বৃহস্পতিবার | ২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ রমজান, ১৪৪৫ হিজরি | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | বসন্তকাল | রাত ১১:৪৫

বৃহস্পতিবার | ২৮ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ রমজান, ১৪৪৫ হিজরি | ১৪ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | বসন্তকাল | রাত ১১:৪৫

মানবজীবনে পবিত্র রমজান মাসের প্রভাব

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram
  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১২:০৮ অপরাহ্ণ
  • বিকাল ১৬:২৮ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৮:১৫ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৯:২৮ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

প্রতি বছর কোটি কোটি মুসলমান সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারে বিরত থাকার মাধ্যমে রোজা রাখে। রমজান মাস আমাদের মাঝে নিয়ে আসে পরিবর্তন হওয়ার এক অনুপম দৃষ্টান্ত। রোজা আমাদের ধৈর্য, ত্যাগ, শ্রদ্ধা ও বিনয়ী হতে শেখায়। মুমিনদের মাঝে গড়ে উঠে হৃদ্যতা ও ভালবাসার বন্ধন। রমজান মাসের প্রভাব পড়তে থাকে রোজা শুরু হওয়ার এক মাস আগে থেকেই। তখন থেকেই রোজাদারগন নিয়ে থাকে মাহে রমজানের প্রস্তুতি। এই প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে সমাজ এবং রাষ্ট্রের পরতে পরতে। মানুষের ঘরে ঘরে শুরু হয় রমজানের আলোচনা পর্যালোচনা। শিশুরাও বায়না ধরে মায়ের কাছে রোজা রাখার। তরুণ-তরুণীরা ও সংকল্প করে সিয়াম সাধনার। আনন্দ, উৎসবে এভাবেই সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে মাহে রমজানের বার্তা পৌঁছাতে থাকে ধীরে ধীরে। মুসলিমরা শবে বরাতের রোজা রাখার মাধ্যমে আরো প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলে। সকল প্রকার ব্যস্ততা ঘুচিয়ে পবিত্র মাহে রমজানকে মুমিনগণ স্বাগত জানায়।

রোজার প্রস্তুতি

রমজান মাসের পবিত্র দিন শুরু হওয়ার পূর্বেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, ইসলামি সংগঠন এবং মুসল্লীরা মিছিলে মিছিলে শোভা যাত্রার মাধ্যমে রমজান কে স্বাগত জানায়। পবিত্র রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষা করা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা বন্ধ এবং দিনের বেলা হোটেল রেস্তোরাঁ বন্ধ করার জন্য সরকার ও প্রশাসনের কাছে দাবি জানায়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখিত বানি ও বিবৃতি পাঠায় ওলামায়ে কেরাম, সুধী সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। আবার কেহ কেহ প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প ও কলামের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেন মাহে রমজানের প্রস্তুতি। বক্তারা তাদের বক্তব্য ও ওয়াজের মাধ্যমে পৌঁছে দেন আগাম বার্তা।

ব্যক্তি জীবনে প্রভাব

রমজান মাস নিয়ে আসে মানুষের ব্যক্তি জীবনের বিশাল পরিবর্তন। সারা বছর যতই অন্যায় অপরাধ করুক না কেন রমজান মাস এলে ব্যক্তির হয় চিন্তার পরিবর্তন। আল্লাহর বিধান সম্পর্কে হয় সচেতন। সকল পাপাচার ও জুলুম থেকে বেচে থাকতে হয় বদ্ধপরিকর। হয়ে যায় মসজিদের নিয়মিত মুসল্লী। নামাজে প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর জন্য করে প্রতিযোগিতা। বন্ধু বান্ধবের শত টিটকারি মেনে নেয় অকপটে। এভাবেই ধৈর্যের সঙ্গে সিয়াম সাধনায় ব্রত থাকে একজন রোজাদার।

