তিনি একাত্তর বছর পৃথিবীতে ছিলেন। আজকের তারিখে দুই হাজার ছয় সালে পৃথিবীকে বিদায় বলেছেন।
এই কর্মবীর দাঈ ইলাল্লাহ পৃথিবী ছেড়ে গেছেন কিন্তু তাঁর রেশ, আবেশ ও প্রভা-প্রভাব রয়ে গেছে পৃথিবীর পথেপথে। মানুষের আসল বয়স শুরু হয় মৃত্যুর পরে। মৃত্যুর পরে যাঁরা যতদিন কর্ম, অবদান ও মানুষের হৃদয়ে বাঁচেন তাঁরা ততো বড়ো মানুষ।
তিনি প্রধানত সূফী তরীকার পীর ছিলেন। পীরগীরির মসৃণ ও মিষ্টি বনে জপজিকিরে সীমাবদ্ধ করেননি নিজেকে।
নিজেকে নিয়ে গেছেন কষ্টের পথে, কাঁটাদার ময়দানে ও সমালোচনার কর্মসূচিতে।
ইসলামের একটা সার্বজনীন পথরেখা সৃষ্টির সম্ভাব্য সকল কুশিশ করেছেন মরহুম এই মনিষী।
তিনি পীর হিসেবেও চলতিধারাকে ভেঙে পরিশীলন এনেছেন।
সূফী তরীকায় কিছু বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি আছে, মরহুম সেই স্খলনে সামান্য পরিবর্তন এনেছেন। বড়সড় এবং যথার্থ বিবর্তন আনলে ভালো হত, সেটা হয়নি। বাংলাদেশের সূফী ইশকুলে যাঁরা গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁদের মাঝে বিশুদ্ধতার মাত্রা চরমোনাইওয়ালাদের তুলনামূলক বেশি।
দাঈ হিসেবে মরহুম পীর সাহেব তাঁর সর্বজনশ্রদ্ধেয় পিতার মতো চষে বেড়িয়েছেন পুরো ব দ্বীপ।
লক্ষ মুসলমানকে আমলে ফিরিয়েছেন। অমুসলিমদের দিয়েছেন দীনের পয়গাম। প্রায় সারাবছর সারাদেশে প্রোগ্রাম করেছেন। এটা এখনো আলহামদুলিল্লাহ সচল।
রাজনৈতিক জীবনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোন বলয়ে না গিয়ে আলাদা পথে হেঁটেছেন।
এটা নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি।
আলেমদের একটা সিংহভাগ বিএনপি বলয়ে গেছেন, আরেকটা দল আওয়ামী লীগের সাথে সমন্বয় করেছেন।
পীর সাহেব আলাদা হলে নৈতিকভাবে সমস্যা কোথায়?
তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিরুচি থাকতেই পারে। তাঁর কবরে দুআ পাঠান, এখন চিন্তাহীন সমালোচনার সময় নয়।
সমগ্র জীবন মসজিদ, মকতব ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন মরহুম পীর সাহেব। অহর্নিশ তরবিয়ত তথা বিশুদ্ধ আমলমুখী করার মেহনত করেছেন।
তাঁর কবরে সারাক্ষণ পুণ্যের পুষ্পাঞ্জলি পৌঁছে যাচ্ছে।
অজস্র হেফজখানা হতে।
মকতবখানার সারি হতে।
কুরআন হাদিসের দরস হতে।
রেখে যাওয়া অনুসারীদের আমল হতে।
তাঁর রোপণ করা দীনি বিটপী বৃক্ষ হতে।
এমন সুন্দর, সফল ও ঈর্ষণীয় জীবনই ত কাম্য।
আমল, ইলমি চর্চা, তাযকিয়া, মানুষের সেবা, দাওয়াত, রাজনৈতিক সচেতনতা এরকম সর্বক্ষেত্রে এই মহান মানুষ কাজ করেছেন। যা আজও চলমান, আল্লাহ সবসময় সচল রাখুন এই সওয়াবের সিলসিলা।
মানুষটাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। ইলাহি, তাঁর সবকিছু কবুল করুন। আমিন!
লেখক: রুকন এনাম লুবান