মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল আওয়াল:
ইসলাম ধর্ম পাঁচটি ভিত্তির উপর স্থাপিত। এ গুলোর মধ্যে “যাকাত” অন্যতম ভিত্তি। এ সর্ম্পকে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّيَرْبُوَا۟ فِىْۤ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُوْا عِنْدَ اللّٰهِۚ وَمَاۤ اٰتَيْتُمْ مِّنْ زَكٰوةٍ تُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللّٰهِ فَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الْمُضْعِفُوْنَ
মানুষের ধনে বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া তোমরা যে সুদ দিয়া থাক, আল্লাহ্র দৃষ্টিতে তাহা ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত তোমরা দিয়া থাক তাহাই বৃদ্ধি পায়; উহারাই সমৃদ্ধিশালী। (সূরা আর-রূম, আয়াত নম্বরঃ ৩৯)
আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার ১১০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন:
وَاَقِيْمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّکٰوةَ ؕ وَمَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ
তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও। তোমরা উত্তম কাজের যাহা কিছু নিজেদের জন্য পূর্বে প্রেরণ করিবে আল্লাহ্র নিকট তাহা পাইবে। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তাহার দ্রষ্টা।
(সূরা বাকারা, আয়াত নম্বরঃ ১১০)
সূরা নিসার ১৬২ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য “আজরুন আযীম”-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে:
لٰـكِنِ الرّٰسِخُوْنَ فِى الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَالْمُؤْمِنُوْنَ يُـؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَالْمُقِيْمِيْنَ الصَّلٰوةَ وَالْمُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ اُولٰٓٮِٕكَ سَنُؤْتِيْهِمْ اَجْرًا عَظِيْمًا
কিন্তু তাহাদের মধ্যে যাহারা জ্ঞানে সুগভীর তাহারা ও মু’মিনগণ তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ করা হইয়াছে এবং তোমার পূর্বে যাহা অবতীর্ণ করা হইয়াছে তাহাতেও ঈমান আনে এবং যাহারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্ ও পরকালে ঈমান রাখে, আমি উহাদেরকে মহাপুরস্কার দিব। (সূরা আন নিসা, আয়াত নম্বরঃ ১৬২)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ما من صاحب ذهب ولا فضة لا يؤدي منها حقها إلا إذا كان يوم القيامة صفحت له صفائح من نار فأحمى عليها في نار جهنم فيكوى بها جنبه وجبينه وظهره كلما بردت أعيدت له في يوم كان مقداره خمسين ألف سنة حتى يقضي بين العباد. رواه مسلم
“যে সকল সোনা-রূপার মালিকগণ তাদের সম্পদ থেকে নির্ধারিত হক আদায় করে না” কিয়ামত দিবসে তার জন্য কতগুলো আগুনের পাত প্রস্তুত করে তা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা ঐ লোকদের ললাট ও পিঠে চেপে ধরা হবে, তাপ কমে গেলে উত্তপ্ত করে পুনরায় চেপে ধরা হবে। পঞ্চাশ হাজার বছর দীর্ঘ সময় বান্দাদের হিসাব-নিকাশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে শাস্তি চলতেই থাকবে। (মুসলিম : ৯৮৭)
যাকাত আদায়ের ব্যাপারে আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা যাকাত দেয়া ফরয করেছেন যেন তোমাদের অবশিষ্ঠ সম্পদকে নির্দোষ বা নির্বিঘ্ন করে দিতে পারেন’। (আবু দাউদ শরীফ)।
যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ :
পবিত্র করা, পরিশুদ্ধ করা বা প্রবৃদ্ধি দান করা। শরিয়তের ভাষায়, সুনির্ধারিত সম্পদ সুনির্ধারিত শর্তে তার হকদারকে অর্পণ করা। এক কথায় কোনো মুসলমান আল্লাহ নির্ধারিত (নিসাব) পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এবং তা এক বছর পর্যন্ত তার কাছে থাকলে শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত পরিমান সম্পদ মুসলমান গরীবকে আল্লাহর ওয়াস্থে পুরোপুরি মালিক বানিয়ে দেয়াকে যাকাত বলে।
ধনি সম্পদশালী ব্যাক্তিরা মনে করেন যে যাকাতের দ্বারা সম্পদ কমে যায় তা নিছক ভুল ধারণা। কেননা আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ওয়াদা করেছেন যে, যাকাত আদায়ের ফলে তিনি বান্দার সম্পদ দ্বিগুন করে দিবেন।
যে সমস্ত সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে:
১. স্বর্ণ, যার নেসাব হল সাড়ে ৭ তোলা।
২. রুপা, যার নেসাব হল সাড়ে ৫২ তোলা।
৩. ব্যবসায়িক পণ্য, যে পন্যটি ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসা করার উদ্দেশ্য থাকে। এ জাতীয় পণ্যের বিক্রয় মূল্য যদি রুপার নেসাবের সমান বা বেশি হয় তাহলে তার উপর যাকাত আসবে।
৪. নগদ অর্থ, রুপার নেসাব পরিমাণ হলে বা তার থেকে বেশি হলে এর উপর যাকাত আসবে।
সারাবছর জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের পর এবং যদি ঋণ থাকে তাহলে ঋণ পরিশোধ করে বছর শেষে কারোর কাছে নেসাব পরিমাণ সোনা-রুপা, ব্যবসার মাল, অথবা নগদ অর্থ থাকে তাহলে তার সম্পদের ৪০ ভাগের একাংশ যাকাত দিতে হবে।
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল আওয়াল
ইমাম ও খতিব (রহেলাপুর দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন জামে মসজিদ, সদর যশোর)