পারিবারিক জীবনে প্রভাব

মাহে রমজান মাস পারিবারিক জীবনেও নিয়ে আসে শান্তির মোহনা। পরিবারের ছোট বড় সকলের মাঝেই পরিলক্ষিত হয় রোজার প্রস্তুতি। এই বুঝি রোজা শুরু হয়ে গেল! এ সকল চিন্তা দোলা দিতে থাকে মনে। রমজানের দিনগুলো যাতে সকল কে নিয়ে সুন্দর ভাবে কাটাতে পারে তা নিয়ে থাকে মনে জল্পনা কল্পনা। সকল সমস্যা দূরীভূত করে একটি সুন্দর, শৃঙ্খলা পরিবার গঠন করে সিয়াম সাধনায় ব্রত হওয়ার সংকল্প করে মনে।

সমাজ জীবনে প্রভাব

আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের রোজা সকল প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক-যুবতী, নারী ও পুরুষের উপর ফরজ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগন, তোমাদের উপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীগনের উপর। যাতে তোমরা খোদা ভীতি অর্জন করতে পারো। আমাদের সমাজ জীবনে রোজার মাস নিয়ে আসে পরিবর্তনের এক অনুপম দৃষ্টান্ত। সমাজ জীবনে এর উদাহরণ পরিলক্ষিত হয়। সমাজের উঁচুনিচু সকলের ভিতর শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয়। ধনী গরিবের ভেদাভেদে ভাটা পড়ে যায়। রোজার প্রভাবে সমাজ থেকে উঠে যায় হিংসা রিয়া অহংকার। ঝগড়া ফ্যাসাদ ও কলহ থেকে সমাজের মানুষ সতর্ক হয়ে যায়। কারো সাথে ঝগড়া হলে রোজাদাররা বলে দেয় আমি একজন রোজাদার। তাই মানুষের চরিত্রে ভালো গুণ পরিলক্ষিত হয়। কারণ রোজার প্রভাবে মানুষের ভিতর থেকে লোভ দমে যায়। তাই স্বভাবতই সমাজটা সুন্দর হয়ে যায়। সবাই দল বেধে মসজিদে যায়। এক কাতারে সবাই নামাজ পড়ে। এতে মুসলিমদের মাঝে তৈরি ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসার বন্ধন। সকল প্রকার অনৈক্যতা দূর হয়ে যায়। রোজার মাস ব্যতিত সমাজ জীবনে এই ধরনের পরিবর্তন মোটেও তেমন পরিলক্ষিত হয় না। বড়দের সম্মানে আর ছোটদের স্নেহে সমাজ হয়ে উঠে সুন্দর। হয়ে উঠে একে অপরের সহযোগী। রোজা রাখার মাধ্যমে একজন রোজাদার অনুভব করে মিসকিন, অসহায়দের জীবনের বৈশিষ্ট্য। ফলে ধনীরা সমাজের গরীব অসহায় সকলের মাঝে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সবাই সূখে শান্তিতে এক কাতারে বসবাস করে। ছোট বড় সকলেই রোজা ও আমলের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। সকলেই আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টায় ব্রত থাকে।

অফিস আদালতে প্রভাব

রমজান মাসের প্রভাব অফিস আদালতে ও পরিলক্ষিত হয়। তারা তাদের কাজের ব্যস্ততা কমিয়ে নেয়। রোজায় তারা বিকালের মধ্যেই অফীস আদালত ছুটি ঘোষনা করে দেয়। তাদের কাজ ও চরিত্রে আসে বিশাল পরিবর্তন। তাদের ভিতর জবাবদিহিতা সৃষ্টি হয়। মহান রবের ভয়ে তারাও অবনত মস্তকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সিজদায় লুটাইয়া পড়ে। অফিসের সকল শ্রেণির কর্মচারিদের মধ্যে তৈরি হয় শ্রদ্ধা ভালবাসার বন্ধন।

