চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল। তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৮২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী আক্তার হোসেন মাঝি ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৬১৩ ভোট। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ২৩৩ ভোট।
শনিবার রাতে কেন্দ্রওয়ারী ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. তোফায়েল আহমেদ।
এছাড়া কাউন্সিলর পদে ১৪টি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। শুধু একটি ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
চাঁদপুর পৌর নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইভিএম এবং দলীয় প্রতীকে ভোট শুরু হয় সকাল ৯টায়। ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে ১৫টি ওয়ার্ডের ৫২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয় বিকেল ৫টা পর্যন্ত। নির্বাচনে আইশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের সামনে র্যাব, বিজেবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও বেশ কিছু কেন্দ্রে খোদ সাংবাদিকদেরও প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। বিভিন্ন কেন্দ্রে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।
চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে মোট ভোটার ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৭ জন। নির্বাচনে ৩ জন মেয়র, ৫০ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
তবে ব্যাপক অনিয়ম, হামলা, মারধর এবং জোরপূর্বক কেন্দ্র দখলের অভিযোগে দুই মেয়র প্রার্থী চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচন বর্জন করেছেন। শনিবার (১০অক্টোবর) সকাল ১১ টায় বিএনপির মনোনিত ধানের শীষের প্রার্থী আক্তার হোসেন মাঝি ও দুপুর আড়াইটায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখার প্রার্থী মামুনুর রশিদ বেলাল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
চাঁদপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের গনি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম ইয়াছিন (১৮)। দুপুর সোয়া ১২ টায় প্রতিপক্ষরা ইয়াসিনের শরীরের বিভিন্ন অংশে ও গলায় কুপিয়ে জখম করে। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে চাঁদপুর ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ঢাকা রেফার করা হয়। ঢাকা নেয়ার পথে পথিমধ্যে শহরতলীর বাবুরহাট এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সে সে মারা যায়।
এসময় প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে আরো প্রায় ১২জন আহত হয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখার প্রার্থী মামুনুর রশিদ বেলাল প্রহসনের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, সকালে কিছু সময় শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও ১০টার পর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর লোকজন আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে করে কয়েকজন নিরীহ কর্মী আহত হয়।
এছাড়া ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটারদের টিপসই নিয়ে সরকার দলীয় লোকজন গোপন কক্ষে দাঁড়িয়ে থেকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেন। আমরা এই প্রহসনের নির্বাচন বয়কট করলাম। এই সরকারের আমলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কখনোই আশা করা যায় না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ধানের শীষের প্রার্থী, চাঁদপুর শহর বিএনপির সভাপতি আকতার হোসেন মাঝি জানান,সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। সরকার দলীয় কর্মীরা ভোট কেন্দ্র দখলে নিয়ে জোরপূর্বক গোপন কক্ষের ইভিএমের বাটন চেপে নৌকা প্রতীকে ভোট দেন। এছাড়া বেশ কয়টি ভোট কেন্দ্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। গুরুতর কয়েকজনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ ।
এমতাবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মী এবং পৌরবাসীর জানমাল রক্ষায় আমি নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।