শুক্রবার | ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | রাত ২:০৮

শুক্রবার | ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | রাত ২:০৮

রক্তাক্ত হেফাজত: দায় ও ভূমিকা এবং রাজনীতির রাজনীতি -জিয়া আল হায়দার

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram
  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৫:০২ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ
  • বিকাল ১৫:৩৬ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৭:১৫ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৮:৩১ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

এবার জরুরী একটা কথা বলি। পরিস্থিতি শান্ত হওয়া পর্যন্ত এ কথাটা বলিনি।

ইসলামপন্থীরা আমাকে বহু আগ থেকেই বয়কট করেছে। তাদের কথা হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক আরও আস্তে দিতে হবে। আমি তো মনে করি, তাদের নিয়মিত অপারেশন দরকার এখন। এটা আমার আপনার এবং জাতির স্বার্থে।

পাবলিকরে ম্যানুপুলেট করবেন কিন্তু পাবলিকলি কোশ্চেন ফেইস করবেন না; এই রাজনীতি পাইছেন কই?

হোয়াটএভার তাদের কাছে আমার গ্রহনযোগ্যতা কমছে কি বাড়ছে এটা আমার কাছে বিবেচ্য ব্যাপার না। আমার দায়বদ্ধতা আমার বিবেকের কাছে। সততার কাছে।

কে কিভাবে নিবে এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তির অধিকার।কাজেই এটাকে আমি তাদের হীনমন্যতাও বলবো না। আগেই বলে নিই, যে কোন ঘটনার নানা ডাইমেনশন থাকতে পারে। বিশ্লেষকদেরও দেখার দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন মতামত থাকতে পারে। আমি আমার মন্তব্যকেই নির্ভুল মনে করি না এবং অন্যদেরকে খারিজ করি না।

নরেন্দ্র মোদির আগমন নিয়ে জনমনে সর্বপ্রথম ক্ষোভের লাভা জ্বেলেছে মাওলানা মামুন ভাই এবং মুফতি ফয়জুল করীম।

মামুন ভাইতো ঘোষণা দেছেন “মোদি আসলে কেয়ামত কায়েম হবে।” সেন্টিমেন্ট জাগিয়ে তুলে শেষতক হেফাজত এবং আন্দোলন প্রশাসনের কঠোর চাপে নতি স্বীকার করে ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি থেকে সরে আসে। আমি সাথে সাথে এটাকে সমালোচনা করেছি। এবং এটিকে একটি ‘ট্রাম্প কার্ড’ আখ্যায়িত করে ইসলামী আন্দোলনকে পূর্বাভাস দিয়েছিলাম এটা নিয়ে টেকনিক্যালি খেলতে হবে। আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে পীর চরমোনাই’র দল মান ইজ্জত রক্ষা করলেও প্রশাসনকে উপেক্ষা করার হিম্মতহীন ছিল। হেফাজত-আন্দোলন দুইয়ে মিলে মোদীর ট্রাম্পকার্ড সরকারের হাতে তুলে দিল।

