তারেক মাহমুদ, লক্ষ্মীপুর:
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নিয়োগে অর্থ বাণিজ্য এবং পরীক্ষার আগের রাতে আকরাম নামে এক চাকুরী প্রত্যাশীকে অপহরণের পর হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, প্রধান শিক্ষক এবং অন্য চাকুরী প্রত্যাশীর বিরুদ্ধে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অপহরণের কারন দেখিয়ে নিয়োগ পরিক্ষা স্থগিত করলেও স্কুল সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক তা অস্বীকার করে বলেন কোরামপূর্ন না হওয়াতে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
পরে প্রধান শিক্ষক ফয়েজ আহম্মদ ক্যামেরায় কোন কথা না বলে সাংবাদিকের সাথে অসাধ আচরন করে কোন তথ্য না দিয়ে স্কুল থেকে সটকে পড়েন। এদিকে স্কুল থেকে চাকুরীর আবেদন ৭ করেছে জানানো হলেও বাস্তবে খোঁজ মেলে ৫ জনের। চলতি মাসের ১৬ তারিখে পুনরায় পরিক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।
অপহরণের ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের বর্তমান নৈশপ্রহরী এবং অপহরণ হওয়া চাকুরী প্রত্যাশীর বাবা জহির হোসেন।
জানা যায়,গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) নিয়োগ পরীক্ষার আগের রাতে স্কুল প্রাঙ্গন বাসার সামনে থেকে আকরামকে অপহরন করা হয়।
পরের দিন ২৯ ডিসেম্বর (বুধবার) অপহৃতকে অচেতন অবস্থায় চট্রগ্রাম রেল লাইন থেকে উদ্ধার করে স্থানীরা। পরে খবর পেয়ে আকরামকে নিয়ে এসে সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর সদর হাসতালে ভর্তি করে তার স্বজনরা।
অভিযোগ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভবানীগঞ্জ হাই স্কুলে দীর্ঘদিন যাবত ( অস্থায়ী নিয়োগ) নাইট গার্ডের চাকরির সুবাধে স্কুল এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন মোঃ জহির। জহিরের দাদাও এই স্কুলের নাইট গার্ড ছিলেন। ইতিমধ্যে নাইট গার্ড পদে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। জহিরের বয়স বেশী হওয়াতে তার ছেলে আকরামসহ ৭ জন আবেদন করে। পিতার সূত্রে আকরাম চাকরিটা পাবে এমন একটা জনশ্রুত চলছিল।
গত ২৮ ডিসেম্বর বুধবার স্কুল প্রাঙ্গনে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারন করা হয়। পরীক্ষার আগের দিন মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে প্রার্থী আকরাম বাড়ি থেকে চৌরাস্তা বাজারের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরেনি। মোবাইল ফোনও বন্ধ। বিভিন্নস্থানে খোজাখুজিঁ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরের দিন বুধবার সকাল ৮ টার দিকে ফোন করে জানানো হয়, আকরামকে অজ্ঞান অবস্থায় চট্রগ্রাম রেল লাইনের উপর থেকে উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে অচেতন অবস্থায় আকরামকে চট্রগ্রাম থেকে এনে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপহরেনের খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবু তালেব জানান, কোরামপূর্ন হলেও একজন চাকুরী প্রত্যাশী অপহরণের ঘটনায় সভাপতির অনুরোধে
পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
আকরামের মা মিলন বেগম ও বাবা জহির বলেন, আমার ছেলে যাতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারে সে জন্য তাকে পরিকল্পিত ভাবে অপহরন করা হয়।
চাকুরী প্রত্যাশীরা বলেন, আমরা আবেদন করেছি ২৮ তারিখে পরীক্ষা দিতে গিয়ে জানতে পারি আমাদের একজন পরীক্ষার্থী অপহরণ হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাদীন আছে। তাই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পরিক্ষা স্থগিত করেছেন আগামী ১৬ তারিখ পরীক্ষা হবে জানিয়েছেন তিনি।
স্কুলের সভাপতি নাছির উদ্দিন রাজু বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় কোরামপূর্ন না হওয়াতে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আকরামের অপহরনের বিষয়টি তার বাবা ওই দিন সকালেই আমাকে জানিয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবু তালেব বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে এক পদে ৩ জন পরীক্ষার্থী হলেই কোরামপূর্ন হয়। সেখানে তিনের অধিক ছিলো তাই কোরামপূর্ন হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি পরিক্ষা শুরুর আগেই জানায় যে নৈশপ্রহরী চাকুরী প্রত্যাশী একজন অপহরণ হইছে। তাই তিনি পরীক্ষা স্থগিত করার অনুরোধ করলে মানবিক বিবেচনায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, অপহরনের ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি অভিযোগের আলোকে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এন.এইচ/