মোকলেছুর রহমান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: গ্রামীণ বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক হারে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ছয় চাকার বাহন বালুভর্তি ট্রাক্টর।
এ কারণে গ্রামীণ রাস্তাগুলো একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে এসব রাস্তার অবকাঠামো। এতে করে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
বালুভর্তি ট্রাক্টরের কারণে এসব রাস্তা দিয়ে অন্যান্য যানবাহন ঠিকমতো চলাচল করতে পারছে না। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী অন্যান্য যানবাহন চালক ও এলাকার বাসিন্দারা।
এই চিত্র ব্রহ্মপুত্র নদ বিছিন্ন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার। বিশেষ করে উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের বেশির ভাগ রাস্তার এমন অবস্থা। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমবাড়ি, তেলির মোড়, কাউনিয়ার চর, চর গয়টা পাড়া, উত্তর কাউনিয়ার চর গ্রামের রাস্তাগুলোর কয়েক কিলোমিটার সড়কে এমন বেহাল দশা।
গ্রামীণ এ সড়কগুলোই উপজেলা শহরে যাওয়ার মূল সড়ক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অতিরিক্তহারে বালুবাহী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে ধুলাবালি উড়ছে।
গ্রামীণ এই সড়কগুলোতে একটি গাড়ি যাওয়ার পর পেছনে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত ধুলাবালিতে অন্ধকার থাকছে। এতে করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।
পাশাপাশি এসব রাস্তায় রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সাইকেল চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এখানকার মানুষদের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের কাউনিয়ারচর ও তেলিরমোড় এলাকার বাসিন্দা মো. মুকুল মিয়া ও আফতার হোসেন বলেন, আমরা অতি কষ্টে জীবনযাপন করছি।
প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একাধারে এই রাস্তাগুলো দিয়ে ট্রাক্টর চলাচলের কারণে শতশত জায়গায় খানাখন্দে ভরে গেছে। তারা আরও বলেন, অতিরিক্ত ট্রাক্টর চলাচলের কারণে রাস্তার মূল মাটি উঠে গেছে। এ কারণে প্রচুর পরিমাণে ধুলা উড়ছে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী বেলাল হোসেন বলেন, এসব রাস্তায় শীতে ধুলা আর বর্ষায় কাদা। সবমিলিয়ে অনেক সমস্যার মধ্যে আছে এখানকার মানুষ। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ছে বেশি ভোগান্তিতে।
ধুলাবালির কারণে শিশু ও বয়স্ক মানুষজন সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
রহিম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, কী করমু ভাই, আগে তো নিজের জীবন বাঁচাতে হবে।
ধুলার কারণে নিজেরাই থাকতে পারি না। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা স্কুলে গেলে তাদের জন্য চিন্তায় থাকতে হয়। কখন যে কোন দুর্ঘটনা ঘটে। কেননা, ধুলার কারণে তো সামনে কিছুই দেখা যায় না।
রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রেজা বলেন, কাঁচা রাস্তা দিয়ে ট্রাক্টর চললে রাস্তা খারাপ হবে এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। এসব গাড়ি চালকদের বলা হয়েছে রাস্তায় পানি দিয়ে গাড়ি চালাতে। যাতে মানুষজনের অসুবিধা না হয়।
আমার ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক ট্রাক্টর রয়েছে। এসব গাড়ি বেশি পরিমাণে চলাচল করার ফলে রাস্তাগুলোর সমস্যা হয়েছে।
অন্যন্য বাহনগুলো চলতে সমস্যা হচ্ছে।
এছাড়াও একবার এ গাড়িগুলো চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। তারপরেও তাদের থামানো যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, যাদের শ্বাসকষ্ট আছে এ রকম ধুলাবালিতে তাদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। ফুসফুসের বিভিন্ন অসুখে এর প্রভাব পড়বে।
বিশেষ করে অ্যাজমা রোগীদের অ্যাজমা বেড়ে যেতে পারে। সুস্থ মানুষও কাশিতে আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা।
রৌমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম সারোয়ার রাব্বি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব গাড়ির কারণে মানুষজনের ক্ষতি হয়ে থাকলে বিষয়টি দেখা হবে।
এস.আই/