ঋণনির্ভর বাজেটের মাধ্যমে দেশবাসীকে সুদের সাথে সম্পৃক্ত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। গতকাল রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাজেটের মূল অর্থ যোগানদাতা এনবিআর। গত অর্থ বছরে তাদের ওপরে দায়িত্ব ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা। এতে ব্যর্থ হওয়ায় তা সংশোধন করে ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু এনবিআর ১০ মাসে সংগ্রহ করে মাত্র ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও যা ১ লাখ ৩ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা কম।
তিনি আরও বলেন, বাজেটের আয়ের উৎসের এই দুর্বলতা নিয়ে আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার বৃদ্ধি করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি এবং এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে আগের মত ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
বিবৃতিতে চরমোনাইয়ের পীর বলেন, বিশাল অংকের বাজেট দিয়ে অর্থমন্ত্রী গৌরববোধ করলেও সাধারণ জনগণ এর কতভাগ সুফল পাবে তা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বাজেটে আয়ের উৎস না বাড়িয়ে এবং আয় প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বৃদ্ধি না করে বাজেটের আকার বৃদ্ধি করা দেশকে ঋণ ও সুদের চক্রে ফেলে দেবে।
আমাদের দাবি হল, এনবিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং জিডিপি কর রেশিও আদর্শ মেনে নিতে হবে।
১. অনুন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি আটকাতে হবে- বাংলাদেশে বছর ঘুরলেই অনুন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও বিদেশি ঋণের সুদ দিতেই বাজেটের বড় অংশ চলে যায়। এরপরেও আগামী অর্থবছরে ঋণ নেয়া হবে দুই লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে উচ্চ সুদের ঋণ নেওয়া হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। এভাবে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা ও ঋণের সুদ মেটানোর এক ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিপাকে পড়ে যাচ্ছে দেশ।
২. ব্যবসায়ীদের কর ছাড়- শুল্ক হারে ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো ফল বয়ে আনে সত্য, কিন্তু তার প্রধান শর্ত হলো ব্যবসায়ীরা সততার সাথে ব্যবসা করা। বাংলাদেশে আমরা তা দেখি না বরং ব্যবসার ছলে অর্থ পাচার ও দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অভিশাপ হয়ে আছে। সে জন্য আগামী অর্থবছরে ব্যবসায়ীদের কর ছাড়ের সাথে তাদের সততা নিশ্চিত করতে নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।
বেঁদে, আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে চাকরি দেওয়ার শর্তে ৫% কর ছাড়ের ঘোষণা ইতিবাচক। কিন্তু এর সাথে রূপান্তরিত নারী পুরুষ এর চাকরির শর্ত যোগ করাকে আমরা ভাল নজরে দেখতে পারছি না। প্রকৃতির বিকৃত সাধনকারী রূপান্তরিত নারী পুরুষদের আলাদা করে সুবিধা দেওয়া বাংলাদেশের নীতি-নৈতিকতার সাথে সাংঘর্ষিক। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কর অবকাশের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক কিন্তু নতুন উদ্যোগক্তারা যে কোনো ঝামেলা মুক্তভাবে ঋণ পেতে পারে সেটি নিশ্চিত করা ও গুরুত্ব।
৩. কালো টাকা- কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সংকুচিত করায় সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে এটা পুরোপুরি বন্ধ করা দরকার ছিল।
৪. এডিপি- আগামী পৃথিবীতে এমন সব প্রকল্প ঢোকানো হয়েছে যা বিলাসী ও অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে বা কর্মসংস্থানের সহায়তা করবে না। এটা হতাশাজনক। এই দুঃসময়ে ৩৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ, বাংলো ও সার্কিট হাউজ, পাঁচ তারকা হোটেল, পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ, ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন নির্মাণের মতো প্রকল্প করা হয়েছে। এটা হতাশাজনক। একদিকে বাজেটের টাকা জোগাড় করতে সুদের ওপরে ঋণ নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে ভবন, পার্ক ও হোটেল নির্মাণ করতে এডিপিতে প্রকল্প ঢোকানো হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি এবং এসব প্রকল্প এডিপি থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।