রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেছেন, ‘আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশসান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে কয়েকবার সভা হয়েছে। পরীক্ষার সময় গোয়েন্দা সংস্থার প্রচুর লোকজন ক্যাম্পাসে তৎপর থাকবে।
এ ছাড়া অসাধু চক্রের সদস্যদের তাৎক্ষণিক শাস্তি বিধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। ফলে পরীক্ষায় জালিয়াতির কোনো সুযোগ থাকছে না।’
আজ শনিবার বেলা ১১টায় ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপাচার্য।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে উপাচার্য আরও বলেন, ‘আগামী ২৫ জুলাই (সোমবার) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা, যা চলবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত। ভর্তি পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এবং আশেপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বহিনী নিয়োজিত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কর্তৃক ক্যাম্পাসে ও সংলগ্ন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পরীক্ষা চলাকালে রাবি চিকিৎসা কেন্দ্র পরিচালিত একটি মেডিকেল টিম কাজ করবে। সার্বক্ষণিকভাবে চারটি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। এ ছাড়া কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত ২ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম এবং দুটি অ্যাম্বুলেন্স চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবে।’
উপাচার্য বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালে শুধুমাত্র অভিভাবকদের অপেক্ষার জন্য শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ৯টি ওয়াটারপ্রুফ টেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি টেন্টে অভিভাবকদের বসার জন্য ২০০টি করে চেয়ার থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সাধারণভাবে ব্যবহারের জন্য ১২টি স্থানে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেঞ্জারগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ৯টি হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহযোগিতা প্রদান করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘প্রতি বছরই ভর্তি পরীক্ষা দিতে রাজশাহীতে কয়েক লাখ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আসে। আগামীতে বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে ভাবছি। তবে আমি এ বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আমরা একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা করবো।’
উল্লেখ্য, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যান চলাচলে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল ৮টার পর ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার ভারী যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। ব্যক্তিগত গাড়ি ও অন্য যানবাহন কাজলা ও বিনোদপুর গেট দিয়ে প্রবেশ করে মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কৃষি ও চারুকলা অনুষদে যাওয়ার ক্ষেত্রে মন্নুজান হল, বেগম খালেদা জিয়া হল, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন-তুঁত বাগান সংলগ্ন রাস্তাটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা সব রাস্তা ব্যবহার করতে পারবেন।
এ ছাড়া চারুকলা ও কৃষি অনুষদে যাওয়ার জন্য শহর থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের ভদ্রা গেট এবং কাটাখালীর দিক থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের ফল গবেষণা ও বিশ্ববিদ্যালয় ফায়ার সার্ভিসের পাশের রাস্তা ব্যবহারের অনুরোধ করা হচ্ছে। সকাল ৮টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনমুখী সংযোগ সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও অটোরিকশাসহ কোনো প্রকার যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। পরীক্ষা সংক্রান্ত ও চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত গাড়িসমূহ এই নির্দেশের আওতামুক্ত থাকবে।
২৫ থেকে ২৭ জুলাই শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের ব্যক্তিগত গাড়িসমূহ পার্কিং এর জন্য সাবাস বাংলাদেশ ও জুবেরী ভবনের মাঠ ব্যবহার করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবাসিক এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কাজলা গেট ব্যবহার করবেন এবং বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্যারিস রোড হয়ে মেইন গেট এবং রোকেয়া হলের পেছনের রাস্তা (ফ্লাইওভার সংলগ্ন) ব্যবহার করতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে ও প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক প্রমুখ।