ভাস্কর্য ইস্যুতে দেশের রাজনীতির মাঠ গরম, সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ভাস্কর্য ইস্যুতে তার অভিমত ব্যক্ত করেন।
এসময় তিনি বলেন, “ভাস্কর্যের বিষয়টা হঠাৎ করে সামনে এসেছে এমনটা নয়। কিন্তু ভাস্কর্য ইস্যু একেবারে সমস্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু বা রাজনীতির আলোচনায় শুধুমাত্র ভাস্কর্য, এ বিষয়টা আমার কাছে ভালো মনে হচ্ছে না। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশে যারা স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় থাকে, তারা জনগণের দৃষ্টিকে অনেক খাতে প্রবাহিত করার জন্যে নানান ইস্যু তৈরি করে। যেমন কয়েক বছর ধরে জঙ্গিবাদের আলোচনা চলছে, যেখানে কোথাও পরিকল্পিত, কোথাও বা সরকারি নাটক ছিল; প্রমাণিত হয়েছে, মিডিয়ায়ও এসেছে। সেই ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে সরকার পশ্চিমা দেশের সাপোর্ট নেয়ার জন্যে নাটক সাজাচ্ছে।”
“এইভাবে সরকার যখন সিরিয়াস ইস্যুতে আলোচনায় থাকে, দেশের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকে। সে সময় সরকার নানাভাবে প্রভাবিত করার জন্যে বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে,” তিনি যোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, “যেমন এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আলোচনাগ ছিল একটা মধ্যবর্তী নির্বাচন, বা কেউ কেউ বলছেন একটা ফ্রেশ ইলেকশন। করোনাকালীন সময়ে সরকারের যে দুঃশাসন, দুর্নীতি ও লুটপাটের যে চিত্র, জাতির সামনে উঠে আসলো যে প্রতি বছর ৬৫ হাজার কোটি টাকা প্রাচার হয়। যা দিয়ে দুইটা পদ্মা সেতু করা সম্ভব। ঠিক সে সময় মানুষের মানুষের চিন্তা ডাইভার্ট করার জন্যে বিভিন্ন মিডিয়ায়, টকশোতে পদ্মা সেতুর স্পেন বসানোর আলাপ চলছে। হাজার কোটি টাকা যে প্রাচার হচ্ছে, ওইদিকে জনগণের খেয়াল নাই। গত সাত বছরে প্রাচার হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা।”
তিনি হেফাজত প্রঙ্গসে বলেন, “আমার কাছে মনে হয়েছে ভাস্কর্য ইস্যুতে, হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। দলমত নির্বিশেষে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা পেয়েছে। ২০১৩ সালে তাদের উপর যে দমন পীড়ন হয়েছিল, অনেকেই ভেবেছিল, হেফাজত বোধহয় শেষ হয়ে যাবে। তাদের একটা অংশ আবার সরকারের সংগে আপোষ করেছ…। তবুও যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার, নীতিনৈতিকতার সঙ্গে আপোষ করেন নি, তারা নতুন কমিটি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছেন। আর এটাই সরকারের জন্যে মাথা ব্যথার কারণ। তাই সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছেন, তাদেরকে বিতর্কিত করার জন্যে।”
ভাস্কর্য ইস্যুতে হেফাজত ও সরকার দু-পক্ষ সংঘাতে যেতে চান না ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “হেফাজত নেতৃবৃন্দ প্রথম দিকে কড়া বক্তব্য দিলেও, যাত্রাবাড়ি সম্মেলনের পর তাদের সুর একটু নরম হচ্ছে, তারা নমনীয় হচ্ছেন। সরকার নিজে সম্মুখে না এসে তার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন গুলো মাঠে নামাচ্ছে। সর্বশেষ ওবাইদুল কাদের বলেছেন, তারা মাথা গরম করতে চায় না। কারও সাথে সংঘাতে যেতে চায় না। হয়ত এমন হতে পারে যে তারা হেফাজতের প্রতি একটু নমনীয় হচ্ছে। হেফাজতের নেতারাও ছাড় দিচ্ছে। সেইটা আমার দৃষ্টিতে খারাপ না। কারণ বাংলাদেশ ইসলামিক রিপাবলিক কোনো কান্ট্রি না যে, এখানে সমস্ত আইন কানুন কোরআন হাদীস অনুসারে হবে। তাই আলেমওলামারা দাবি দাওয়ার মধ্যে যতটুকু আদায় করতে পারে, এবং সরকারও যতটুকু সম্ভব মেনে নিতে পারে, ভালো। কিন্তু মারমার-কাটকাট ধরনের মুখোমুখি অবস্থানের মাধ্যমে সম্ভব না। তাই দুপক্ষের নমনীয়তা, এইটা উভয়ের জন্যের মঙ্গলজনক হয়েছে।”
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি ভাস্কর্যের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিতে চান না। তবে, তিনি সবার মতকেই সম্মান করেন।