নিজস্ব প্রতিবেদক: পারিবারিক কলহের জেরে পুলিশ দম্পতির পাল্টাপাল্টি মামলায় স্বামী ওবায়দুল কবির সুমনকে সাময়িক বরখাস্তের পর এবার তার স্ত্রী সুমাইয়া বেগম লাকীকেও বরাখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। লাকী সিআইডি রাজশাহী মেট্রোতে উপপরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বুধবার দুপুরে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জেসমিন বেগম বলেন, ‘সুমাইয়ার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি এতোদিন আমাদের জানা ছিলো না। যখন জানতে পারি তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন, সেই তারিখ (২৭ জানুয়ারি) থেকে তাকে ‘সাসপেন্ড’ দেখানো হয়েছে। আদালতের মামলা আদালতের মতো চলবে এছাড়াও তার বিষয়ে তদন্ত করার জন্য আমাদের বিভাগ থেকে একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ গত মঙ্গলবার তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ওবায়দুল কবির সুমন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড টান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে উপ—পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্ত্রী লাকীর করা মামলায় একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর আদালতে জামিন নেন সুমন। এতে বাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে গত ১ জুন এক আদেশে বরখাস্ত করে ডিএমপি। এর আগে ২৫ অক্টোবর ওবায়দুল কবির সুমন স্ত্রী লাকীর বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর আদালতে ২০ লাখ টাকার একটি যৌতুকের মামলা করেন। এ মামলায় ওয়ারেন্টও জারি হয়। পরে ২৭ জানুয়ারি জামিন নেন এসআই লাকী।
সিআইডি রাজশাহী মেট্রোপলিটনের পুলিশ সুপার মো. আবদুল জলিল বলেন, সিআইডি সদর দপ্তর থেকে আজ (বুধবার) সুমাইয়া বেগম লাকীর বরখাস্তের চিঠি পেয়েছি। চিঠির নির্দেশনা মতে কাজ চলমান রয়েছে।
উলেখ্য, ২০১৬ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে চার বছরের একটি পুত্রসন্তান আছে। গত কয়েক বছর ধরে স্ত্রী সুমাইয়া বেগম লাকি উশৃঙ্খল জীবনযাপন ও পরকীয়ায় লিপ্ত হন। ছেলেকে বাসায় রেখে কাউকে কিছু না বলে ফোন বন্ধ করে বেরিয়ে যেতেন ইচ্ছামতো। ফেরার পর কিছু জিজ্ঞেস করলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতেন এবং নারী নির্যাতনের মামলা করে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিতেন। স্বামী সুমন এবং পারিবারিকভাবে অনেক বুঝানোর পরও লাকীর আচরণ দিনের পর দিন খারাপ হতে থাকে। লাকী এক পর্যায়ে সুমনের কাছে ২০ লাখ টাকা ডিপোজিটসহ তার মায়ের বাড়ি করার জন্য পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে উপায় না পেয়ে ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর সুমন আদালতে একটি মামলা করেন। এ মামলার পর স্ত্রী লাকী ২০ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) রাজপাড়া থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নিযার্তনের একটি কাউন্টার মামলা করেন।
এদিকে ভুয়া স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে চাকরিতে যোগদানের গুরুতর অভিযোগও রয়েছে লাকীর বিরুদ্ধে। আছে জবর—দখলের অভিযোগ। স্বামীর পরিবার ছাড়াও আপন ভাই এবং ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকেও পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এসআই লাকীর বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ।