মুহাম্মদ খালিদ হোসাইন: বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং সদর এ ৯১ পরবর্তী সময় থেকে মুজিবুর রহমান সরোয়ার (যুগ্ম মহাসচিব, জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি) ২০০৮ পর্যন্ত একক প্রভাব ছিল। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু ২০০৮ পরবর্তী তে বরিশালে রাজনীতির পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
দক্ষিণ অঞ্চলের রাজনীতির আরেক প্রভাবশালী সেরনিয়াবাত পরিবার বরিশাল শহরে ও প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা শুরু করে, যদি দক্ষিণ বঙ্গের আওয়ামী লীগের মূল ধারক ও বাহক এই পরিবার।
পাশাপাশি ২০০০ সাল থেকে বরিশাল এর রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করে পীর সাহেব চরমোনাই বা পীর পরিবার।২০০১ সালে ইউপি চেয়ারম্যান থেকে তাদের রাজনীতি শুরু হয়।মূল অবস্থান ও লক্ষ্য করা যায় ২০০৮ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।দ্বিতীয় পীর তথা মুফতি ফয়জুল করীম সাহেবের মূলধারার রাজনীতিতে উপস্থিতি জনসাধারণ এবং গণমাধ্যমের আকর্ষণ করে।
অর্থাৎ ২০০৮ পরবর্তী তে বরিশালের রাজনীতিতে ৩ টা প্রভাব বলয় সৃষ্টি হতে শুরু হয়। সরোয়ার ভাইয়ের শক্তিহ্রাস পীর পরিবার ও সেরনিয়াবাত পরিবার এর শহরমুখী আগ্রাসন। এরমধ্যে হিরণ ভাই (সেরনিয়াবাত এর স্নেহ ধন্য) সদর আসনের সাংসদ নির্বাচিত হয়ে যায়,কিন্তু সিটি নির্বাচনে আবারও সরোয়ার সমর্থিত কামাল ভাই মেয়র হয়।অর্থাৎ আওয়ামী ও বিএনপি সমতা সৃষ্টি হয়।
এদিকে পীর পরিবার আস্তে আস্তে আগাতে শুরু করে। তাদের জাতীয় রাজনীতির প্রভাব বরিশালে ও পরতে শুরু করে। ২০১৪ নির্বাচনে বিএনপি এবং পীর পরিবার অংশ না নেওয়ায় সেরনিয়াবাত পরিবার আরও একধাপ এগিয়ে যায়।
সর্বশেষ ২০১৮ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সিটি নির্বাচনের সময় বরিশালের রাজনীতি তিন ধারায় বিভক্ত এটা স্পষ্ট হয়ে যায়।সিটি নির্বাচনে পীর পরিবার মনোনীত প্রিন্সিপাল মাহবুব, সাদেক সেরনিয়াবাত ও সরোয়ার ভাইয়ের শক্তি পরীক্ষা হয়।প্রশাসন আর সরকারের কাছে সরোয়ার ভাই এবং প্রিন্সিপাল মাহবুব যৌথ ভাবে হেরে যায়।সাদেক যেহেতু শেখ হাসিনার ভ্রাতুষ্পুত্র তাই মেয়র হওয়ার পরে তার প্রভাব প্রতিপত্তির সেচ্ছাচারী আচারণ স্বয়ং ফুফু ও আস্থা হারায়।গোটা বরিশাল শহরে এক ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে।
আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও মুফতি ফয়জুল করীম ও সরোয়ার ভাই রাতের ভোটে হেরে যায়,জাহিদ ফারুক শামীম (সাবেক সেনা কর্মকর্তা,বাহাউদ্দীন নাসিম, আমু সমর্থিত) নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়।
এরপর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পীর পরিবার এর ৩/৪ জন ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যায়।কিন্তু সেরনিয়াবাত পরিবার এর কারণে জাহিদ ফারুক শামীম (নৌকার এমপি)কোনঠাসা হয়ে যায়। ফলে নিজেদের ভিতর মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।
ফলে ২০২৩ এর সিটি নির্বাচনে সাদেক মনোনয়ন বঞ্চিত হয়,প্রতীক পায় ফারুক সমর্থিত খোকন সেরনিয়াবাত (সাদেক এর চাচা)এদিক বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বললেও সাবেক মেয়র কামাল ভাইয়ের ছেলে রূপম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে অপরদিকে পীর পরিবার থেকে পীরের ছোট দুই ভাইয়ের একজন অর্থাৎ মুফতি ফয়জুল করীম ও চরমোনাই ইউনিয়নের সাবেক ২ বারের চেয়ারম্যান মুফতি আবুল খায়ের। আগামী ২৭ তারিখ ঘোষণা করা হবে যে কোনো একজন কে।
তবে রূপম রাজনীতিতে তেমন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন না,আবার পীর পরিবার এর আবুল খায়ের সাহেব কে সিটি নির্বাচনের মূল প্রভাব কতটুকু রাখতে পারে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যদিও আবুল খায়ের সাহেব কে মেয়র পদের জন্য স্টকে রাখা হয়েছিল। তবে মুফতি ফয়জুল করীম হলে, খোকন সেরনিয়াবাত এর সাথে পীর পরিবার এর মূল ভোটযুদ্ধের আভাস পাওয়া যাবে।
পীর পরিবার ও সেরনিয়াবাত পরিবার এর মধ্যে কারা থাকবে নগরী নিয়ন্ত্রণে তা হয়ত সিটি নির্বাচনেই দেশবাসী জানতে পারবে।
লেখক :
মোঃখালিদ হোসাইন আরাফাত, ছাত্র সংগঠক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
এস.আই/