শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ রমজান, ১৪৪৫ হিজরি | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | বসন্তকাল | রাত ৮:০৬

শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ রমজান, ১৪৪৫ হিজরি | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | বসন্তকাল | রাত ৮:০৬

বগুড়ায় হোমিও চিকিৎসার আড়ালে মাদক বিক্রি, ফলাফল মৃত্যু বা অঙ্গহানি

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram
  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১২:০৮ অপরাহ্ণ
  • বিকাল ১৬:২৮ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৮:১৫ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৯:২৮ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

সাধারণ রেক্টিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে মিথানল (মিথাইল অ্যালকোহল, উড অ্যালকোহল, উড ন্যাপথা, উড স্পিরিট)। এতেই দ্রবণটি হয়ে যাচ্ছে প্রাণঘাতী। এই দ্রবণ পানের ফলাফল নিশ্চিত মৃত্যু বা অঙ্গহানি। সম্প্রতি বগুড়ায় বিষাক্ত স্পিরিট পানে ১৩ জনের মৃত্যু পর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

একইভাবে এর আগেও বগুড়াসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বিষাক্ত স্পিরিট পানে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনার পরও থামেনি এ অপতৎপরতা। এভাবেই তৈরি হয়েছে শত কোটি টাকার অবৈধ দেশি মাদকের বাজার।

বিষাক্ত স্পিরিট পানে মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে। এর মধ্যে ১০ জন বগুড়া শহরে এবং তিনজন শাজাহানপুর উপজেলায়।

মৃতরা হলেন- বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি এলাকার কারখানা শ্রমিক পলাশ হোসেন (৩৪), শহরের কাটনারপাড়া এলাকার হোটেল শ্রমিক সাজু মিয়া (৫৫), পুরান বগুড়া দক্ষিণপাড়া এলাকার সুমন রবিদাস (৩৮), বগুড়া শহরের চারমাথা ভবেরবাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন (৫৫), শহরের তিনমাথা পুরান বগুড়া এলাকার রাজমিস্ত্রি রমজান আলী (৬০), কাটনারপাড়া হটুমিয়া লেনের বাবুর্চি মোজাহার আলী (৭৫), কাহালু পৌর এলাকার উলুট্রু মহল্লার অটোরিকশার চালক কালাম মিয়া (৫০), পুরান বগুড়া এলাকার প্রেমনাথ রবিদাস (৭০), ফাঁপোড় এলাকার রিকশাচালক জুলফিকার রহমান (৫৬), ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ার রিকশাচালক আবদুল জলিল (৬৫), শাজাহানপুরের অটোটেম্পো মেকার মেহেদী হাসান (২৮), দক্ষিণ কাটাবাড়ি গ্রামের সার্ভেয়ার আহাদ আলী (৩৮) ও রহিমাবাদ উত্তরপাড়ার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আব্দুর রাজ্জাক (৪৮)।

তাদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় পারুল হোমিও হল এবং তিনমাথা রেলগেট এলাকার খান হোমিও হল থেকে কেনা স্পিরিট পান করে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ঘটনায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রঞ্জুর মিয়ার (৩৩) ভাই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে থানায় মামলা করেন। মামলায় পারুল হোমিও হল এবং পুনম হোমিও হলের মালিক তিন ভাই নুর মোহাম্মদ (৪৮), নূরনবী (৫০) এবং নূরে আলমকে (৫৫) আসামি করা হয়।

এছাড়া শহরের তিনমাথা রেলগেটের খান হোমিও হলের মালিক শাহীনুর রহমানকেও আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে খান হোমিও হল বন্ধ করে গাঢাকা দিয়েছেন মালিক শাহিনুর রহমান। তার মুঠোফোনও বন্ধ। একইভাবে পারুল ও পুনম হোমিও হলের মালিক তিন ভাই লাপাত্তা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বগুড়ায় হোমিও চিকিৎসার আড়ালে মাদক হিসেবে শত শত লিটার রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রি হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এই স্পিরিট আবার বগুড়া থেকেই পাঠানো হয় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। শুধু বগুড়ায়ই শত কোটি টাকার অবৈধ দেশি মাদকের বাজার রয়েছে।

১৯৯৮ সালে নববর্ষের দিন পারুল হোমিও হলের সরবরাহ করা বিষাক্ত স্পিরিট পানে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। পুলিশ, ডিবি ঘুরে মামলাটি শেষ পর্যন্ত সিআইডির হাতে থাকা অবস্থায় চার্জশিট দেয়া হলেও আসামিরা অধরা রয়েছেন। এছাড়া ২০০০ সালে বগুড়ায় বিষাক্ত স্পিরিট পানে ২২ জনের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গেও জড়িত ছিল এই পারুল হোমিও হল।

বগুড়া জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সার্কেলের আওতায় সাতজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও একটি হোমিওপ্যাথিক ল্যাবরেটরির নামে রেক্টিফাইড স্পিরিট ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য ১০০ লিটার ও সরকার নিয়ন্ত্রিত অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের জন্য ৮ হাজার ৫০০ লিটারের অনুমোদন রয়েছে। এছাড়া পারুল হোমিও ল্যাবরেটরির নামে ১০০ লিটার রেক্টিফাইড স্পিরিট ব্যবহারের অনুমোদন নেয়া আছে।

