আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিল একটি ভূখন্ড, যার নাম বাংলাদেশ। এ দেশটির স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকী আজ। নানা আয়োজনে এবার দিবসটি উদযাপন করা হবে।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সেই সাথে গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি। দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিপাগল সচেতন শ্রেণী পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ইঙ্গিত লাভ করে। এরপর সমস্যা সমাধানে ১৬ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ আলোচনা ব্যর্থতার দিকে গড়াতে থাকলে অনেকেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। মার্চের সেই উত্তাল দিনগুলোতে এভাবে প্রস্তুত হতে থাকে যুদ্ধের ক্ষেত্র।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করাচির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন ইয়াহিয়া খান। রাত ১১টায় তিনি করাচি পৌঁছার খবর ঢাকায় পাঠানোর পরপরই শুরু হয় গণহত্যা অভিযান। রাজপথে নেমে আসে ট্যাংক এবং সশস্ত্র সৈন্য। পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য শুরু হয় ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ২৫ মার্চে গণহত্যা পরিচালনার সময় পুলিশ, তৎকালীন ইপিআর এবং বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে বাঙালি সৈনিক ও অফিসাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। পরদিন থেকে শুরু হয় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ। যে যার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে চূড়ান্ত সেই যুদ্ধে। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াই-সংগ্রাম আর ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় মহান বিজয়। এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ পায় লাল-সবুজের পতাকাখচিত একটি স্বাধীন ভূখণ্ড।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ দেশবাসীসহ প্রবাসী বাংলাদেশীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বাণীতে তিনি বলেন, স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশে পরিণত হোক, মহান স্বাধীনতা দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে এবং প্রবাসে বসবাসকারী সব বাংলাদেশী নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, আমরা দেশে উন্নয়নের যে গতিধারা সৃষ্টি করেছি তা অব্যাহত থাকলে বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। আমরা সৌভাগ্যবান যে, ২০২০-২১ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী যুগপৎভাবে বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করেছি। স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সব বাংলাদেশীকে ভেদাভেদ ভুলে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে লালন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করার
আহ্বান জানাই।
কর্মসূচি: অনেক প্রাপ্তি নিয়ে এবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হবে। গত বছর এমন একটি সময়ে দিবসটি উদযাপিত হয়েছিল, যখন বাংলাদেশসহ চার দিকে ছিল বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের থাবা। বর্তমানে মহামারী অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে তাই এবার স্বতঃস্ফূর্ততা থাকবে বেশি। মহান স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে একইসাথে মুজিববর্ষের কর্মসূচিও উদযাপিত হওয়ায় কর্মসূচিতে ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়েছে। মহান স্বাধীনতা দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ শনিবার প্রত্যুষে রাজধানীতে তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যরা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান উঁচু ভবনগুলোতে বৃহদাকারের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এ দিন সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের শান্তি সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।