বাজারে প্রভাব

রোজার মাস আসলেই এক ধরনের অসাধু ইতর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য হু হু করে বাড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে প্রশাসন ও তাদের দমাতে ব্যর্থ হয়। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে জনগণের মাঝে দেখা যায় নাভিশ্বাস। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা হতাশ হয়। তাদের চোখে পানি ঝড়ে। আমরা দেখেছি বিভিন্ন দেশে রমজান মাস আগত হলে দ্রব্য মূল্য ওদেশের সরকার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে বসবাস করে। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায় ভিন্ন চরিত্র। রোজার মাস আসলেই যেন দ্রব্যমূল্যে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের নাগালের বাহিরে চলে যায়। সরকারের উচিৎ রমজান মাসে এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাই বাজারে সরকার প্রশাসনের বেশি নযরে আনা উচিৎ। যাতে মানুষ শান্তিতে দুমুঠো খেয়ে রোজা রাখতে পারে। আল্লাহর ইবাদাতে মনোযোগি হতে পারে।

শিক্ষা জীবনে প্রভাব

রমজান মানুষের শিক্ষা জীবনে ও প্রভাব ফেলে। সারা বছর মানুষ প্রচুর পড়াশোনা করলে ও রমজান মাস এলে পবিত্র কোরআন পাঠে সবাই মনোযোগী হয়। পবিত্র কোরআন কে তারা প্রচুর অধ্যায়ন করে। যা পৃথিবীর কোন বই এতো পরিমান অধ্যায়ন করা হয় না। এ মাসে সকলেই পবিত্র কোরআন কে শিখতে চায় জানতে চায়। এবং সেই অনুযায়ী জীবন গড়ার সংকল্প আঁকে মনে। জীবন পথের পাথেয় সংগ্রহ করে বাকি জীবন গড়ে তোলে। যারা কোরআন পড়তে জানে না তারা শিখতে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠে। এবং তারা মসজিদের ইমাম সাহেব এবং বিভিন্ন মাধ্যমে পবিত্র কোরআন কে অধ্যায়ন করে কাটিয়ে দেয়।

অমুসলিমদের মাঝে প্রভাব

রমজানে অমুসলিমদের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যায়। এ বছর ভারতে কলকাতার মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দ্রব্য মূল্যের দাম সহনীয় করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। যাতে নিম্ন আয়ের মানুষ দু-মুঠো খেয়ে ভালোভাবে রোজা রাখতে পারে। বিধর্মীদের এই আচরণ আমাদের সমাজ জীবনে প্রভাব ফেলে। ইতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠে। অন্য অন্য ধর্মালম্বিরা রমজান মাসকে শ্রদ্ধা করে।এই শ্রদ্ধায় তারা রোজা পর্যন্ত রাখছে। যা মুসলিম ইতিহাসে বিরল হয়ে থাকবে। পবিত্র রমজান মাস আত্মশুদ্ধির মাস। পরিবর্তন হওয়ার মাস। এ মাসে আমাদের সমাজ জীবনে নিয়ে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। এই পরিবর্তনে অনেক ব্যক্তি ভালোভাবে নিতে পারে না। তারা সেই মানুষদের ছোট করে দেখে। টিটকারি করতে চায়। তা আদৌও কোন মুসলমানের করা উচিৎ নয়। কিন্তু তারা আগে অন্যায়, পাপাচার করতো, জুলুম করতো, সুদ, ঘুষে আচ্ছন্ন ছিলো তখন সেই ধ্বজাধারীরা কোথায় ছিলো? এই প্রশ্ন রেখে গেলাম। কাজেই রমজান মুসলিমদের জন্য রহমত, বরকত ও নাজাত নিয়ে আগমন করে। প্রতিটি মুসলমানের উচিৎ হবে এই মাসকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা। আত্মশুদ্ধি অর্জন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হওয়া।

লেখক: মো. এনামুল ইসলাম

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram

Leave a Comment

সর্বশেষ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

এইচ এম মাহমুদ হাসান-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেছেন, দেশবিরোধী সকল আধিপত্যবাদী শক্তিকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে। দেশ স্বাধীন হয়েছে দিল্লির গোলামির জন্য নয়; মাথা উঁচু করে নিজের অধিকার আদায়ের জন্য। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের হাতেই আজ স্বাধীনতা ও দেশ বিপন্ন।

দিল্লির গোলামীর জন্য মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেনি-ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তর

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে

  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১২:০৮ অপরাহ্ণ
  • বিকাল ১৬:২৮ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৮:১৫ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৯:২৮ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