গত জুলাই থেকে করোনার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে অনলাইনে কোনও পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়ে প্রশাসন থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও , প্রশাসনের ওই নির্দেশনা না মেনেই মার্কেটিং ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ মিডটার্মের রুটিন দিয়েছে ।
গত ২ জুলাই অনলাইনে ক্লাসের বিষয়ে উপাচর্যের সভাপত্বিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা বৈঠকে বসেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ঐদিনই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দপ্তর। ঐ বিজ্ঞপ্তিতে ৪ নং পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়, মিডটার্ম বা কোনও পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া যাবে না। ঐ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয় ক্যাম্পাস খোলার পর ৩ সপ্তাহ রিফ্রেশমেন্ট ক্লাস রাখা হবে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মার্কেটিং ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ দিয়েছে মিডটার্মের রুটিন। রুটিন অনুযায়ী মার্কেটিং বিভাগে ৬ জানুয়ারি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে এই পরীক্ষা।
অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার শিক্ষকদের এমন উপর্যুপরি সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। দুর্বল নেট স্পিড, ডিভাইসের অভাবে যেখানে অনলাইন ক্লাসেই অংশ তারা নিতে পারছেন না, সেখানে পরীক্ষা কীভাবে সম্ভব- এই প্রশ্ন অনেকেরই। এছাড়াও গ্রামে থাকায় অনেকে সংগ্রহ করতে পারেননি প্রয়োজনীয় বই ও নোট। মিডটার্মের ২০ মার্ক যোগ হয় সেমিস্টার ফাইনালের ৭০ মার্কের সাথে। এছাড়াও অনলাইন ক্লাসও বুঝতে কষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সবমিলিয়ে অনলাইনে মিড পরীক্ষা নিয়ে এমন হটকারী সিদ্ধান্ত তাদের রেজাল্টেও প্রভাব ফেলবে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য হুমকির বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. দিলারা ইসলাম শরীফ বলেন, ‘আমরা রুটিন দিলেও পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো পড়াশোনা করছে না। তাই তারা যেন পড়াশোনার বিষয়ে সতর্ক হয় তাই রুটিনটা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চূড়ান্ত সেমিস্টার ফাইনালগুলো নেওয়া হচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতেই আমরা রুটিনটা দিয়েছি। যদি সুযোগ হয় আমরা কিছুদিন পিছিয়ে হলেও পরীক্ষা নিতে পারবো।’
মার্কেটিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা কন্টিনিউয়াস এসেসমেন্টরে পার্ট। এটা এভাবেই নেওয়া হবে যেন শিক্ষার্থীদের কোনও ধরনের সমস্যা না হয়। এটারই অংশ হিসেবে কুইজ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্যই আমরা একাডেমিক কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কন্টিনিউয়াস এসেসমেন্ট মিডটার্মের পার্ট তবে মিডের মতো পরীক্ষার হলে লিখিত পরীক্ষা না।’
তাহলে মিডের যে ২০ মার্ক ফাইনালে যুক্ত হয়, সেই মার্কের সাথে কোনও সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০ মার্কই হবে, তবে লিখিত পরীক্ষার ফরমেটে না। আমরা এটার মাধ্যমে এই ২০ মার্ক যোগ করে দেব। শিক্ষার্থীদের কিছু এক্সাম না নিয়ে রাখলে তারা পড়ার ক্ষেত্রে মোটিভেশন পায় না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আক্তারুজ্জামান কিছু বলতে পারেননি। তিনি রেজিস্ট্রারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ড. ওহিদুজ্জামানের মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘অনলাইনে কেউ পরীক্ষা নিচ্ছে না, যাদের চাপ হয়ে গেছে তারা স্বশরীরে এসে পরীক্ষা দেবে। অনলাইনে শুধু অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়া যাবে। যারা পরীক্ষা নেবে তাদের বিভাগীয় প্রধানদের তোমরা জিজ্ঞেস করো, কীভাবে পরীক্ষা নেবে।’