তুরস্ক ও জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনীয় খাদ্যশস্য রফতানির বিষয়ে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের বন্দর থেকে খাদ্যশস্য রফতানির গ্যারান্টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে কিয়েভ।
সোমবার সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসনের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে কথা বলেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, আমাদের বন্দর ছেড়ে যাওয়া শস্যের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধিরা তুরস্ক ও জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমাদের সেই জাহাজগুলির নিরাপত্তা দরকার যারা এখানে খাদ্যসামগ্রী লোড করতে আসবে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খাদ্যশস্য রফতানিকারক দেশগুলোর একটি ইউক্রেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার রফতানিমুখী জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগ করেছে। তবে মস্কোর দাবি, তারা খাদ্যশস্য পরিবহনে কোনও রকমের বাধা দিচ্ছে না।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের গুদামগুলো থেকে শস্য চুরিরও অভিযোগ তুলেছে কিয়েভ। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি ‘ইউক্রেনীয় শস্যবাহী’ আলোচিত একটি রুশ জাহাজ আটক করেছে তুরস্ক। সোমবার একজন তুর্কি কর্মকর্তা বলেছেন যে, তারা কৃষ্ণ সাগর উপকূলে রুশ পতাকাবাহী একটি পণ্যবাহী জাহাজ থামিয়ে দিয়েছে। সেটিতে চোরাইকৃত ইউক্রেনীয় খাদ্যশস্য থাকা সংক্রান্ত কিয়েভের দাবির ব্যাপারে তদন্তকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।
তুরস্কে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাসিল বোডনার বলেন, তুরস্কের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রুশ জাহাজটি আটক করেছে। জাহাজটি বর্তমানে বন্দরের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে আছে। ইউক্রেনের তরফে এ ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা করা হচ্ছে।
রয়টার্সের সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, তারা রবিবার কারাসু বন্দরের বাইরে উপকূল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে হিবেক জোলি নামের রুশ জাহাজটিকে নোঙর করতে দেখেছেন। ভাসিল বোডনার বলেন, তদন্তকারীদের একটি বৈঠক থেকে জাহাজটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিয়েভের প্রত্যাশা, এতে থাকা ইউক্রেনীয় শস্য বাজেয়াপ্ত করবে তুর্কি কর্তৃপক্ষ। রয়টার্সের তরফে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলেও তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটি আটকের দাবি নিয়ে তুরস্কের শরণাপন্ন হয় ইউক্রেন। কেননা, রাশিয়া অধিকৃত বন্দর বারদিয়ানস্ক থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজটি ইউক্রেনীয় শস্যবাহী একটি কার্গো বহন করছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দেশটির সামুদ্রিক প্রশাসনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, সাত হাজার ১৪৬ ডেডওয়েট টনেজের হিবেক জোলি জাহাজটি বারদিয়ানস্ক থেকে ইউক্রেনের প্রায় সাড়ে চার হাজার টন শস্যের প্রথম কার্গো লোড করেছে।
তুরস্কের বিচার মন্ত্রণালয়ের কাছে গত ৩০ জুন তারিখের একটি চিঠিতে বিষয়টি উল্লেখ করে ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, বারদিয়ানস্ক থেকে তুরস্কের কারাসুর দিকে ছেড়ে যাওয়া রুশ পতাকাবাহী জাহাজটি ‘ইউক্রেনীয় শস্যের অবৈধ রফতানির’ সঙ্গে যুক্ত।
চিঠিতে সামুদ্রিক জাহাজটি পরিদর্শন, ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য শস্যের নমুনা জব্দ এবং শস্যের উৎপত্তিস্থল সংক্রান্ত তথ্য দাবি করতে তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তুর্কি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি যৌথ তদন্ত পরিচালনা করতেও ইউক্রেন প্রস্তুত রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের রুশ অধিকৃত অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, বেশ কয়েক মাস পর অঞ্চলটি থেকে প্রথম পণ্যবাহী জাহাজ বারদিয়ানস্ক বন্দর ছেড়েছে। ওই কর্মকর্তা অবশ্য জাহাজটির নাম উল্লেখ করেননি। বিষয়টি নিয়ে রয়টার্সের তরফে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রুশ প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিন থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। তবে শেষ পর্যন্ত তুরস্ক তার পানিসীমায় জাহাজটি আটক করায় কিয়েভের দাবিই শক্তিশালী হয়েছে।