হোমিও চিকিৎসকদের মধ্যে বেনীপুর হোমিও চেম্বারের ডা. আইয়ুব হোসেনের নামে ১১ লিটার, করতোয়া হোমিও হলের ডা. সাহেদুল আলমের নামে ১০ লিটার, দি মুন হোমিও হলের ডা. এম এ খালেকের নামে ৫০ লিটার, ফ্রেন্ডস হোমিও হলের ডা. অরুণ কুমার সরকারের নামে ৭৫ লিটার, নিরাময় হোমিও ফার্মেসির ডা. আব্দুস ছামাদের নামে ১৮ লিটার, দি পপুলার হোমিও ফার্মেসির ডা. আলতাফ হোসেনের নামে ১৮ লিটার এবং বগুড়া সদরের বাইরে একমাত্র সৈয়দ আহম্মেদ কলেজ স্টেশন এলাকার ডা. আজিজার রহমানের নামে ৯ লিটার রেক্টিফাইড স্পিরিট ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে।এছাড়া বগুড়ার কোনো উপজেলায় রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রির অনুমোদন নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হোমিও প্রতিষ্ঠানগুলোতে বৈধতার সাইনবোর্ডে রাখা এসব রেক্টিফাইড স্পিরিটের বড় অংশই বিক্রি হয় মাদক বাজারে। এ কারণে রেক্টিফাইড স্পিরিট মেশানো হয় ৯০ ভাগ পানি। সেই সঙ্গে ঝাঁজালো ও আসল বানাতে মেশানো হয় পান অযোগ্য মিথানল। এই মিথানলের সংমিশ্রণ কম-বেশি হলেই ঘটে মৃত্যু।

বগুড়া হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. এসএম মিল্লাত হোসেন বলেন, শুধু বগুড়া জেলায় ৪০০ হোমিও চিকিৎসক রয়েছেন। এর মধ্যে ড্রাগ লাইসেন্স রয়েছে ৫০ জনেরও কম চিকিৎসকের। লাইসেন্স ছাড়াই বগুড়ার সাড়ে ৩০০ হোমিও চিকিৎসক নিজস্ব চেম্বারে অবৈধভাবে কিনে স্পিরিট ব্যবহার করছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, প্রাথমিকভাবে অ্যালকোহলকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো ইথানল (যাকে ইথাইল অ্যালকোহলও বলা হয়), মিথানল (যাকে মিথাইল অ্যালকোহল, উড অ্যালকোহল, উড ন্যাপথা, উড স্পিরিটও বলা হয়) এবং রেক্টিফাইড স্পিরিট (যাকে মেথিলেটেড স্পিরিটও বলা হয়)।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনার কারণে সম্প্রতি দেশি-বিদেশি মদের সঙ্কটের মধ্যে ভেজাল মদ ব্যবসায়ীরা রেক্টিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে বিষাক্ত মিথানল মিশিয়ে বিক্রি করছে। মিথানল কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত হার্ডওয়ারের দোকানে কেজি হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। মিথানল স্পিরিট খাবার অযোগ্য। যে কারণে পানি মেশানো এক পাউন্ড রেক্টিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে দুই ফোটা মিথানল মিশিয়ে দিলে সেটি আসলের চাইতেও কড়া মনে হয়। মাদকাসক্তরা এই কড়া ঝাঁজওয়ালা মাদকই বেশি পছন্দ করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মিথানল মিশ্রিত দ্রবণ মানবদেহের জন্য শতভাগ ক্ষতিকর। এটি অতিমাত্রায় পান করলে দুই ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়। মিথানল মূলত কাঠ বার্নিশে কিংবা বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ব্যবহার করা হয়, যা কোনোভাবেই পানের উপযোগী নয়।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, অ্যালকোহল বা মদ মানবদেহের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। এরপরও কিছু লোক যে মদ পান করছেন তাতে ভেজাল রয়েছে। যে কারণে আসক্তরা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছেন। বগুড়ায় প্রকাশ্যে রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রি বন্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের জোড়ালো কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে।

যার কারণে অনেক হোমিওপ্যাথিক ফার্মেসিতে বোতলে রেক্টিফাইড স্পিরিট ভরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে বোতলের গায়ে ভুয়া ওষুধের স্টিকার লাগিয়ে মাদকাসক্তদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া বগুড়া শহরের অলিগলিতে পলিথিনে ভরে প্রকাশ্যে রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রি হলেও রহস্যজনক কারণে এসব বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় না।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বগুড়ার উপ-পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, ‘হোমিওপ্যাথিক ফার্মেসিতে বোতলে রেক্টিফাইড স্পিরিট ভরে ওষুধের স্টিকার লাগায়। যে কারণে সেটি ওষুধ না নেশাজাতীয় দ্রব্য তা নির্ণয় করা কঠিন। তবে প্রকাশ্যে রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রি সম্পর্কে আমার জানা নেই।’

বগুড়া সদর থানার ওসি হুমায়ূন কবির বলেন, নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।

অসুস্থ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শহরের পারুল হোমিও হল এবং খান হোমিও হল থেকে রেক্টিফাইড স্পিরিট কিনে পান করে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করা হয়েছে।সূত্রঃ জাগো নিউজ

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram

Leave a Comment

সর্বশেষ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

এইচ এম মাহমুদ হাসান-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেছেন, দেশবিরোধী সকল আধিপত্যবাদী শক্তিকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে। দেশ স্বাধীন হয়েছে দিল্লির গোলামির জন্য নয়; মাথা উঁচু করে নিজের অধিকার আদায়ের জন্য। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের হাতেই আজ স্বাধীনতা ও দেশ বিপন্ন।

দিল্লির গোলামীর জন্য মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেনি-ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তর

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে

  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১২:০৮ অপরাহ্ণ
  • বিকাল ১৬:২৮ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৮:১৫ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৯:২৮ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