আব্দুল্লাহ বিন সেলিম:
মা-বাবা মারা যাওয়ার পর মেয়েদের বাপের বাড়ি আসা-যাওয়া অনেকটাই কমে যায়। আগে এ বাড়িতে আসা হতো বাবা-মায়ের টানে, আব্বু-আম্মুর ভালোবাসায়। দেখা যেত, অনেক সময় দাওয়াত না পেলেও বাবা-বাড়িতে আসা হতো মেয়েটির; দু’দন্ড মা-বাবাকে দেখে যেতো। ওনাদের চলে যাওয়ার পর বাবা-বাড়িতে আসা-যাওয়াটা ক্রমশ কমতে থাকে।
বলা হয় থাকে, ‘মেয়েরা বাপের বাড়ির কুকুরটাকে দেখলেও আদর করে’। ছেলেরা সারা দুনিয়া চষে বেড়িয়ে দুদন্ড সুখ পাওয়ার জন্য ছুটে যায় নাড়ির টানে, চিরচেনা বাবার বাড়িতে। মেয়েদেরও তো এমন মনে চায়। লম্বা সময় ধরে যেখানে কাটিয়েছে সে; যেখানের পলি মাটি তার পায়ে মেখে আছে, যে বাড়িটার সম্মুখের পুকুরের মধ্যিখানে উড়ে আসা মাছরাঙা পাখিটা যার পরিচিত, উঠোনের পশ্চিম কোণের বড়ই গাছের তলায় কত দিন তার কেটেছে চড়ুই পাখির সনে, যে ঘরের সদর দরজার খিলটা যার চিরপরিচিত, খোঁয়াড় থেকে বেড়িয়ে আসা বুড়ো মুরগিটা যার বান্ধবী, গোয়ালঘরের তরুণীর সদ্য তুলতুলে ছোট্ট বাছুরটা যার খেলার সাথি—এমন স্মৃতিবিজড়িত জায়গার টান তো এমনিতেই মেয়েদের আছে, বারবার এ বাড়িতে আসতে তো খুব করে মনে চায়, কিন্তু…
কিন্তু বাবা-মা মারা যাওয়ার পর এ বাড়ি থেকে আমন্ত্রণ কমে আসতে শুরু করে। যদ্দরুন, নির্জনেই চোখের জল ফেলে সে। ভাবে, আব্বু-আম্মু থাকলে আজ কতবার নাইওর নিতো, খোঁজখবর নিতো কতশত বার। এখন কেউ ও বাড়ি থেকে খোঁজটুকু নিতেও গরজবোধ করে না। এরপর যখন মেয়েটির ভাইয়েরা একেক করে পরলোকগমন করে, তখন তো এ বাড়ির লোকজন থেকে আমন্ত্রণ প্রায় শূণ্যের কোঠায় চলে যায়। এভাবেই অবহেলায়, আমন্ত্রণের অনাদরে দিন কেটে যায় তার…
এত কাছের আত্মীয়দের সাথে এমন আচরণ কাম্য নয়। আমাদের উচিত বোনদের, ফুফুদের আবেগগুলোর মূল্যায়ন করা; তাঁদের সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখা। তাঁদের সুস্থতায়, অসুস্থতায় যোগাযোগ রাখা, দেখতে যাওয়া। আত্মীয়তার সম্পর্ককে টিকিয়ে, জিইয়ে রাখার নির্দেশ তো ইসলাম এমনিতেই আমাদেরকে দিয়েছে; তার উপর বোন, ফুফুর মত এত নিকটাত্মীয়। আমরা তাঁদের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখলে, তাঁদের সাথে সুসম্পর্ক রাখলে এর প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের উপরও পড়বে। এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আত্মীয়তার সুদৃঢ় বন্ধন গড়ে উঠবে।
আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: আব্দুল্লাহ বিন সেলিম
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।