এক বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫২ কোটি ২০ লাখ টাকা।
সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের শেষ দিনে ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪২ হাজার ৮১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর আগের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৬৬৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
একদিকে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারেনি। এসময় খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও আদায় করা সম্ভব হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গেল অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে মাত্র ৭৯০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৪৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ দিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
অন্য দিকে অর্থবছর শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুন শেষে ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৮১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এটি ব্যাংকগুলোর বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় চার হাজার ৫১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা বেশি। অন্যদিকে ২০২০ সালের জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪২ হাজার ৬৬৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৪৫০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক আদায় করেছে ৩৬৩ কোটি টাকা (আদায়ের হার ৮০.৬৭ শতাংশ)। ৪৫০ কোটি টাকার বিপরীতে জনতা ব্যাংক ১২০ কোটি ৯২ লাখ টাকা (২৬.৮৭ শতাংশ)। ৪০০ কোটি টাকার বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংক আদায় করেছে ১৮৬ কোটি টাকা (৪৬.৫ শতাংশ)। ১৪০ কোটি টাকার বিপরীতে রূপালী ব্যাংক ৫৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা (৩৭.৯৮ শতাংশ) আদায় করেছে। বেসিক ব্যাংক ১২৫ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় করেছে ৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা (২৮.৭৫ শতাংশ) এবং ৪০ কোটি টাকার বিপরীতে বিডিবিএল ৩১ কোটি ১৫ লাখ টাকা (৭৭.৮৮শতাংশ) আদায় করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিটি ব্যাংকেরই খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৬০২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় খেলাপি ঋণ আদায় কমেছে ৮১২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বেসিক, সোনালী ও বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ আগের অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের বেড়েছে ৪৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, সোনালী ব্যাংকের ৪৪৩ কোটি টাকা আর বিডিবিএলের ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। মূলত এ তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণেই সার্বিকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আগের অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে।
অন্যদিকে সমাপ্ত অর্থবছর শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৫৫ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩০০ কোটি টাকা ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা কমেছে। তবে খেলাপি ঋণ কমার কারণ হিসেবে জানা গেছে, এসব ব্যাংক বেশি করে ঋণ পুনঃতফসিলের আশ্রয় নিয়েছে।