প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশটা কীভাবে চলবে, কীভাবে উন্নত হবে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য কীভাবে পরিবর্তন হবে- আমরা সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দিই। অন্যের পরামর্শ নিয়ে আমরা চলি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের দিকে তাকায়নি। অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে, ক্ষমতাকে তারা ভোগের বস্তুতে পরিণত করেছিল। নিজেদের আর্থিক সচ্ছলতা করা, দুর্নীতিটাকে তারা নীতি হিসেবে নিয়েছিল। আর বাংলাদেশের সব মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলা এবং আমরা যে বিজয়ী জাতি, বিজয়ী জাতি হিসেবে যে মর্যাদা সেই মর্যাদাটুকু ভূলুণ্ঠিত করেছিল এবং পরাজিত শত্রুরই পদলেহন করত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত নতুন রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অল্প খরচে যোগাযোগ স্থাপন ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে গোটা দেশকে রেল যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসছি। আমরা সমগ্র দেশে রেল যোগাযোগের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এমনকি যেসব এলাকায় রেল নেই সেসব এলাকায় আমরা রেলসংযোগ দিয়ে দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে রেল যোগাযোগে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এমনকি যেসব এলাকায় রেললাইন নেই সেসব এলাকায়ও রেল সহযোগিতা দিয়ে দিচ্ছি। যেন পণ্য পরিবহন ও ব্যবসাবাণিজ্য সমৃদ্ধ করা যায়। যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষ যেন সহজে চলাচল করতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যমুনা নদীর ওপর আরেকটি ডেডিকেটেড রেলসেতুরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। সেটার কাজ আমরা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেনলাইন করার চিন্তা-ভাবনা সরকারের আছে। তবে আমাদের দেশের মাটি কতটা স্পিড লোড নিতে পারবে তার ওপর নির্ভর করে, স্টাডি করে সেটা আমরা করব।
তিনি বলেন, আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি, সেখানে রেললাইন করছি। পদ্মাসেতু পার হয়ে ভাঙ্গা দিয়ে একদিকে যশোর হয়ে খুলনা এবং অপরদিকে সোজা বরিশাল হয়ে একেবারে পায়রা নতুন নৌবন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেই পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বরিশাল বিভাগকে এক সময় বলা হতো বাংলার ভেনিস। অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল- সেখানে রেললাইন করার চেষ্টা করে ব্রিটিশরাও পারেনি। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, স্টাডি চলছে। সমগ্র বাংলাদেশকে রেলওয়ের আওতায় নিয়ে আসছি।
স্বল্প ব্যয়ে আম পরিবহনের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকা রুটে চালু হলো ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ চলাচলের উদ্বোধন করেন।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে জ্যৈষ্ঠ মাস মধুমাস হিসেবে পরিচিত এবং এ মাস বাঙালির প্রিয় ফল আম উৎসবের মাস উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে তার বক্তব্যে বলেন, উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। আমের মৌসুমে উত্তরবঙ্গের চাষীদের উৎপাদিত আম সাশ্রয়ী ভাড়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহনের জন্য ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এতে আমচাষী ও ব্যবসায়ীগণের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে এবং সহজে কৃষিপণ্য বাজারমুখী করার পথ প্রশস্থ হবে, অন্যদিকে ভোক্তাদের সুলভ মূল্যে আম ক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সুত্র জানায়, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনে খরচ পড়বে মাত্র ১ টাকা ১৭ পয়সা। যেখানে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতি কেজি আম পরিবহনে খরচ পড়ছে ২০ টাকার মতো।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ম্যাংগো স্পেশাল বিশেষ এই ট্রেন প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করবে। ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে বিকেল সাড়ে ৪টায় ছাড়বে। ট্রেনটি রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এবং ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছবে রাত ২টায়। আম নামিয়ে রাতেই ট্রেনটি আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাবে।
মালামাল তোলার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ, আমনুরা, রহনপুর, কাঁকন, রাজশাহী, হরিয়ান, সরদাহ, আড়ানী, আবদুলপুর স্টেশনে থামবে বিশেষ এ ট্রেন। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের পাঁচটি ওয়াগনে (পণ্যবাহী বগি) পণ্য পরিবহন করা হবে। প্রতিটি ওয়াগনে ৪০ টন করে মোট ২০০ টন পণ্য পরিবহন করা যাবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত নতুন রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পেরও ভিত্তিপ্রস্থর উদ্বোধন করেন।
রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন মাগুরা রেলষ্টেশন থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। রেল সচিব সেলিম রেজা স্বাগত বক্তব্য দেন। সূত্রঃ যুগান্তর