ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা আমীর, ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক নেতা মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই রহ. এর ১৪তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৬ সালের ২৫ নভেম্বর চমোনাইতে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. ১৯৩৫ সালে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাইতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা সৈয়দ এছহাক রহ. ছিলেন চরমোনাই দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা পীর। তাঁর ৫ পুত্রের মধ্যে মেঝ পুত্র সৈয়দ ফজলুল করীম পিতার কাছ থেকে তরীকার খেলাফত লাভ করেন।
সৈয়দ ফজলুল করীম স্বীয় পিতা হযরত মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ এছহাক রহ. এর কাছ থেকেই ইলমে শরিয়তের প্রাথমিক শিক্ষা ও ইলমে মারিফাতের শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। সৈয়দ ফজলুল করীম চরমোনাই আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ডিগ্রি নেয়ার পর ১৯৫৭ সালে ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করেন। এরপর চরমোনাই মাদরাসায় অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে পিতা সৈয়দ এছহাক রহ. এর ইন্তেকালের পর তিনি আমিরুল মুজাহিদীনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
সৈয়দ ফজলুল করীম ছাত্র জীবনে নাছিরে মিল্লাত নামে একটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রদেরকে সংগঠিত করে জনকল্যানমূলক কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত করেন। এ ছাড়া দ্বীনের দাওয়াতের পাশাপাশি ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্র জীবনেই পিতার সাথে নেজামে ইসলামী পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এছাড়াও তিমি হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৭ সালে দেশ বরণ্য ওলামা-মাশায়েখদের নিয়ে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ সংগঠনের আমীরের দায়িত্ব পালন করেন।
ইসলামী দলসমূহের ঐক্যের ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই আন্তরিক। তিনি আরাফাতের ময়দানে এক ভাষনে বর্তমান সাম্রাজ্যবাদের রাবারষ্টাম্প জাতিসংঘের পরিবর্তে মুসলিম দেশগুলোকে মিলে ইসলামী জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার জন্য আহবান জানান। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ আমলে তিনি ফতোয়া বিরোধী রায় বাতিলের দাবিতে কাফনের কাপড় মাথায় নিয়ে সারাদেশে গণ আন্দোলন গড়ে তোলেন। পীর সাহেব চরমোনাই রহ. তাঁর সমস্ত জীবন ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য নিবেদিত করে গেছেন।
প্রায় ৩০ বছর যাবৎ সারা বছর ব্যাপী দেশের গ্রাম-গঞ্জে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ইসলাম প্রচারের পাশাপাশি তিনি দেশের গন্ডি পেড়িয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপসহ এশিয়ার সকল রাষ্ট্র সফর করেছেন। মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর অগনিত ভক্ত মুরিদ রয়েছে।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (বর্তমানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) দেশের অন্যতম একটি রাজনৈতিক দল।