সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ বছর করার দাবিতে আবারও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ৩৫ প্রত্যাশীরা। শনিবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ অভিমুখে যাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
চাকরির বয়স ৩৫ বছর করার পক্ষে উত্থাপিত যুক্তিগুলো হলো:
১. প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার ন্যূনতম বয়স ৬ বছর করা হয়েছে৷ ফলে আগে যেখানে একজন ছাত্র ৪-৫ বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৪-১৫ বছর বয়সে এসএসসি পাস করতে পারত, এখন সেটা ১৬ বছরের আগে কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।
২. স্নাতক ও সম্মান—উভয় ক্ষেত্রে লেখাপড়ার সময় এক বছর করে বাড়িয়ে যথাক্রমে ৩ ও ৪ বছর করা হয়েছে।
৩. ডাক্তারদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করা হয়েছিল এই বলে যে তাঁদের সাধারণের চেয়ে ১ বছর বেশি অর্থাৎ ৪ বছর পড়াশোনা করতে হয়৷ পরবর্তী সময়ে সাধারণদের স্নাতক ও সম্মান—উভয় পর্যায়ে সময় ১ বছর বাড়ানো হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আনুপাতিক হারে বাড়ানো হয়নি।
৪. এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স বা ডিগ্রি ও মাস্টার্সের ফলাফল বের হওয়ার মধ্যে প্রায় ২ বছর সময় নষ্ট হয়।
৫. প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ২৩ বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সমীকরণটি শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। এর প্রমাণ, ২৭-২৮ বছর বয়সের আগে কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ না হওয়া।
৬. যথাসময়ে লেখাপড়া শেষ করতে না পারার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে ২ থেকে ৩ বছর সেশনজট।
৭. রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবন থেকে যে সময় নষ্ট হচ্ছে, তার ক্ষতিপূরণ করা প্রয়োজন।
৮. পাবলিক সার্ভিস কমিশনের যথাসময়ে পরীক্ষা নিতে না পারা (২৭ থেকে ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার গ্যাপ ছিল ৩ বছর)।
৯. সরকারি চাকরি থেকে অবসরের মেয়াদ ২ বছর বাড়ানো হয়েছে।
১০. নার্সদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৬ বছরে উন্নীত করা হয়েছে।
১১. সরকারি নিয়ম অনুসরণ করার ফলে বেসরকারি ব্যাংকসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও ৩০ বছরের বেশি বয়সী জনবল (অভিজ্ঞতা ছাড়া) নিয়োগ দেয় না৷ ফলে বেসরকারি ক্ষেত্রেও কর্মের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।
১২. নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া উচিত যোগ্যতার ভিত্তিতে, যোগ্যতার সঙ্গে বয়সের কোনো সম্পর্ক নেই।
১৩. ৫৭ বছরের মানুষের কর্মক্ষমতা ও গড় আয়ু বাড়লে ৩০ বছরের যুবকের কর্মক্ষমতা ও গড় আয়ু কমে না—তা প্রমাণ করতে।
১৪. উন্নত বিশ্ব তাদের জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমারেখা নির্দিষ্ট করে রাখেনি৷ পার্শ্ববর্তী দেশসহ উন্নত দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি৷ কোনো কোনো দেশে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে।
১৫. সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সঙ্গে সরকারের কোনো ধরনের আর্থিক সংশ্লেষ নেই৷ কিন্তু সিদ্ধান্তটি হবে জনমুখী৷ এতে উপকৃত হবেন লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী ও তাঁদের পরিবার এবং সর্বোপরি দেশ।
১৬. বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্ববৃহৎ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও সেশনজটমুক্ত নয়।
আন্দোলনকারীরা বলেন, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিটি দেশের জনগণের প্রাণের দাবি। ২০১২ সালে সর্ব প্রথম আমরাই বয়স বৃদ্ধির দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করি। সেই আন্দোলন এখনো চলমান রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে।
উল্লেখ্য, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে ২০১২ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তবে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়েছে ৩৫-এর সব চাওয়া-পাওয়া। তারপরও আন্দোলন থেকে সরে আসেননি আন্দোলনকারীরা। সাংগঠনিকভাবে কিছুটা গুছিয়ে উঠে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।