প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিডিআর হত্যাকান্ড ও হেফাজতে ইসলামের পদক্ষেপসহ বেশ কয়েকটি ষড়যন্ত্রের উল্লেখ করে জনসমর্থনের প্রতি আওয়ামী লীগের আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কেউ চাইলেই আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে পারবে না। যখন আমরা ২০০৮ এর পর থেকে সরকারে এসেছি অনেক ভাবে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টা করা হয়েছে, বিডি্আরের ঘটনা ঘটানো হলো, হেফাজতের ঘটনা ঘটানো, নানা ধরনের ঘটনা, বহু রকমের কারসাজির চেষ্টা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে খুন করে ফেলা যায়, হত্যা করে ফেলা যায়, কিন্তু জনসমর্থন না থাকলে ক্ষমতায় গিয়ে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না, মানুষের কল্যাণও করতে পারে না, এ হচ্ছে বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ টিকে আছে কারণ এর তৃণমূলের নেতা-কর্মী অর্থাৎ এর শিকড়ের শক্তি অনেক গভীরে। কাজেই, সেটা যদি কারো চক্ষুশূল হয় বা সে কারণে কারো মনে ব্যথা হয় তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা জনগণের সমর্থনটা পাই কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণের স্বার্থে, জনকল্যাণে এবং জনগণের মঙ্গলে কাজ করে। আর এটা জনগণ খুব ভালভাবে উপলদ্ধি করে এবং এর শুভফলটা জনগণই পায়।’
আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের ওপর নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের ইতিহাস স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে, কত পরিবার লাশ খুঁজে পায়নি। তারা কেবল হত্যাই করেনি একটি জাতির একটি প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ টিকে আছে শুধু জনগণের জন্য কাজ করার মধ্যে দিয়ে। কারও দয়া ভিক্ষে করে না, কারও করুণা ভিক্ষে করে না।’
জাতির পিতা, জাতীয় চার নেতাসহ বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এত হত্যাকান্ড চালিয়েও তৃণমূলে যার শিকড় একেবারে গ্রথিত সেই সংগঠনের ক্ষতি তারা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ টিকে আছে কারণ এর তৃণমূলের নেতা-কর্মী, অর্থাৎ এর শিকড়ের শক্তি অনেক বেশি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা অপপ্রচার চালাবার বা সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করে, মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে তাদেরকে আমি এটাই বলবো তারা কি ৩ নভেম্বরের ঘটনা কোনদিন ভেবে দেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেধাবীদের এক হাতে জিয়াউর রহমান পুরস্কার আর অন্য হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। অস্ত্র, জঙ্গিবাদ, মাদক দিয়ে প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তারা ধ্বংস করেছে। তারা তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ এবং কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, এই নির্বাচন কারা শুরু করেছিল।’ ভোট নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘জিয়ার নির্বাচন দেখুক আর এরশাদের নির্বাচন দেখুক।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা শুধু এই দিবসটা পালন নয়, সেই সাথে সাথে আমাদের এই কথা মনে রাখতে হবে, যে সন্ত্রাসী চক্র, খুনী চক্র, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র তারা কিন্তু বসে নাই। তাদের চক্রান্ত চলতেই থাকবে যত ভাল কাজই আমরা করি না কেন তাদের মুখ থেকে ভাল কথা বের হয় না।’
খালেদা জিয়া সরকারের সময়ে ভোটার লিস্টে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্তির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৬ সালের নির্বাচনের জন্য ১ কোটি ২৩ লাভ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার লিস্ট বানানো হলো। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি বাংলাদেশকে ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করলো। বাংলাভাই, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হলো, এভাবেই একটা দেশকে তারা আবারো ধ্বংসের দিকে নিল। এরআগে ’৯১ সালে এই খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের হাত ধরে ক্ষমতায় এসেছিল এরপর ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন, রাজনৈতিক দলবিহীন নির্বাচন করলো।
তিনি বলেন, সে সময় আওয়ামী লীগের রাজপথের আন্দোলনে সে বছরের ৩০ মার্চ জনগণের অভ্যুত্থানে খালেদা জিয়া মাত্র দেড় মাসের মধ্যে পদত্যাগে বাধ্য হয় এবং ক্ষমতা থেকে চলে যায় ভোট চুরির অপরাধে। কাজেই, বিএনপি’র যে নেতারা কথা বলে তাদেরকে আপনারা এই কথাটা স্মরণ করিয়ে দেবেন। কারণ, মানুষ সে কথা ভুলে যায়নি।





