মুহাম্মাদ ফরহাদ মোল্লা ,খুলনা প্রতিনিধি: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হরি ও ভদ্রা নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদে নির্দেশ অমান্য করায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মনিরুজ্জামান তালুকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
রুলে ডিসি মনিরুজ্জামান ছাড়াও অন্য বিবাদীরা হলেন- পুলিশ সুপার মাহবুব হাসান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মেন্টেইন্যান্স ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান, ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) চেয়ারম্যান ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এইচআরপিবির পক্ষে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ রায়।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর হরি ও ভদ্রা নদীর দুই তীরে ১৪টি অবৈধ ইটভাটাসহ সব অবৈধ স্থাপনা ৬০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশ প্রতিপালন না করায় আদালত অবমানার অভিযোগ দায়ের করে এইচআরপিবি। সেই অভিযোগের শুনানি নিয়ে আদালত আজ রুল জারি করেন।
গত বছর এইচআরপিবির পক্ষে হরি ও ভদ্রা নদীর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা উচ্ছেদে জনস্বার্থে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে হরি ও ভদ্রা নদীর সীমানায় সিএস, আরএস রেকর্ড অনুসারে জরিপ করে দখলদারদের তালিকাসহ ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে খুলনা জেলা প্রশাসন ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন।
কমিটিতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খুলনা পওর বিভাগ-১, পাউবো খুলনাকে আহ্বায়ক এবং সার্ভেয়ার, খুলনা পওর বিভাগ-১, ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এবং বটিয়াঘাটা উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে যৌথভাবে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
এছাড়াও সিএস/আরএস নকশা অনুসারে জরিপের মাধ্যমে ভদ্রা ও হরি নদীর সীমানা নির্ধারণ করে ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে খুলনার ডিসি ও ডুমুরিয়ার এসি ল্যান্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেছেন। রুলে ভদ্রা ও হরি নদীর জায়গা দখল করে মাটি ভরাট, স্থাপনা ও বাঁধ নির্মাণ এবং ইটভাটা পরিচালনা বন্ধ ও অপসারণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ভরাট করা মাটি, স্থাপনা অপসারণে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
জাতীয় সংসদের খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার, পানি সম্পদ ও পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালক (খুলনা), খুলনার জেলা প্রশাসক ও এসপি, ডুমুরিয়ার সদর উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
খুলনার দুটি নদী ভরাট নিয়ে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এ রিট আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এরপর জেলা প্রশাসক ২০২১ সালের অক্টোবরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার এক সময়ের প্রবাহমান নদী ভদ্রা এখন একটি সরু খালে পরিণত হয়েছে। এজন্য দায়ী নদীর জমি দখলকারী ইটভাটাগুলো, যেগুলো চালাচ্ছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। খারনিয়া ইউনিয়নের ভদ্রা নদীর তীরের চার কিলোমিটার দীর্ঘ জায়গা দখল করে রাখা ইটভাটাগুলোও রয়েছে। যে ইটভাটাগুলোর মালিকদের মধ্যে একজন সংসদ সদস্য, উপজেলার ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও রয়েছেন।