স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মদিন আজ। ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জে টুঙ্গীপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে জাতির পিতার হত্যাকারীদের নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে তিনিও শাহাদাৎ বরণ করেন।
শহীদ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মাত্র ৩ বছর বয়সে পিতা ও ৫ বছর বয়সে মাতাকে হারান। তার ডাক নাম ছিল ‘রেনু’। পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। দাদা শেখ কাসেম চাচাতো ভাই শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিবাহ দেন।
গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে তিনি প্রাথমিক লেখাপড়া করেন। অতঃপর গ্রামে গৃহশিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করেন। ফরিদপুরের টুঙ্গীপাড়ার অজপাড়াগাঁয়ের সন্তান শেখ মুজিব দীর্ঘ আপোষহীন লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে শুধুমাত্র বাঙালি জাতির গর্বই নন, বিশ্ব বরেণ্য রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছিলেন, তার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁরই সহধর্মিনী, মহিয়সী নারী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
বঙ্গবন্ধুর সমগ্র রাজনৈতিক জীবন ছায়ার মতো অনুসরণ করে তার প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে প্রেরণার উৎস হয়েছিলেন বেগম মুজিব। বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন বারে বারে পাকিস্তানি শাসকদের হাতে বন্দি জীবন-যাপন করছিলেন, তখন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তার কাছে ছুটে আসতেন, তিনি তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন এবং লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতেন। বিশেষ করে আগরতলা যড়যন্ত্র মামলায় যখন বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কিছু কুচক্রী স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিলেন, তখন প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে বেগম মুজিবের দৃঢ়চেতা অবস্থান বাংলার মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
বঙ্গমাতার জন্মদিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আজ সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। একই স্থানে কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ, অঙ্গ-সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতীম ও সমমনা সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বঙ্গমাতার জন্মদিন উপলক্ষে আজ বেলা ১২টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বঙ্গমাতা স্মরণে যুব মহিলা লীগ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, অঙ্গ-সহযোগীসহ সংগঠনের সব স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি ‘বঙ্গমাতা: ত্যাগ ও সুন্দরের সাহসী প্রতীক’ প্রতিপাদ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মবার্ষিকী জাতীয়ভাবে উদযাপন করবে। রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সীমিত পরিসরের আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। প্রধান অতিথি হিসেবে এতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। একইভাবে সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থা দিবসটি উদযাপনে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাঁর গৌরবময় কর্মজীবনের উপর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ, পরিবেশনা ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করোনায় দেশের সব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ও দুস্থ নারীদের আর্থিক সাহায্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সেলাই মেশিন ও মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে। ৬৪ জেলায় তিন হাজার দুইশ’ সেলাই মেশিন ও তেরশ জন দুস্থ ও অসহায় নারীর মধ্যে দুই হাজার করে মোট ছাব্বিশ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। একই সাথে গোপালগঞ্জ জেলার দরিদ্র-মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একশ’ ল্যাপটপ বিতরণ করা হবে। এছাড়াও মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার জন্মদিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।