ফলে ইসলামপন্থীদের তৈরি করা এই ট্রাম্প কার্ড নিয়ে সরকার খেলতে শুরু করলো।
আন্দোলন-হেফাজত লোকদেখানো একটা কর্মসূচি দিয়ে হলেও তাদের নিজেদের সৃষ্টি করা জনক্ষোভকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে সাংগঠনিকভাবে প্রশমিত করা দরকার ছিল। আমি সেটাই বলতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু সরকার সেটি দেয়নি। সরকার এঁকেছে ভিন্ন একটা ছক। সরকার যখন ডিসাইড করল মোদিকে যে কোনো মূল্যে আনবে। কারণ আগামী নির্বাচনে মোদি ছাড়া তার উপায় নাই। মোদিকে তার পরিপূর্ণ প্রভুভক্তি দেখাতে হবে। এজন্য তারা হেফাজত, আন্দোলনকে কঠোরভাবে নিবৃত্ত করল। সরকার জানতো সাংগঠনিক নেতৃত্বে আন্দোলন হলে সেটাকে সরকার সহজে রক্তাক্ত করতে পারে না। আবার এ দুই পার্টিকে সুযোগ দিলে এরা মাঠ গরম করে তুলবে।বাম ও মিডিয়া আগে থেকেই এন্টি মোদী মুডে আছে। জামায়াত বিএনপি যোগ দিলে দেশে সরকারের বিরুদ্ধে একপ্রকার ঐক্যবদ্ধ সর্বদলীয় জনমত গড়ে উঠবে। বিরোধী দলগুলো নড়েচড়ে চাঙ্গা হয়ে উঠবে। মোদি বিরোধী আন্দোলন মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার হবে। মোদীর নজরে পড়লে সে সফর বাতিল করতে পারে। আরো বড় ঝুঁকি হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত জোট যেহেতু ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী এজন্য তাদেরও মোদীকে প্রয়োজন, ফলে তারা সরাসরি দলীয়ভাবে মোদীর বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে নিজেদের মোদী সরকারের কাছে হাসিনার বিকল্প অনুগত হিসেবে প্রকাশ করার সুযোগ পাবে। এবং মোদীকে আনতে না পারার ব্যর্থতা সরকারের ঘাড়ে তুলে তারা মোদীএজেন্সীর কাছে ঘেঁষবে। মোদি বিরোধী আন্দোলন দেখে বলবে হাসিনার সরকারকে এদেরকে কন্ট্রোল করতে ব্যর্থ।কিন্তু এই জনগোষ্ঠীকে ‘ইসলামী মূল্যবোধ'(!) দিয়ে বিনা গুলিতে আমরা ঠান্ডা করতে জানি।

ফলে শেখ হাসিনা যেভাবে তার বিরোধী ট্রাম্পকার্ডগুলোকে দিনশেষে নিজেই খেলে দেয়; এখানেও ঠিক তাই হয়েছে।

হাসিনা জানতো মানুষ বিক্ষোভ করবে। এজন্য সে পুলিশ এবং তার বাহিনীকে আগেই মোতায়েন করে রেখেছে।আন্দোলনের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সম্ভাব্য কেন্দ্র হাটহাজারী এবং বিবাড়িয়াতে একইভাবে প্রশাসন ও গুন্ডাবাহিনী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বি বাড়ীয়াতে সাংসদ উবায়দুল মোকতাদির কে মুজিববর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠানে না রেখে তাকেই আওয়ামী যুবলীগের রাতের মিছিলের নেতৃত্বে রাখা হয়েছে। বিক্ষোভে বের হবার সাথে সাথে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এই লাশ দিয়ে মোদীকে স্বাগত জানানো হয়েছে। লাশ ও রক্ত মোদীর এমনিতেই পছন্দ। হাসিনা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রক্তপাতে যাওয়ার কারণ হলো হেফাজতকে কঠোর সহিংস কর্মসূচির দিকে ঠেলে দেয়া। হেফাজত এবং তাতে অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে গণ মামলা দিয়ে হেফাজতের সম্ভাব্য পুনরুত্থান ঠেকিয়ে দেয়া যাবে। সাধারণ মানুষের ধারণা, পরের দিন হরতালে কোথায় ভাঙচুর হবে, শিল্প সংস্কৃতি ও দলীয় নেতার বাসায় আক্রমণ হবে এসব পরিকল্পনা সাজিয়ে রাখা হয় সরকারের তরফেই। এরপর লীগ ও তার বন্ধুরা ছাড়া সবাইকে মৌলবাদী ভারতবিরোধী আখ্যায়িত করে একঘরে করা হবে। আনন্দ বাজারে শিরোনাম পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, “মোদীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানপন্থীদের তান্ডব।” কার্যত বাংলাদেশে কয়েকবছর ধরে ক্ষমতাসীনদের মতের বাইরে যারাই কথা বলছে নিয়মমত তারাই পাকিস্তানপন্থী রাজাকার।

ফলে মোদীর খালেদা অনুরাগ ঠেকিয়ে তাকে আরো আপন করে কাছে পেয়ে যায় হাসিনা। মোদীর সাথে পুরোটা সময় হাসিনা রেহানা দুই বোন মাথা নিচু করে যে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ভক্তি নিবেদন করেছে খুব ভালোভাবে তা লক্ষনীয়। দেশে সোসাল মিডিয়া বন্ধ করে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে এতগুলো লাশ ফেলে দেয়া হলো অথচ দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং মিডিয়া ছিল পুরাই নির্লিপ্ত এবং উৎসবে মাতোয়ারা। মনেই হয়নি দেশে কিছু হচ্ছে।‌
তারপর মিডিয়া ও সুশীলরা নিজেদের তৈরি করা‌ বয়ান হাজির করে নাগরিক হত্যাকে চতুরতার সাথে জাস্টিফায় করলো। সরকারের দিকে আঙ্গুল তোলা এইসব গণঅভিযোগ খন্ডন করতে সরকারের উচিত সমস্ত ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সরকারকে নির্দোষ প্রমান করা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আন্দোলন থেকে হেফাজতের সরে আসা তাহলে কি ঠিক‌ ছিল?

না। তারা বরং সরকারের ফাঁদে পা ফেলেছে। তাদের দরকার ছিল বিচ্ছিন্ন ক্ষোভ প্রকাশের সম্ভাবনা রোধকল্পে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচীর মাধ্যমে জনক্ষোভ লাগব করা। জনগণের ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রশমিত করা।

এটা কি তাদের দায় ছিল ?
অবশ্যই।‌কারন এই ক্ষোভের উৎপাদন তারাই করেছে।
তারা প্রশাসনকে উপেক্ষা করেও প্রোগ্রাম দিতে পারলে এই অনিয়ন্ত্রিত নেতৃত্বহীন ক্ষোভ এবং দুষ্কৃতকারীদের প্রাণহানির পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়া যেতো। কেননা দলের নেতৃত্বে সংগঠিত আন্দোলন হুজুগে নিয়ন্ত্রনের বাইরে যেতো না। পুলিশও নেতৃত্বের সাথে নেগোসিয়েশন ছাড়া গুলি ছুড়তো না।

এখন হেফাজত বাদ। তারা ঐ অর্থে কোন‌ গোছালো‌ সংগঠন না।
কিন্তু আমার মনে হয় পীর চরমোনাই’র ইসলামী আন্দোলন এই স্পর্শকাতর ইস্যুতে পর্যাপ্ত হোম ওয়ার্ক করেনি। তারা নির্বাচন ও আরো ইস্যুর সাথে বরিশাল থেকে ঢাকায় আগত আমীরের হাতে একটা রেডিমেট স্ক্রীপ্ট তুলে দিয়েছে। তিনি সেটা পড়ে শুনিয়েছেন।‌কিন্তু এটা নিয়ে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে রাজনীতি করা দরকার ছিল সেটা তারা করে নি। সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড্রেস না করে তড়িগড়ি উঠে যাওয়া তার প্রমাণ। আর সরে আসার প্রেস কনফারেন্সে আমীর কে শো করারও বা দরকার কি ছিল? এটা সচিবদের কেউ করলেও আরো ইজ্জত বাঁচতো। যাইহোক সরকারের অনড় অবস্থান টের পেয়ে মোদির আগমনকে তারা শেষদিকে খুব সিরিয়াসলি আলাদাভাবে দেখে নি। যদিও সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের দলীয় অবস্থান অনেক আপোষহীন এবং স্পষ্ট ছিল।তারা পরিষ্কারভাবে তাদের অনমনীয় বার্তা তুলে ধরতে পেরেছে।

এখানে আন্দোলনের নবনিযুক্ত উপদেষ্টাগণও তাদের দায় এড়াতে পারেন না। আমার এটাও ধারণা এই উপদেষ্টাদের নিয়ে ১ ঘন্টার একটা মিটিংও কল করা হয় নি। আদতে রাজনীতি বিজ্ঞানের মাসুম স্যার ছাড়া বাকিরা বড় মাওলানা হলেও রাজনীতি করা, রাজনীতি বুঝা, রাজনীতি বিজ্ঞানের কোন স্পেশালিষ্ট না। এজন্য আ ফ ম খালিদ,মুফতি মিজান প্রমুখের উপদেষ্টা হওয়াতে একটা খুশীর বান বয়ে গেলেও আমি কারন খুঁজে পায়নি কেন এরা একটা রাজনৈতিক দলের উপদেষ্টা হলেন,রাজনীতিতে তাদের কোন অভিজ্ঞতাটা একটি দলের কাজে লাগানো প্রয়োজন,আমি সত্যিই বুঝি নাই। এই উপদেষ্টাদের সংযুক্তি স্বাভাবিকভাবে আমার ভিতর কোন পুলক সৃষ্টি করতে পারেনি। ভবিষ্যতে তারা ঠিক কিভাবে দলের রাজনীতিকে পথ দেখাবেন? তারা একটা স্পর্শকাতর ইস্যুতে তাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতাপূর্ণ উপদেশনা প্রদানে ব্যর্থতা প্রমান করেছেন। আমি এসব অলংকারিক উপদেষ্টা কে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার কথা বলি। এ ধরনের স্পর্শকাতর রাজনৈতিক ইস্যুতে সরকারের সম্ভাব্য গেম মাথায় রেখে সময় নিয়ে যথেষ্ট হোম ওয়ার্ক করার দরকার ছিল।

