জাভেদ রায়হান:
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা, গবেষণার বাইরেও শিক্ষার্থীদের মন-মানসিকতাকে বিকশিত করতে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বলে বিবেচিত হতে পারে মুক্তমঞ্চ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন ধরে একটি মুক্তমঞ্চের অভাব ছিল। সে অভাব পূরণ হয়েছে ২০১৯ এর শেষ দিকে এসে।
এ মুক্তমঞ্চে আসতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে গোল চত্ত্বর পর্যন্ত নাক বরাবর আসতে হবে। এরপর হাতের বাম দিকে মোড় নিলেই দেখা যাবে গ্রীক এরিনা তথা ওপেন এয়ার মঞ্চের আদলে তৈরি স্থাপনাটি। লাল সিরামিক ইট দিয়ে তৈরি এই মুক্তমঞ্চটিতে রয়েছে ১০টি সিড়ি যেখানে প্রায় ৫০০ জন একত্রে বসে যেকোন অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবে। এখানেই শেষ নয় মুক্তমঞ্চের পূর্ব-উত্তর দিকে রয়েছে সবুজ গালিচা; চাইলে সেখানে বসেও উপভোগ করা যাবে অনুষ্ঠান। এছাড়া দর্শকদের সামনে লাল সিরামিক ইটের কাজ করা বিশাল মঞ্চতো রয়েছেই।
এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান এখানে আয়োজন করা হয়েছে। তবে এর শুরুটা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘থিয়েটার কুবি’। বর্তমান মুক্তমঞ্চের জায়গাটি পূর্বে ঝোপঝাড়ে ভর্তি ছিল। সে জায়গাটি পরিষ্কার করে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ উপলক্ষ্যে ‘থিয়েটার কুবি’ ‘বাঙালির স্বাধীনতা’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে। অনুষ্ঠান শেষে ‘থিয়েটার কুবি’ ও এই সংগঠনের সভাপতি মেহেদী হাসান উপস্থিত শিক্ষকদের নিকট এই স্থানে মুক্তমঞ্চ করার দাবি তুলেন। এর ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় এ মুক্তমঞ্চটি নির্মিত হয়। মুক্তমঞ্চটি যখন বর্তমান আকার লাভ করে তখন থিয়েটার কুবিই সর্বপ্রথম মান্নান হীরা রচিত ‘ইনডেমনিটি’ নাটকটি এখানে মঞ্চস্থ করে।
এ মুক্তমঞ্চ দ্রুত সময়ে যার কারনে স্বপ্ন থেকে বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে তিনি হলেন প্রত্নতত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্যবর্ধন প্রকল্পের জন্য গঠিত সাত সদস্যের কমিটির প্রধান ছিলেন। তিনি এ ব্যাপারে বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যখন এসেছিলাম তখন দেখতাম ছাত্র-ছাত্রীরা মাটিতে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আবার বিভিন্ন সংগঠনকে দেখতাম তাদের প্রোগ্রাম করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। তখন শুধু আফসোসই হতো! কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে যখন দেখি ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে বা কখনো কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে তখন খুব ভালো লাগে।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাঁঠাল তলা, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ আড্ডার জায়গা থাকলেও এখন সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে মুক্তমঞ্চও। এতে খুশি সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরাও।
মুক্তমঞ্চের ব্যাপারে বলতে গিয়ে ‘থিয়েটার কুবি’র বর্তমান সভাপতি অর্ক গোস্বামী বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যখন নাট্য উৎসব করি তখন তিনদিনের প্রোগ্রামের জন্য আমাদেরকে প্রায় ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছিলো শুধু মঞ্চের জন্য। কিন্তু যখন মুক্তমঞ্চের কাজ শেষ হয় তখন এসবের জন্য আমাদের নামেমাত্র একটা খরচ হয়। ক্যাম্পাসের সার্বিক সাংস্কৃতিক আবহ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মুক্তমঞ্চ অনেক বড় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যখন তাকাই তখন দেখি সাংস্কৃতি চর্চার বেশিরভাগই হয় মুক্তমঞ্চ কেন্দ্রিক। আমাদের যেহেতু এখনো অডিটোরিয়াম বা টিএসসি নেই তাই বলতে পারি মুক্তমঞ্চ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতিমনা করে তুলতে প্রধান নিয়ামক হিসেব কাজ করে।’