সৈয়ব আহমেদ সিয়াম, চবি প্রতিনিধি হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার সম্পূর্ণ দুইটি আলাদা বিষয়। কেন আলাদা? এই নিয়ে আলোচনা হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর ২০২৩) বেলা ১০ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বুদ্ধিজীবী চত্বরে চবিয়ান পাঠচক্রের উদ্যোগে
“ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ কী ভয়াবহ?” শিরোনামে পাঠচক্র ও আলোচনা সভা আয়োজিত হয়। চবিয়ান পাঠচক্রের আহ্বায়ক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়ব আহমেদ সিয়ামের সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের
সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, “বিয়ে নারীদের নিরাপত্তা দেয়। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের ফলে নারীদের নিরাপত্তাই বিঘ্নিত হয়। কোনো মেয়েকে গর্ভবতী হলে এর কষ্টটা পুরুষকে পোহাতে হয় না। অপরদিকে বিবাহিক চুক্তির ফলে পুরুষকে নারীর
প্রতি কর্তব্য নিশ্চিত করতে হয়। এলজিবিটি মতবাদ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে নর্মালাইজ করে। যা আমাদের মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। সেক্স (লিঙ্গ) ও জেন্ডার দুইটি আলাদা বিষয়। সেক্স একটা বায়োলজিক্যাল ফর্ম। অপরদিকে জেন্ডার একটা সোশ্যাল কনস্ট্রাকশান।
ট্রান্সজেন্ডার মূলত মানসিক সমস্যা যা ‘জেন্ডার ডায়াসফোরিয়া’ নামে পরিচিত। আমেরিকার জেন জেড (যাদের জন্ম ১৯৯৭-২০০২) তাদের ৪০% ট্রান্সজেন্ডার মতবাদে বিশ্বাসী। যা পরিবার ব্যবস্থাকে ভেঙে দেয়। নারীর বিশেষায়িত অধিকারকে বিঘ্নিত করে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে
জেন্ডার পরিবর্তন করার পরে অনেকে পূর্বের পরিচয় নিয়ে আফসোস করে। রিট্রানজিশন করতে না পেরে কষ্টে ভোগে। এসব নিয়ে আমাদের মাঝে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত।” পাঠচক্রের আহ্বায়ক সৈয়ব আহমেদ সিয়াম বলেন, “হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার এক নয়,
সম্পূর্ণ আলাদা দুইটি বিষয়। শব্দের ধোঁকায় হিজড়াদের ব্যানার করে দেশে বিকৃত ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটির বৈধতা আদায়ের চেষ্টা চলছে। হিজড়া একটি শারীরিক বিষয়। অন্যদিকে ট্রান্সজেন্ডার হলো সম্পূর্ণ মনের বিষয়। শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ একজন নারী নিজেকে পুরুষ দাবী করলে তাকে পুরুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ একজন পুরুষ নিজেকে নারী দাবী করলে তাকে নারী হিসেবে
স্বীকৃতি দিতে হবে। যদিও সে তিন বাচ্চার বাবা হয়ে থাকে। এমনই অদ্ভূত, বিকৃত এই মতবাদ। যা নর্মালাইজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে আমাদের সমাজে। দেশে ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামিতার বৈধতা প্রদানের চেষ্টা চলছে। সাথে সেকশন ৩৭৭ ধারাটি বাতিল করে সমকামিতা ও বিকৃত যৌনাচার বৈধ করার প্রচেষ্টা হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এর সাথে দ্বি-মত পোষণ করি। আমি মনে করি দেশীয় মূল্যবোধের সাথে
সাংঘর্ষিক এই মতবাদকে বৈধতা দেওয়া উচিত হবে না।” পাঠচক্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফাইন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইসতিয়াক হোসেন মজুমদার বলেন, “বর্তমানে পাশ্চাত্যে নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার দাবি করা অধিকাংশ লোক অস্ত্রোপচার বা হরমোন সার্জারি করে না। মুখে বলা, নাম বদলানো, পোশাকে অল্পস্বল্প পরিবর্তন আনাই দাবি করার জন্য যথেষ্ট। একজন সুস্থ পুরুষ যদি নিজেকে
ট্রান্সজেন্ডার দাবী করে। কী হতে পারে এই মতবাদের ক্ষতিকর দিকগুলো? • প্রথমত, এটি দেশীয় আইন ও মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক সমকামিতাকে প্রমোট করে। • দ্বিতীয়ত, উত্তরাধিকার বন্টন সংক্রান্ত আইনে যেখানে বাংলাদেশে সম্পত্তি বন্টন বিরোধ সংক্রান্ত হাজারো মামলা আদালতের বারান্দায় পড়ে আছে, সেখানে যদি কোনো রূপান্তরকামী পুরুষ (আসলে নারী) যদি নিজের পিতার সম্পত্তির পুরুষের
সমান ভাগ দাবি করে তা আইনি জটিলতা এবং সামাজিক সহিংসতার দিকে নিয়ে যাবে। • তৃতীয়ত, বাংলাদেশে নারীদের প্রণোদিত এবং সমাজের মূলস্রোতে পুরুষদের সাথে এগিয়ে নিতে কোটাসহ বিশেষায়িত যত সুবিধা আছে তাতে রূপান্তরকামী নারীদের অংশগ্রহণ করা তাতে প্রতিযোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। • চতুর্থত, বাংলাদেশ ধর্ষণ এবং শ্লীলতাহানি মহামারি আকার ধারণ করেছে। যদি রূপান্তরকামীতা
স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাহলে রূপান্তরকামী নারীরা নারীদের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শৌচাগার সহ সকল জায়গায় অবাধ প্রবেশাধিকারে সুযোগ পাবে। তাতে নারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। • পঞ্চমত, রূপান্তরকামী নারী/পুরুষরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝঁকিতে পড়বে।
European Journal of Endocrinology নামক বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্যানুসারে হরমোন চিকিৎসা নেওয়া ট্রান্সজেন্ডার নারীদের ৯৫% এর হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি।” ট্রান্সজেন্ডার মতবাদের সমস্যা, সম্ভাবনা, পক্ষে ও বিপক্ষে আলোচনা ও প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে দুই ঘন্টার পাঠচক্রটি সমাপ্ত হয়।