তবে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর মামুন ভাই এবং হেফাজত তড়িৎ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।তার বায়তুল মোকাররমে ছুটে যাওয়া এবং পরবর্তী পদক্ষেপ ভালো ছিল। হেফাজত নেতারা ছাড়াও মামুন ভাইয়ের প্রথম পরিচয় হচ্ছে তিনি একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি।হরতালে তার দলের কোনো দলীয় অবস্থান লক্ষ্য করা যায়নি। এসব ভুঁইফোড় সংগঠন বিলুপ্ত করে হয়তো মাওলানা মামুনের হেফাজতে থীতু হওয়া উচিত অথবা হেফাজত ছেড়ে দলের হাল ধরা উচিত।

ইসলামী আন্দোলন দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে। বিশেষত: তাদের নায়েবে আমীরের নেতৃত্বে পিকেটিং ও বিক্ষোভ করে সমর্থন হেফাজতের সাথে তাদের দীর্ঘ দূরত্ব খানিকটা গুছিয়েছে।

হাটহাজারী এবং বিবাড়ীয়াতে ছাত্ররা একযোগে নেমে এসেছে। ছাত্রদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় নি। কওমি হোক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আন্দোলনের ধরনটাই এমন। একটা ক্যাম্পাসে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে অন্যত্র এটা বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এটাকে আমি ছাত্রসমাজের একটা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হিসেবে দেখি। যেটার কোনো পরিকল্পনা এবং নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ছিলনা। কওমি মাদরাসাগুলোতে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার কারণে তাদের ক্ষোভ প্রকাশের সুষ্ঠু কোন সাংগঠনিক কাঠামো এবং ছাত্র নেতৃত্ব গড়ে উঠেনি।এটা আল্লামা শফীর পদত্যাগের সময় ও বেফাক আন্দোলনের সময়ও দেখা গেছে। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রনে চলে না। এজন্য কওমী মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং ছাত্র রাজনীতি চালু করার মাধ্যমে কাঠামোগত ছাত্র নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। ছাত্ররা ছাত্রদেরকে যেভাবে সুশৃংখল এবং নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারবে শিক্ষকরা সেটা পারবেন না। এ কারণে কওমীর ছেলেদের ফেক আইডি দ্বারা পরিচালিত হতেও দেখা গেছে।

