মোঃ দ্বীন ইসলাম, ডেমরা প্রতিনিধি: রাজধানীর ডেমরায় বাঁশেরপুল এলাকায় ডিএনডি খালের ওপর নির্মিত শেখ রাসেল নামে বাঁশের সাঁকোয় প্রতিদিন হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। এদিকে নড়বড়ে ওই সাঁকোর দু’পাশে কোন রেলিং না থাকায় যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
এক কিলোমিটার সড়কের যাতায়াত কমাতে এ সাঁকোটি ডিএসসিসির ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশসহ ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাজার হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা। তাই এখানকার সাঁকো সংশ্লিষ্ট অধিবাসীদের প্রাণের দাবি শেখ রাসেল সাঁকোর জায়গায় দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হোক। কারণ এ সাঁকোর সঙ্গে প্রায় মুখোমুখি জায়গা মিলিয়ে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ৬ লেন সড়কের ওভারপাসের মিল রাখা হয়েছে, যার নিচ দিয়ে মানুষ চলাফেরা করবে। এদিকে সরকারিভাবে এ সেতুটি নির্মাণের কথা থাকলেও তার কোন খোঁজখবর নেই, অথচ ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ওভারপাস নির্মাণ হয়ে গেছে অনেক আগেই।
এলাকাবাসী সূত্র জানা যায়, প্রায় ৫ বছর আগে এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত শেখ রাসেল বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা। তবে এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট অভিভাবকমহল এ সাঁকোর নাম রাখেন শেখ রাসেল সাঁকো যা পরবর্তীতে পাকা সেতু হবে এ আশায়। এদিকে এ সাঁকোটি দিয়ে ডিএসসিসির ৬৪ নম্ববর ওয়ার্ডের ইষ্টার্ন হাউজিং দক্ষিণপাশ, বাঁশেরপুল হিজলতলা, খাঁন নগর ও আমিনবাগ এলাকাসহ ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের বামৈল, সালামবাগ, ইষ্টার্ন হাউজিং উত্তর পাশ, ইসলামবাগ, ডগাইর নতুনপাড়া, ব্যাংক কলেনী ও ভূঁইয়া মসজিদসহ বেশ কয়েকটি এলাকার হাজার হাজার মানুষ এ সাঁকো দিয়ে পারাপার হয় প্রতিদিন। দু:খজনক বিষয় হলো শিশু-বয়স্ক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে ডিএনডি খালের এপার-ওপারে যেতে হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, বাঁশের সাঁকোটির দুই পাশে কোন রেলিং নেই। সেটি উঁচু-নিচু অবস্থায় আছে। চলার সময়ও সাঁকোটি হেলেদোলে বলে দুর্ঘটনার আশংকা থাকেই। তাছাড়া সাঁকোর অল্প নিচেই খালের পানি, সেই সঙ্গে কচুরিপানায় ভরপুর। রেলিং নেই বলে কোন বয়স্ক মানুষ ও শিশুরা সাঁকো পারাপারের সময় অসাবধানতাবশত যে কোন সময় পা ফসকে পড়ে যেতে পারে খালে। শেখ রাসেল নামে বাঁশের এ সাকোঁ দীর্ঘ দিন ধরেই নড়বড়ে ও জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকলেও এখানে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য নেই কোন উদ্যোগ।
শেখ রাসেল সাঁকোর আহবায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলাম কমান্ডার বলেন, হাজার হাজার মানুষের পারাপারের সুবিধার্থে বাঁশেরপুল ডিএনডি খালের ওপর শহীদ শেখ রাসেল নামে আমরা বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করি। এটি পরবর্তীতে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের ওভারপাসের সঙ্গে শেখ রাসেল পাকা সেতু করার জন্য আমরা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত আবেদন করি। ইতিমধ্যে আমরা সড়ক জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীর মাধ্যমে জানতে পারি সেতু বাস্তবায়ন করা হবে অতি শ্রীঘই। এদিকে ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের মাধ্যমে আগামী বাজেটে সেতুটি উদ্ধোধন হবে বলে তিনি জানান। এই সেতুটি হলে সহজে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি হবে এই এলাকার।
এ বিষয়ে বামৈল সাদুর মাঠ এলাকার কাউসার নামে এক কলেজ ছাত্র বলেন, শেখ রাসেল সাঁকোটি নড়বড়ে ও দূর্বল হয়ে পড়ায় আমাদের এখানকার অধিবাসীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হয়। এই সেতু দিয়ে পার হতে গিয়ে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়েছে অনেক বয়স্ক ও শিশুদের। পানিতে পড়েছে অনেকে। লোকের।
এই বিষয়ে স্থানীয় বিবিএস একাডেমির স্কুল শিক্ষিকা শিউলি বেগম বলেন, আমার মেয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে একা পার হতে ভয় পায় বলে প্রতিদিনই আমাকে সঙ্গে আসতে হয়। সাঁকো পার হতে আমি নিজে ভয় পেলেও মেয়েকে বুঝতে দেইনা। এর আগে সাঁকো দিয়ে পারাপারের সময় অনেক বয়স্ক ও ছোট বাচ্চারা দূর্ঘটনায় পতিত হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাসুদুর রহমান মোল্লা বাবুল বলেন, সেতুটির ব্যাপারে এলাকার জনগন যোগাযোগ মন্ত্রানালয়ে গিয়ে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের ওভারপাস বাঁশেরপুল ইষ্টার্ন হাউজিং বরাবর শেখ রাসেল সেতুসহ বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে ওভারপাসের অনুমোদন হয়। তবে সেতুটিও নির্মাণ করা হবে বলে জানতে পেরেছি। তবে এখানে পাকা সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এলাকাবাসী যোগাযোগ করলে আমরা ওভারপাসটি বাঁশের সাঁকো বরাবর করেছি। এক্ষেত্রে সাঁকোর পরিবর্তে ডিএনডি খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণের জন্য ওয়াসার অনুমোদনসহ পরবর্তী সব পদক্ষেপের বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে।
এস.আই/