জামাল উদ্দিন,কতুবদিয়া(চট্টগ্রাম) – ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম—বড় শহরের ব্যস্ত সড়কে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক ঝটিকা ও মশাল মিছিল করে আলোচনায় এসেছে ছাত্রলীগের নামধারী একটি অংশ। তবে কার নির্দেশে, কার অর্থায়নে এই কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে, তা এখনও প্রশাসনের কাছে অজানা। অভিযোগের তীর ঘুরে যাচ্ছে চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিকদার ও তাঁর ছেলে রাহাত সিকদারের দিকে।
তথ্যসূত্র জানাচ্ছে, চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রলীগের কিছু নেতা—মাহমুদুল করিম, সাকিব ও নয়ন—সম্প্রতি কুতুবদিয়া দ্বীপ থেকে উঠে এসে শহরের মিছিল-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এদের পেছনে অর্থায়ন ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া দিচ্ছেন কুতুবদিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিকদার।
জাহাঙ্গীর সিকদার অতীতে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে সরকারি টেন্ডার, বিভিন্ন দপ্তরের কাজ ভাগিয়ে নেওয়া এবং এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগে আলোচনায় আসেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় একক আধিপত্য বজায় রেখেছেন। অভিযোগ আছে, এসব কর্মকাণ্ডে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের সহযোগিতা পেয়েছেন।
তার ছেলে রাহাত সিকদার, যিনি রিয়াদ নামেও পরিচিত, বর্তমানে ঝটিকা মিছিল সংগঠনের অন্যতম নেপথ্য কারিগর হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রের দাবি, রাহাত একসময় নিজেকে ছাত্রশিবিরের কর্মী পরিচয় দিলেও বর্তমানে বাবার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে রাজধানী ও চট্টগ্রামে ঝটিকা মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
রাহাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি চারটি এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। সূত্র দাবি করছে, কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, এমনকি র্যাবের কর্মকর্তার সাথেও তার সম্পর্ক রয়েছে। চাঁদগাঁও থানার র্যাব-৭ কার্যালয়ের পাশেই রাহাত ও তার পরিবার বর্তমানে বসবাস করছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র বলছে, বড় বড় পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকেও রাহাত বিপুল অঙ্কের অর্থ নিচ্ছেন এবং বিনিময়ে ছাত্রলীগ নামধারী কর্মীদের নিয়ে ঝটিকা মিছিল করাচ্ছেন।
ছাত্রশিবিরের এক সিনিয়র নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“রাহাত সিকদারকে আমরা আমাদের সংগঠনের আনুষ্ঠানিক কর্মী হিসেবে চিনি না। যদি কেউ ছাত্রশিবিরের নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করে, দল অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”
অন্যদিকে পুলিশের একটি শীর্ষ সূত্র জানায়,“আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তবে এখনো নিশ্চিত প্রমাণ হাতে আসেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
চট্টগ্রামে বারবার ঝটিকা মিছিল ও মশাল মিছিলের ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। স্থানীয়ভাবে অভিযোগ উঠছে—ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় একটি পরিবার ও তার প্রভাববলয় এই অস্থিরতার পেছনে কাজ করছে। তবে প্রশাসন ও দলীয় নেতৃত্ব এ বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই ঝটিকা মিছিলে কার ইঙ্গিত, কার অর্থায়ন আর কার ছত্রচ্ছায়া কাজ করছে?