দৃশ্যপটে আচানক নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন বয়োবৃদ্ধ মধুপুরের পীর। তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এবং পরবর্তীতে হরতালে নেতৃত্ব দেয়া ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এই জায়গাটাতে আমি ইসলামী আন্দোলনের আমীরকে পাবলিক ডোমেইনে বিনীতভাবে আলোচনা করতে চাই। দেশের মসজিদ-মাদ্রাসা যখন আক্রান্ত এবং একের পর এক লাশ পড়ছে এমন একটি জটিল ক্রাইসিস মুহূর্তে তাঁর কাছ থেকে সরাসরি কোনো নির্দেশনা জাতি পেতে পারতো। একটি বিভীষিকাময় সঙ্কটকালে এই দিনগুলোতে তাঁকে মাঠে পাওয়া হতো জনতার উচ্ছাসের কারন। এটা ঠিক যে, তাঁর দল এবং নায়েবে আমীর কে দিয়ে যা করার তা করিয়েছেন। কিন্তু তিনি মধুপুরের পীরের চেয়ে বয়োবৃদ্ধ নয় যে এখনই তার এ ধরনের মুহূর্তে মাঠে নামাটা এড়িয়ে যেতে হবে।তিনি হাসিনা কিংবা খালেদার মতো সেই বয়স বা রাজনীতির পথ অতিক্রম করা নেতাও না; যিনি শুধু নির্দেশনা দিয়েই আড়ালে রিজার্ভ থাকবেন। তার দল এবং নেতাদের পারফরমেন্সের ক্রেডিট তিনি অবশ্যই পাবেন; কিন্তু এমন বিভীষিকাময় কঠিন পরিস্থিতিতে যাকে একাধারে একজন ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক রাহবার দাবী করা হয়; সরাসরি তাঁর ব্যক্তিগত রাহনুমায়ী জাতির প্রত্যাশিত ছিল। অন্তত তিনি সরকার ও জনগণের উদ্দেশ্যে একটা ভিডিও বার্তা দিতে পারতেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে তার দল দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলেও দলের প্রধান নেতা হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি তাঁর নেতৃত্ব সুসংহত করার সুযোগটা হাতছাড়া করলেন বলে আমার ধারণা। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের রাজনৈতিক সততার গুন দিয়ে দেশে ইসলামপন্থীদের একটি স্বতন্ত্র ধারা তৈরি করে রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের একটি দর কষাকষির জায়গায় নিয়ে যেতে সচেষ্ট আছে। বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফল এবং তাদের মাঠের অ্যাক্টিভিজম বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হয়, ইতোমধ্যে তারা ৮-১০ শতাংশ ভোটার কাছে টানতে সক্ষম হয়েছে।এই মুহূর্তে তাদের পপুলার রাজনীতিকে ধরতে পারা গুরুত্বপূর্ণ।

এক্ষেত্রে যদি পীর সাহেবকে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে দূরে রেখে সর্বজনীন রাখা উদ্দেশ্য হয়; তাহলে তিনি ছোটখাটো প্রোগ্রামে কেন অংশগ্রহণ করেন? তাকে অঙ্গসংগঠনের জেলার সম্মেলনেও বক্তৃতা করতে দেখা যায়। এবং রাজনীতির বাইরে যদি অলংকারিক ভাবে তিনি আধ্যাত্মিক রাহাবার হয়ে থাকবেন,তাহলে দলের শীর্ষ নির্বাহী পদে তার অবস্থানের তাৎপর্য কতটুকু?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্রমান্বয়ে ফ্যাক্টর হয়ে ওঠা এবং ভোটের রাজনীতিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা দলটির আমির হিসেবে তার ব্যক্তিগত নেতৃত্ব এবং মাঠের রাজনীতিতে সংগ্রামমুখর উপস্থিতি সচেতন মহলের দৃষ্টিতে দল ও নেতৃত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

মুফতি হারুন ইজহার চট্টগ্রামের ঘটনায় স্বতঃস্ফূর্ততা এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশেষত সারারাত সারাদিন হাসপাতালে থাকাটা সবার নজর কেড়েছে। কিন্তু তিনি তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। অভিযোগ শোনা গেছে তার উস্কানিতে বিভিন্ন অপ্রীতিকর খন্ড ঘটনার অবতারণা হয়েছে। জুনাইদ বাবুনগরীকে লাশের কাছে যেতে দেয়া হয়নি। বাবুনগরী নিঃসন্দেহে বর্তমান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। বাংলাদেশের দেওবন্দ হিসেবে খ্যাত হাটহাজারী মাদ্রাসার সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুহতামিম এবং হেফাজত আমির হিসেবে তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে অবিসংবাদিত জনপ্রিয় আলেমে দ্বীন। মুফতি হারুন ইজহারের মত একজন উঠতি নেতা কোন অবস্থাতেই বাবুনগরীকে হেনস্থায় উস্কানি দিতে পারেন না। বরং তিনি বাবুনগরীকে নেতার সম্মানে ভূষিত করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারতেন। চট্টগ্রামের এই ঘটনা তার অর্জিত প্রশংসা ম্লান করেছে।
জৈনপুরী পীর এনায়েতুল্লাহ্ আব্বাসী হরতালের সমর্থনে মিছিল-সমাবেশ করেছেন।এটা দীর্ঘদিনের সুন্নি-ওহাবি বিরোধ মেটাতে সহায়ক হবে। সম্প্রতি এনায়েতুল্লাহ আব্বাসির উদারনৈতিক মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেওবন্দীদের উচিত তাকে কাছে টানা।

