوا من قبل وأضلوا کثیرا ، سورة المائدة/٧٧
হাউয়া (هوی) শব্দটির মূল ধাতু হলো ہ و ی। (হাবিয়া) ہهوِیَ মাসদার থেকে নির্গত। এর বহুবচন (اهواء، هوایا) আহউয়া, হাউয়াইয়া। যে প্রবৃত্তি তথা কামনা-বাসনার অনুসরণ করে আরবীতে তাকে বলা হয় (مهوی) মাহবী, প্রবৃত্তি বা নফসের অনুসারী।
প্রবৃত্তি তথা নাফসের অনুসরণ করা, মনের চাহিদা, কামনা-বাসনা অনুযায়ী কাজ করা, এটা সবসময় খারাপ বা নিন্দনীয় না। মানুষের নফস কখনো কখনো ভালো কাজ করতে উদ্ভুদ্ধ করে, তখন সেটি প্রশংসনীয় হয়। তবে নফস অধিকাংশ সময়ই খারাপ কথা বা কাজে উদ্ভুদ্ধ করে।
অতএব, কোন ব্যক্তি যখন প্রবৃত্তির তাড়নায় খারাপ কথা বা কাজে লিপ্ত হয়, আরবরা তখন তাকে ইত্যাবা হওয়া (فلان اتبع هواہ ) বলে অর্থাৎ অমুক ব্যক্তি নফস ও খাহেশাতের অনুসরণ করেছে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-
ولا تتبعوا اهواء قوم قد ضلوا من قبل واضلوا كثيرا وضلوا عن سواء السبيل
তোমরা ঐ সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অন্যকে পথভ্রষ্ট করেছে। (সুরা মায়েদা, আয়াত ৭৭)
শরীয়তের পরিভাষায় هوا
الهواء اصطلاحا: قال عبد العزيز البخاري رحمه الله تعالى: الهوى ميلان النفس الى ما تستلذ به من الشهوات من غير داعية الشرع (كشف الأسرار عن أصول البزدوي ٣/٥٠)
আবদুল আজিজ আল বোখারী রাহিমাহুল্লাহ তা’আলা বলেন ہوا হলো, শরীয়ত বহির্ভূত উপভোগ্য জিনিসের/বিষয়ের প্রতি অন্তরের আকর্ষণ।
হাউয়া (هوا) এর সমার্থবোধক শব্দ شهوة
শাহওয়াত (شهوة) এর শাব্দিক অর্থ, নফসের চাহিদা অনুযায়ী মন ধাবিত হওয়া। বহুবচন (شهوات، اشبهة، شهی) (আল মুজামুল ওয়াসিত)
শরীয়তের পরিভাষায় শাহওয়াত (شهوة) হলো
حركة النفس طلبا للملائم
অর্থাৎ সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন জিনিস অন্বেষণে অন্তর বা নফস ধাবিত হওয়া। (কাওয়ায়েদুল ফিকহ)
তবে هوا এবং شهوة এর মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। هوا মানুষের চাহিদা এবং বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত। আর شهوة হলো উপভোগ্য জিনিস অর্জনের সাথে সম্পৃক্ত। সে হিসেবে শাহওয়াত, هوا এর নতিজা বা ফলাফল। شهوة খাস তথা নির্দিষ্ট। আর هوا হলো আম তথা ব্যাপক।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা هوا এর অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُونُواْ قَوَّٰمِينَ بِٱلۡقِسۡطِ شُهَدَآءَ لِلَّهِ وَلَوۡ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ أَوِ ٱلۡوَٰلِدَيۡنِ وَٱلۡأَقۡرَبِينَۚ إِن يَكُنۡ غَنِيًّا أَوۡ فَقِيرٗا فَٱللَّهُ أَوۡلَىٰ بِهِمَاۖ فَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلۡهَوَىٰٓ أَن تَعۡدِلُواْۚ وَإِن تَلۡوُۥٓاْ أَوۡ تُعۡرِضُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٗا
হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র, তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে- পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা এড়িয়ে যাও তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত। [সূরা নিসা, আয়াত: ১৩৫]
আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন –
يَٰدَاوُۥدُ إِنَّا جَعَلۡنَٰكَ خَلِيفَةٗ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَٱحۡكُم بَيۡنَ ٱلنَّاسِ بِٱلۡحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ ٱلۡهَوَىٰ فَيُضِلَّكَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَضِلُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ لَهُمۡ عَذَابٞ شَدِيدُۢ بِمَا نَسُواْ يَوۡمَ ٱلۡحِسَابِ
হে দাঊদ, নিশ্চয় আমি তোমাকে যমীনে খলীফা বানিয়েছি, অতএব তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার কর আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে। কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল। (সূরা ছোয়াদ, আয়াত: ২৬)
আল্লাহ তায়ালা তার নবীকে (সা.) নির্দেশ দিয়ে বলেন, আপনি কাফেরদের বলুন-
قُلۡ إِنِّي نُهِيتُ أَنۡ أَعۡبُدَ ٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِۚ قُل لَّآ أَتَّبِعُ أَهۡوَآءَكُمۡ قَدۡ ضَلَلۡتُ إِذٗا وَمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلۡمُهۡتَدِينَ
বল, ‘নিশ্চয় আমাকে নিষেধ করা হয়েছে তাদের উপাসনা করতে, যাদেরকে তোমরা ডাক আল্লাহ ছাড়া। বল, ‘আমি তোমাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করি না, (যদি করি) নিশ্চয় তখন পথভ্রষ্ট হব এবং আমি হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হব না। (সূরা আনআম, আয়াত: ৫৬)
فَٱحۡكُم بَيۡنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُۖ وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلۡحَقِّ
সুতরাং, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। (সূরা মায়দো, আয়াত: ৪৮)
فَلِذَٰلِكَ فَٱدۡعُۖ وَٱسۡتَقِمۡ كَمَآ أُمِرۡتَۖ وَلَا تَتَّبِعۡ أَهۡوَآءَهُمۡۖ
এ কারণে তুমি আহবান কর এবং দৃঢ় থাক যেমন তুমি আদিষ্ট হয়েছ। আর তুমি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না। (সূরা শুরা, আয়াত: ১৫)
وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَلَا تُطِعۡ مَنۡ أَغۡفَلۡنَا قَلۡبَهُۥ عَن ذِكۡرِنَا وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ وَكَانَ أَمۡرُهُۥ فُرُطٗا
আর তুমি নিজকে ধৈর্যশীল রাখ তাদের সাথে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে, তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশে এবং দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে। তোমার দু’চোখ যেন তাদের থেকে ঘুরে না যায়। আর ওই ব্যক্তির আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার যিকির থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে। (সূরা কাহাফ, আয়াত: ২৮)
রাসুল সা. তাঁর হাদীস শরীফে ہوا এর অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ قَالَ لِإِنْسَانٍ إِنَّكَ فِي زَمَانٍ كَثِيرٌ فُقَهَاؤُهُ قَلِيلٌ قُرَّاؤُهُ تُحْفَظُ فِيهِ حُدُودُ الْقُرْآنِ وَتُضَيَّعُ حُرُوفُهُ قَلِيلٌ مَنْ يَسْأَلُ كَثِيرٌ مَنْ يُعْطِي يُطِيلُونَ فِيهِ الصَّلَاةَ وَيَقْصُرُونَ الْخُطْبَةَ يُبَدُّونَ أَعْمَالَهُمْ قَبْلَ أَهْوَائِهِمْ وَسَيَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ قَلِيلٌ فُقَهَاؤُهُ كَثِيرٌ قُرَّاؤُهُ يُحْفَظُ فِيهِ حُرُوفُ الْقُرْآنِ وَتُضَيَّعُ حُدُودُهُ كَثِيرٌ مَنْ يَسْأَلُ قَلِيلٌ مَنْ يُعْطِي يُطِيلُونَ فِيهِ الْخُطْبَةَ وَيَقْصُرُونَ الصَّلَاةَ يُبَدُّونَ فِيهِ أَهْوَاءَهُمْ قَبْلَ أَعْمَالِهِمْ.
ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) থেকে বর্ণিতঃ:
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলেছেন, তুমি এমন এক যুগে বাস করছ, যে যুগে ধর্মীয় বিষয়ে বিজ্ঞ অনেক আলিম রয়েছেন, কারী আছেন কম (অর্থাৎ আমল ও জ্ঞান ছাড়া কেবল কুরআন পাঠকারীদের সংখ্যা অতি অল্প)। এই যুগে কুরআনের আদেশ নিষেধ প্রভৃতি হিফাযত করা হয়, শব্দের দিকে মনোযোগ দেয়া হয় কম, ভিক্ষুকের সংখ্যা কম, দাতার সংখ্যা বেশি, নামায আদায় করেন দীর্ঘ আর খুতবা পাঠ করেন ছোট। সে যুগে প্রবৃত্তি বা খাহেশাতের তাঁবেদারীর পূর্বে তাঁরা আমল শুরু করে দেন। অদূর ভবিষ্যতে মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে, সে যুগে বিজ্ঞ উলামা হবেন অল্প। কারিগণ হবেন অনেক, কুরআনের শব্দসমূহের হিফাযত করা হবে, অপরদিকে আহকামে কুরআনকে বরবাদ করা হবে (আমলের প্রতি নযর দেবে কম)। ভিক্ষুক হবে অনেক, দাতার সংখ্যা হবে অল্প। খুতবা লম্বা প্রদান করবে আর নামায আদায় করবে মুখতাসার, আমলের নয়, খাহেশাত বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করা হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ৪০৫
عن أبي يعلى شداد بن أوس رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: “ الكيس من دان نفسه، وعمل لما بعد الموت ، والعاجز من أتبع نفسه هواها، وتمنى على الله الأماني” (رواه الترمذي وقال حديث حسن).
শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তি জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন, যে তার নিজের আত্মপর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য (নেক) আমল করে। আর ঐ লোক দুর্বল যে স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, আবার আল্লাহর কাছে অবাস্তব আশা পোষণ করে। (রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৬৭)
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبُو رَوَاحَةَ يَزِيدُ بْنُ أَيْهَمَ، عَنِ الْهَيْثَمِ بْنِ مَالِكٍ الطَّائِيِّ قَالَ: سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ يَقُولُ عَلَى الْمِنْبَرِ، قَالَ: إِنَّ لِلشَّيْطَانِ مَصَالِيًا وَفُخُوخًا، وَإِنَّ مَصَالِيَ الشَّيْطَانِ وَفُخُوخَهُ: الْبَطَرُ بِأَنْعُمِ اللَّهِ، وَالْفَخْرُ بِعَطَاءِ اللَّهِ، وَالْكِبْرِيَاءُ عَلَى عِبَادِ اللَّهِ، وَاتِّبَاعُ الْهَوَى فِي غَيْرِ ذَاتِ اللَّهِ
হায়সাম ইবনে মালেক আত-তাই (র) থেকে বর্ণিতঃ:
আমি নোমান ইবনে বশীর (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছি, শয়তানের অনেক রকম জাল ও ফাঁদ আছে। শয়তানের জাল ও ফাঁদ হচ্ছে আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে অহংকার করা, আল্লাহর দান সম্পর্কে গর্ব করা, আল্লাহর বান্দাগণের উপর অহংকার করা এবং আল্লাহর সত্তা ব্যতীত নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করা (বায়হাকীর শুআবুল ঈমান, জামে সগীর, ইবনে আসাকির)।
হাদিসের মান: হাসান মাওকুফ
عَنْ أَبِيْ بَرْزَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّمَا أَخْشَى عَلَيْكُمْ شَهَوَاتِ الْغَيِّ فِيْ بُطُوْنِكُمْ وَفُرُوْجِكُمْ وَمُضِلَّاتِ الْهَوَى.
আবু বারযাহ আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ব্যাপারে তোমাদের অবৈধ উপার্জনের প্রবৃত্তি এবং অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়ার প্রবৃত্তি সম্পর্কে ভয় করি এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সুন্নাতের ব্যাপারে ভ্রান্ত পথে চলার আশংকা করি’ (মুসনাদু বাযযার হা/৩৮৪৪; আত-তারগীব হা/৭৭)।
(صحيح) عَنْ أَبِي بَرْزَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ مِمَّا أَخْشَى عَلَيْكُمْ شَهَوَاتِ الْغَيِّ فِي بُطُونِكُمْ وَفُرُوجِكُمْ وَمُضِلَّاتِ الْهَوَى. رواه أحمد والبزار والطبراني
আবু বারযাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর যা আশংকা করছি তা হচ্ছে, পেটের ব্যাপারে এবং যৌনাঙ্গের বিষয়ে লোভে পড়ে পথভ্রষ্ট হওয়া এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করে বিভ্রান্ত হওয়া।”
(হাদীছটি বর্ণনা করেছেন আহমদ, ত্বাবরানী ও বাযযার)
