পদ্মা-যমুনার ভাঙনরোধে প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যমুনা ও পদ্মা নদী তীরবর্তী ভাঙনকবলিত জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে।
‘ফ্লাড অ্যান্ড রিভারব্যাংক ইরিশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের’ আওতায় এই ঋণ দেবে দেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৭৮১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন ৩১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্রকল্প সাহায্য ও অনুদান থেকে আসবে ১ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০২১ হতে জুন ২০২৫ পর্যন্ত (৪ বছর)।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, বন্যা ও ভাঙন আমাদের অন্যতম সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। বন্যা আমাদের দেশে অন্যতম সমস্যা। পদ্মা ও যমুনা নদীর ভাঙনরোধে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে এডিবি ঋণ দেবে ১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং নেদারল্যান্ডস সরকারের অনুদান সহায়তা ১০৩ কোটি টাকা।
প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে নদীপাড়ে কাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি। সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বন্যা এবং নদীতীর ক্ষয় প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। প্রকল্প এলাকায় নদী তীরের ভাঙনরোধ এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমন্বিত কাঠামোগত এবং অ-কাঠামোগত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম ৩০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ৪০ কিলোমিটার এডাপটেশন ওয়ার্ক, ৬ কিলোমিটার ইমার্জেন্সি ওয়ার্ক, তিন কিলোমিটার বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ, একটি অফটেক ম্যানেজমেন্ট ওয়ার্ক উইথ স্ট্রাকচার, ২টি পাইলট ল্যান্ড রিকভারি/ ড্রেজিং উইথ ক্লোজার সংগ্রহ করা। এছাড়া দুটি রেগুলেটর/ফিসপাস নির্মাণ, ১২টি মৎস্য অভয়াশ্রম উন্নয়ন এবং ১০২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ। ইতোমধেই পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, বাংলাদেশের প্রধান ৩টি নদীর (যমুনা, মেঘনা ও পদ্মা) ভাঙনরোধকল্পে উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় গত ২০০২ থেকে ২০১১ মেয়াদে ‘যমুনা মেঘনা রিভার ইরিশন মাইটিগেশন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হয়। এই প্রকল্পের অধীন যমুনা ও মেঘনা নদীর ভাঙনকবলিত ২৮ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার অংশে নদীতীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন করা হয়, যেখানে সম্পূর্ণ নতুন এবং ব্যয় সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ৩০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাবদ মোট ব্যয় ৬১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। প্রতি মিটার বাবদ ২ লাখ ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল স্টাডি ও ব্যথেমেট্রিক সার্ভের মাধ্যমে বিস্তারিত ডিজাইনের ভিত্তিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। নদী তীর সংরক্ষণ কাজের পর কি কি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা পাবে ছক আকারে তার তালিকা ডিপিপিতে সংযুক্ত করা যেতে পারে। এছাড়া নদী তীর সংরক্ষণ কাজের চেইনেজ, স্থান (জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন), নকশা ও এ কাজে ব্যবহৃত মেটেরিয়ালের বিস্তারিত বিবরণ ডিপিপিতে উল্লেখসহ এ খাতে ব্যয় হালনাগাদ রেট সিডিউল অনুযায়ী যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করার বিষয়ে সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
অনুরূপ ব্যয় সাশ্রয়ী ও টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের প্রধান প্রধান নদীসমূহের ভাঙ্গনকবলিত অংশে নদীতীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাপান সরকারের আর্থিক অনুদানে ২০১২ সালের জুন থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এডিবি নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে এডিবি প্রকল্পে ৫৫২ কোটি টাকা এবং নেদারল্যান্ডস সরকার ১২৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। গত ১৪ আগস্ট ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশ সরকারের সাথে একটি ঋণ/অনুদান চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি মোতাবেক এপ্রিল ২০১৪ থেকে জুন ২০২১ মেয়াদ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
একই সমীক্ষার আলোকে ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকার প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩১৩ কোটি টাকা। প্রকল্প সাহায্য ১ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে এডিবি ঋণ ১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং নেদারল্যান্ডস সরকারের অনুদান সহায়তা ১০৩ কোটি টাকা।
প্রকল্পের আওতায় ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (বৈদেশি প্রশিক্ষণ) বাবদ ৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ও ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে ( স্থানীয় প্রশিক্ষণ ) বাবদ ১ কোটি কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। বর্তমান কোভিড -১৯ পরিস্থিতিতে প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ব্যয় বরাদ্দ হ্রাস করে ১ কোটি কোটি টাকা ও স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাবদ ব্যয় ৭০ লাখ টাকার মধ্যে সীমিত রেখে প্রশিক্ষণের বিষয়, প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা, প্রশিক্ষণার্থীর কর্মরত মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থা ওয়ারী বিভাজন ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) উল্লেখ করার বিষয়ে সুপারিশ করেছে কমিশন।