ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন ছিলেন, দেশের ইসলামপন্থী রাজনীতিকদের মধ্যে ব্যতিক্রম একজন মানুষ। দেশ ও মানবতার স্বার্থই ছিল তার আরধ্য।
দেশের সব জাতীয় রাজনীতিক এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। তিনি গণমুখী ইসলামী রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন।
বলিষ্ঠ কণ্ঠে অনলবর্ষী বক্তৃতা করতেন। জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠতেন ছাত্রজীবন থেকেই। তাঁর বহু কালজয়ী বক্তৃতা আমাদের জাতীয় সম্পদ হয়ে আছে। তিনি এদেশের জাতীয় রাজনীতিতে বেঁচে আছেন একজন অনুকরণীয় জননেতা হয়ে।
তিনি আলীয়া মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের অধিকার বাস্তবায়ন এবং শিক্ষামান উন্নয়নের জন্য তরুন বয়স থেকেই কাজ করেছিলেন।তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্তশাসন লাভ করেছিল।
হাফেজ্জি হুজুরের (রহ.) হাত ধরে দেশের জাতীয় রাজনীতিতে অভিষেক হলেও এটিএম হেমায়েত উদ্দিন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শুরু থেকেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমীর মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.) পীর সাহেব চরমোনাইর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে এটিএম হেমায়েত উদ্দিন জননেতা হয়ে দেশের জাতীয় রাজনীতিতে নিজের জায়গা করে নেন যুবক বয়সেই।
মাতবতাবাদী হেমায়েত উদ্দিন দেশের বিভিন্ন সময়ের প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ মানুষের সুবিধা অসুবিধায় ঝাপিয়ে পড়তেন। ত্রাণের বস্তা নিজের মাথায় নিয়ে ছুটে যেতেন অসহায় মানুষের দারে দারে। যা আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সকল আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। ইসলাম, দেশ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার বাস্তবায়নের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির পক্ষে সব সময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
তিনি সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠে দেশের এবং মানুষের স্বার্থে সব সময় বলিষ্ঠ ভাষায় কথা বলতেন। ঢাকাবাসীর অধিকার আদায়ে অধ্যাপক হেমায়েত উদ্দিন সর্বদা সোচ্চার ছিলেন।
মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন খেটে খাওয়া, মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। দেশের কৃষক মজুর জেলে তাতীসহ সব শ্রেণী পেশার মানুষকে আপন করে বুকে টেনে নিতেন তিনি।
৬৪ বছর বয়সী মহান ব্যক্তিত্বের ইহজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে গত বছরের (২০১৯) ১১ অক্টোবর। তিনি দেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রসিদ্ধ ও অনুকরণীয় ব্যক্তি হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। শাসক শ্রেণীর ক্ষমতার মোহ এবং নতজানু বিদেশনীতির তীব্র সমালোচনা করতেন তিনি। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে ছিলেন আপোষহীন ছিলেন এটিএম হেমায়েত উদ্দিন।
আজকের এই দিনে আমরা প্রেজেন্ট নিউজ পরিবার মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন রহ. কে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। মহান আল্লাহ্ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সুউচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন।