মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন আশঙ্কা করছেন, যদি এখনি ইরানের রাশ টেনে ধরা না হয় তাহলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পারমানবিক বোমা তৈরি করতে পারে ইরান। অন্যদিকে একই সতর্কবার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক অ্যানার্জি এজেন্সি (আইএইএ)।
সংস্থার মহাসচিব রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি অভিযোগ করে বলেছেন, ইরানের পরমানু কর্মসূচীর ব্যাপারে অন্ধকারে রয়েছে আইএইএকে। এমনকি সংস্থার কোনো প্রশ্নেরও জবাব দিচ্ছে না। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইএইএ’র মহাসচিবের হুঁশিয়ারি উড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তেহরানের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনে যাবে না বলে জানিয়েছে তারা। পরমাণু চুক্তি সচলকরণকেই সবার জন্য মঙ্গল বলে মনে করছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে পরমাণু চুক্তিতে ফেরাতে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর একটি আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। গত ২ জুন পঞ্চম দফার আলোচনার পরও কোনো ধরনের সমাধান মেলেনি। এখন ষষ্ঠ দফার আলোচনার অপেক্ষা করছে উভয়পক্ষ। আগামী বৃহস্পতিবার ফের বৈঠক বসার কথা রয়েছে।
এর মধ্যেই গায়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভোটে জিতে কট্টর কেউ প্রেসিডেন্ট হয়ে এলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার মার্কিন কংগ্রেসে আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ইরান ফিরে আসবে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি জারি রয়েছে।
ইরান এখন একটি পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে কয়েক মাস দূরে। যদি কর্মসূচিটি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে শিগগিরই তারা কয়েক সপ্তাহের দূরে চলে আসবে।’ একইদিন ভিয়েনায় আইএইএ’র বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের এক সভায় সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি বলেন, ইরানের কাছে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত যেসব তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারে তারা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না।
এতে তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ কি না সেটি নিশ্চিতে আইএইএ’র প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে আইএইএ’র এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে তেহরান। ভিয়েনায় নিযুক্ত ইরানের প্রতিনিধি কাজেম গরিবাবাদি বলেছেন, তার দেশের বিষয়ে আইএইএ সম্প্রতি যে অগঠনমূলক অবস্থান নিয়েছে তা এই সংস্থা এবং ইরানের মধ্যকার যোগাযোগকে অচলাবস্থার মধ্যে ফেলে দিতে পারে।
২০১৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে ইরান ও বিশ্বের প্রভাবশালী ছয় দেশ এক চুক্তিতে সম্মত হয়। এ চুক্তির আওতায় পরমাণু সমৃদ্ধিকরণের মাত্রা কম রাখতে রাজি হয় তেহরান।
এ ছাড়া ইরানের পরমাণু স্থাপনায় নিয়মিত পরিদর্শনের সুযোগ পায় আন্তর্জাতিক মহল তথা আইএইএ। তার পরিবর্তে ইরানের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের চাপানো কড়া শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সম্মত হয়।
কিন্তু ২০১৮ সালে ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামের ওই চুক্তিটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জোরালোভাবে দাবি করে বলেন, ‘পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা থেকে তেহরানকে আটকাতে এ চুক্তি যথেষ্ট না।’ ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়ে তেহরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ জোরদার করেন।
এন.এইচ/