ভ্রমণ করা প্রায় সবারই প্রিয়। আমারও প্রিয়! কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে ভ্রমণের সুযোগ টা একটু কমই হয়। এবার কুরবানির ঈদের অবসর সময়ে ভ্রমণে বের হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তা হচ্ছিলো না।
আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে থাকায় ৩ জুলাই সোমবার দুপুরে পরামর্শ করে শহিদ ভাই, আজিজুল ভাই, হাবিব ভাই, আব্দুল্লাহ ভাই, জুবায়ের, ফাহিম এবং তার খালাতো ভাইকে নিয়ে বের হলাম ভ্রমণে।
গন্তব্য ছিল টাঙ্গাইলের নাগরপুর জমিদার বাড়ী।
সখিপুর উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দুরে নাগরপুর জমিদার বাড়ি।
তিনটি বাইকে আমরা ৮জন ছুটে চললাম সখিপুরের লাল মাটির পাহাড়ি আঁকাবাকা রাস্তা ধরে, পৌঁছাতে সময় লাগলো প্রায় ২ঘন্টা। সময় হলো আসরের নামাজের, নামাজ আদায় শেষে ঘুরে ঘুরে দেখার সময় নজর পড়লো বিশালাকৃতির একটি পুরনো ভবনের দিকে, সামনে গিয়ে দেখি সেই ভবনটিকে রুপান্তরিত করা হয়েছে নাগরপুর মহিলা কলেজ হিসেবে। আশেপাশে যত ভবন আছে প্রায় সকল ভবনই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
প্রায় ঘন্টাখানেক ঘোরাঘুরি করে দেখা শেষ হলো জমিদার বাড়ি।
এরপর গন্তব্য দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া গ্রাম।
চলতে লাগলাম গ্রামের পিচঢালা পথ ধরে পুরনো সেই ১০টাকা নোটের আতিয়া মসজিদ দেখতে।পথিমধ্যে মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম এলাসিন বাজার জামে মসজিদে।
আঁকাবাঁকা পথের দু’ধারে গাছের ডালের ফাক দিয়ে মাঝে মাঝে দেখা যেত চাঁদের আলোর। পথিমধ্যেই কয়েক মিটার দূর থেকে দেখতে পেলাম মসজিদটিকে। শহিদ ভাই সবাইকে ডেকে বললেন ঐ যে মসজিদ। মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে লৌহজং নদী।
মসজিদের সামনে আছে একটি পুকুর।
পুকুরের ধারেই রয়েছে নানা ধরনের ফুলের গাছ।
আতিয়া মসজিদটির আকৃতি চারকোণা। চারটি বড় পিলারের মাঝে বিভিন্ন কারুকার্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মসজিদটির দেয়াল।
মসজিদটিতে একটি বড় গম্বুজ ও তিনটি ছোট গম্বুজ আছে। এছাড়া বাইরের অংশে অনেক টেরাকোটার কাজ দেখতে পেলাম। অধিকাংশই বিভিন্ন ফুলের নকশা।
মসজিদটির চারদিকে ঘুরে দেখতে সময় লক্ষ্য করলাম, মসজিদের তিন পাশে মোট ৭টি প্রবেশপথ।
পূর্বদিকে তিনটি প্রবেশ পথ ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণে আরও দুটি করে প্রবেশপথ আছে। লাল ইটের তৈরি মসজিদটি দেখতে অনেকটা ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে।
মসজিদটি আকৃতিতে বেশ ছোট। ভিতরে প্রবেশ করেই দেখতে পেলাম দুজন ষাটোর্ধ বৃদ্ধ লোক।দুজনেই আল্লাহর ইবাদতে মশগুল।
আতিয়া মসজিদ বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদ যা বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ এ স্থাপনার তত্ত্বাবধান করছে।
জানা যায়, আতিয়া পরগনার শাসনকর্তা সাঈদ খান পন্নী ১৬০৯ সালে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। ষোড়শ শতকে মসজিদটি নির্মাণ হলেও এখনো মসজিদে মানুষ নামাজ আদায় করে। প্রায় ৪১৪ বছর ধরে মসজিদটিতে ৫ওয়াক্ত নামাজের জামাত হয়।
এরপর, মসজিদের এককোণে দাঁড়িয়ে ২রাকাত নামাজ আদায় শেষে মসজিদের ভিতরে ভালভাবে দেখলাম।
মসজিদ টি তৈরির সময় বৈদ্যুতিক পাখা,বাল্বের প্রচলন না থাকলেও বর্তমানে মসজিদের ভিতরে লাগানো হয়েছে ৫টি সিলিং ফ্যান এবং ২টি বাল্ব। এছাড়া মসজিদের বাইরে থেকে বুঝার উপায় নেই যে,মসজিদের একটি বারান্দা আছে, যা বুঝা যায় একমাত্র মসজিদের ভিতর থেকে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেভাবে যাবেন
টাঙ্গাইল শহরের যেকোনো স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি বা অটো রিকশায় সরাসরি আতিয়া মসজিদে যাওয়া যায়।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।
এস.আই/