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: ثَلَاثٌ مُنْجِيَاتٌ وَثَلَاثٌ مُهْلِكَاتٌ فَأَمَّا الْمُنْجِيَاتُ: فَتَقْوَى اللهِ فِي السِّرِّ وَالْعَلاَنِيَّةِ وَالْقَوْلُ بِالْحَقِّ فِي الرِّضَى وَالسُّخْطِ وَالْقَصْدُ فِي الْغِنَى وَالْفَقْرِ. وَأَمَّا الْمُهْلِكَاتُ: فَهَوًى مُتَّبَعٌ وَشُحٌّ مُطَاعٌ وَإِعْجَابُ الْمَرْءِ بِنَفْسِهِ وَهِيَ أَشَدُّهُنَّ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তিনটি কাজ মানুষকে রক্ষা করে এবং তিনটি কাজ মানুষকে ধ্বংস করে। রক্ষাকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- (১) প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা (২) সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে হক কথা বলা এবং (৩) সচ্ছলতায় ও অসচ্ছলতায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- (১) প্রবৃত্তির অনুসরণ করা (২) কৃপণতাকে মেনে নেওয়া এবং (৩) আত্ম-অহংকার করা। আর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫১২২)
হাদীসে রাসুল সা. শাহওয়াত (شہوة) থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
إِسْمَاعِيلُ قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ عَنْ أَبِي الزِّنَادِ عَنْ الأَعْرَجِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ حُجِبَتْ النَّارُ بِالشَّهَوَاتِ وَحُجِبَتْ الْجَنَّةُ بِالْمَكَارِهِ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত-
রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেন, জাহান্নাম কামনা বাসনা দ্বারা বেষ্টিত। আর জান্নাত বেষ্টিত দুঃখ-মুসিবত দ্বারা।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৪৮৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি প্রবৃত্তির অনুসরণ করে প্রবৃত্তি তাঁকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে দেয়, ফলে সে ভালো-মন্দ বুঝতে পারেনা।
পরিশেষে বলব, প্রবৃত্তির অনুসরণ করে জাহান্নামের পথ থেকে বেছে থাকা সকলের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমরা ব্যক্তিজীবনে প্রবৃত্তির অনুসরণ করছি, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবনেও প্রবৃত্তির অনুসরণ করছি। আজকে সমাজ ও রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রনায়কদের খামখেয়ালীপনা, অর্থনৈতিক বিশৃংখলা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অস্থিরতা, এ সবকিছুর মূল কারণ হলো প্রবৃত্তির অনুসরণ। মন যা চায় তাই করা। আমরা কখনো ভাবছি না, আমাদের এ চাওয়া, খামখেয়ালীপনা এবং নফসে খাহেশাত এর অনুসরণ ইসলাম বিরুদ্ধ, কোরআন হাদীসের বিপরীত, ইসলামের সাথে সাংর্ঘষিক। অতএব, আমরা যদি আমাদের প্রবৃত্তিকে কন্ট্রোল করে কোরআন হাদিস অনুযায়ী ইসলামের সঠিক ধারায় প্রবাহিত করতে পারি এবং ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালিত করতে পারি, তাহলেই আমাদের জীবন ও আখেরাত সফল ও সার্থক হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক ভাবে চলার তৌফিক দান করুন।
তথ্যসুত্র-
১। কোরআনুল কারীম
২। তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন, মুফতী শফী রহ.
৩। তাফসীরে ইবনে কাছীর, হাফেজ ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর
৪। সহীহ বুখারী, আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে ঈসমাইল বুখারী রহ.
৫। সহীহ মুসলিম, আল্লামা মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল কুশাইরী রহ.
৬। সুনানে আবু দাউদ, আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে আল-আশআস আল-আজদি আল-সিজিস্তানি রহ.
৭। জামে আত্ তিরমিযী, আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত তিরমিজি (র.)
৮। লিসানুল আরব, আল্লামা জামালুদ্দীন আবুল ফজল ইবনে মানযুর
৯। আল মু’জামুল ওয়াফী, ড. মুহাম্মাদ ফজলুর রহমান
১০। আল মু’জামুল ওয়াসীত, মাজমায়ু লুগাতিল আরাবিয়্যা কায়রো, মিশর
১১। আল মুনজিদ, আল্ লুগাতুল আরাবিয়্যা, আরবী-আরবী
১২। আল মাউসূয়াতুল ফিকহিয়্যা,কুয়েত
১৩। উইকিপিডিয়া
লেখক
মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক
দাওরায়ে হাদিস ও ইসলামী আইন ও গবেষণা ( ইফতা)
জামিয়া কারিমিয়া সাঈদনগর,ভাটারা, ঢাকা।