প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলগামী করা, ঝরে পড়া রোধ ও অপুষ্টি দূর করতে চলমান ‘দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পের’ মেয়াদ চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে। কিন্তু শিগগিরই নতুন প্রকল্প চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এই কারণে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এ পরিস্থিতেতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে করোনায় দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের এনরোলমেন্ট ঠিক রাখা যাবে না। আর শিক্ষার্থীও ঝরে পড়বে, অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’
গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক কে এম এনামুল হক বলেন, ‘চলমান প্রকল্পে বরাদ্দ বাজেট সব খরচ হয়নি। ফলে সাময়িকভাবে এটি চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন প্রকল্প চালু না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালু রাখা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি বন্ধ হলে দুটো সমস্যা হবে— করোনাকালে মানুষের খাদ্যাভাব রয়েছে, এতে শিক্ষার্থীদের ওপর সেই চাপ পড়বে। এছাড়া দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের পুষ্টিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
কে এম এনামুল হক আরও বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে— করোনার কারণে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে কর্মসূচিটি বন্ধ রাখা ঠিক হবে না।’
২০১১ সালে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতাভুক্ত এলাকায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার আট শতাংশ বেড়েছে, ঝরে পড়া কমেছে। ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বেড়ে যাওয়ায় জেন্ডার রেশিও এক দশমিক শূন্য এক থেকে বেড়ে এক দশমিক শূন্য ছয় হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পুষ্টিমান সম্পন্ন বিস্কুট খাওয়ায় তাদের প্রোটিন ঘাটতি কমেছে। অতিদরিদ্র পরিবারের দৈনিক খাদ্য ব্যয় চার দশমিক চার শতাংশ কমে গেছে, যা তাদের বার্ষিক আয় চার শতাংশ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।’
এসব বিবেচনায় গত ১০ জুন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ‘দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পের’ মেয়াদ বাড়াতে চিঠি দেন।