কিন্তু সালাফী আলেমদের নীরবতা এবং হরতাল বিরোধীতা ধর্মপ্রাণ মানুষদের আহত করেছে। তারা ওযুর মাসলা নিয়ে ইউটিউবে বক্তৃতা দেন; কিন্তু নিরস্ত্র নাগরিক হত্যাকে শক্তিশালী ভাবে নিন্দা করেন না।

হেফাজত আন্দোলন দেশের মিডিয়াকে আরেকবার দিগম্বর করেছে। নাগরিক আন্দোলনের পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণে সুশীল মানবাধিকার সংস্থা এজেন্সিগুলোর মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকা খোদ মানবাধিকারকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। জামায়াত অফিশিয়ালি শক্ত অবস্থান না নিলেও শেষদিকে মাঠ পর্যায়ে শিবির ব্যানার নিয়ে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে। বিএনপি নাগরিক হত্যার প্রতিবাদে কর্মসূচি দিয়েছে কিন্তু সরাসরি হরতালে সমর্থন দেয়নি।
কিছু উচ্ছিষ্টভোগী বসন্তের কোকিল দরবারী আলেম যথারীতি তাদের স্বার্থসিদ্ধির সুযোগে বেরিয়ে এসেছে। নাগরিক হত্যার প্রতিবাদে চুপ থেকেও হরতাল বিষয়ে তারা ফতোয়া জারি করেন।

হেফাজতের আন্দোলন অরাজনৈতিক এবং ধর্মীয় হলেও রাজনৈতিকভাবে গোটা দেশকে দুটি মেরুতে বিভক্ত করেছে। হেফাজতের সার্থকতা হচ্ছে তারা দেশের জনগণকে নৈতিকভাবে এক করে দিতে পেরেছে।

নেতা ও দলের সরে যাওয়ার পরও সাধারণ কর্মীদের এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর নেতৃত্বের দুর্বলতা সাহসিকতার অভাব, সিদ্ধান্তহীনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ এর ব্যর্থতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে তুলে ধরেছে।

১৭ লাশের বিনিময়ে ১৩ সালের হেফাজত তুমুলভাবে আবার আলোচনায় ফিরে এসেছে। বাংলাদেশের দুর্বিনীত জনতা এভাবেই নিজেদের এই চর্চিত বিশ্বাস, স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষায় বুকের রক্ত দিয়ে বারবার সংগ্রাম ফিরিয়ে আনে। দলীয় রাজনীতিতে স্বার্থান্ধ বিরোধী নেতৃবৃন্দ কি এবার জনগণের রক্তে লেখা মুক্তির ভাষাটা বুঝতে পারবেন? নেতারা যদি আত্মকলহ এবং আন্তঃদলীয় অনাস্থা অবিশ্বাস ভুলে ফ্যাসিবাদ এবং জুলুম শাহীর অপশাসন থেকে মুক্তির জন্য নিঃশর্ত সমঝোতায় পৌঁছার তাগাদা অনুভব করেন হয়তো এই ১৭ টি জীবন বৃথা যাবেনা।

লেখক,
জিয়া আল হায়দার
মানবাধিকার কর্মী ও রাজনীতি বিশ্লেষক

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram

Leave a Comment

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

উত্তরার মনসুর আলী মেডিকেল হাসপাতালে সন্ত্রাসী  হামলা 

উত্তরার মনসুর আলী মেডিকেল হাসপাতালে সন্ত্রাসী  হামলা  এইচ এম মাহমুদ হাসান।  উত্তরা শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ উঠেছে। উক্ত হাসপাতালের নিচ তলায় অবস্থিত মেসার্স তারেক মেডিকেল এর পরিচালিত হাসপাতাল ফার্মেসীর মালিক পারভেজ জানায়, ড্যাব নেতা মোদাচ্ছের হোসেন ডমবেলের লোকজন ডাঃ জুয়েল, ডাক্তার রায়হানসহ ১০/১৫ জন তার ঔষধের

  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৫:০২ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ
  • বিকাল ১৫:৩৬ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৭:১৫ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৮:৩১ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