করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী চলছে কঠোর বিধিনিষেধের নামে লকডাউন। এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে মানা সকলের। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে মামলা-জরিমানাও করা হচ্ছে।
তবে এমন সময়ে চলছে সিলেট-৩ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ, জনসভা। এমনকি লকডাউনের নির্দেশনা ভেঙে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে ঢাকা থেকে এসেছেন দলটির কেন্দ্রীয় দুই নেতা। বিশাল জনসভায় বক্তৃতা করেছেন তারা। এতে সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও অংশ নেন। ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণে এই জনসভায় স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিলো না।
আজ রোববার বিকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের পক্ষে নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিয়েছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। লকডাউনের মধ্যেই রোববার দুপুরে ঢাকা থেকে সিলেট আসেন তারা। এরপর বিকেলে সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনী এলাকা বালাগঞ্জে জনসভায় অংশ নেন এই দুই নেতা। এই জনসভায় সিলেট আওয়ামী লীগের প্রায় সকল শীর্ষ নেতাই উপস্থিত ছিলেন। তবে লকডাউনের সময়ে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে তাদের সিলেটে আসা ও জনসভায় অংশ নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। সরকারের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করার গুঞ্জনও ওঠছে লোকমুখে।
রোববার বালাগঞ্জের ওই নির্বাচনী জনসভায় নানক-আহমদ হোসেন ছাড়াও অংশ নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।
এছাড়াও জনসভায় অংশ নেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাউর রহমান, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম, কুলাউড়ার পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ শিপার উদ্দিন প্রমুখ।
জনসভার মঞ্চে আওয়ামী লীগ নেতাদের গাদাগাদি করে বসতে দেখা গেছে, এবং অধিকাংশ নেতার মুখে মাস্কও ছিল না। এছাড়াও উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়নি।
ওই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুর।
উল্লেখ্য, এ বছরের ১১ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কায়েস। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন শুরুতে এই আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেনকে, যিনি রোববার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ইসরাইল হোসেনের মৃত্যুর কারণও ওই করোনাভাইরাস। এরআগে এ মাসের শুরুতে উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ তিন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বদল করে নির্বাচন কমিশন, তাদের সকলেই করোনায় আক্রান্ত বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যদিও ইসির প্রজ্ঞাপনে বিষয়টির উল্লেখ ছিল না।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে লড়ছেন হাবিবুর রহমান হাবিব। জাতীয় পার্টির হয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। বিএনপি থেকে এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা বলা হলেও মোটরগাড়ি প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (বর্তমানে বহিস্কৃত) এবং দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী।
আগামী ২৮ জুলাই ইভিএম পদ্ধতিতে এই আসনে ভোট গ্রহণ হবে। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার। ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি