প্রথম দিনের লকডাউন শেষে রাষ্ট্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্দেশ্য আমজনতার খোলা চিঠি
উল্লেখ্য পহেলা জুলাইয়ের লকডাউন শেষে দেখা যাচ্ছে, সরকার জনগণকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে লকডাউন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
বিশেষ করে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আচারণ তেমনটিই নির্দেশ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে দেখা গেছে, প্রশাসনিক কর্তাদের ক্যারাডীয় স্টাইলে জনগণকে ডিল করতে। কেউ কেউ বলছে, দশদিন না খেয়ে থাকলে মরবেন না, করোনায় ধরলে মরবেন। ইভেন এমন গর্হিত আলাপও আসছে, দোকানটা জ্বালিয়ে দিলে উচিত শিক্ষা হবে। কুষ্টিয়ার একটি স্হানীয় পোর্টালে দেখা যাচ্ছে, খোলা আকাশের নিচে স্থাপিত অস্থায়ী বাজারে গিয়ে দোকানীদের দিনে দুপুরে গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছে।
হে রাষ্ট্রের কর্মচারী কর্মকর্তাবৃন্দ !
আপনি যে কারণে এই লকডাউনে বাইরে বেরিয়ে জনতাকে শাসাচ্ছেন ঠিক একই কারণে খেটে খাওয়া মেহনতি জনগণ বাইরে বেরিয়ে এসেছে। জীবিকার তাগিদে ! আপনার জীবিকা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে আর জনতার জীবিকা তার ছোট্ট মুদিখানায়, চা স্টলে ।
হে রাষ্ট্রীয় কর্তা মশায়!
মাস শেষে আপনার অত একটা প্যারা না থাকলেও ঐ চা স্টলের দোকানীর মাথায় আছে পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করা তার উপর আবার কিস্তির টাকা পরিশোধের রুটিন । যেখানে গত একটি বছরে তার আয় অর্ধেকের নিচে আসলেও ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ হারে তার উপর কিস্তির জোয়াল তো ঘাড়ে আছেই।
হে জনগণের সেবক!
আপনি এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়ার পূর্বে জনগণের খাদেম হিসেবে খেদমতে নিয়োজিত থাকার শপথ করে তবেই এই জিম্মাদারি নিয়েছিলেন। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, এদেশের জনগণ আপনাদের থেকে সেবা পেতে চায় হুমকি ধামকি না।
হে জনগণের খাদেম!
করোনা মহামারী থেকেও লকডাউন মহামারীতে জনগণ বেশী ভীত সন্ত্রস্ত । জনগণের কষ্টগুলো নিয়ে ভাবুন, অনুধাবন করুন। বুঝতে চেষ্টা করুন। কেউই জেনেবুঝে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে চায় না । তাহলে করোনা উপেক্ষা করে তাঁরা কেন বেরিয়ে এসেছে ! নিশ্চয়ই তারা ফুর্তিতে, ফ্যান্টাসিতে বেরিয়ে আসে নি। বিষ পানে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও কেউ বিষ পান করে ? কেউ ই আত্মাহুতি দিতে চায় না। সবাই পৃথিবীর আলো বাতাসে বেঁচে থাকতে চায়। আর প্রিয়জনকে নিয়ে বেঁচে থাকতেই তাঁর এই সংগ্রাম ।
হে জনগণের জিম্মাদার !
ভয় ভীতি দিয়েই নয় ভালোবাসা, মমতা দিয়েও জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেভাবে হুমকি ধামকি আর লাঠিচার্জ করে জনগণকে রাস্তাঘাট, বাজার থেকে খেদানোর চিত্র দেখা যাচ্ছে এটা পাড়ার ভাড়াটেদের মত হয়ে যাচ্ছে না? মনে রাইখেন এই জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় আপনি প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটান । তো এই জনগণের মুখে হাঁসি ফোটাতে আপনার একটু মমতা, ভালোবাসা, আর দরদমাখা ব্যবহারই যথেষ্ট। তারা আপনার কাছে টাকা পয়সা চাইতে আসবে না। শুধু লাঠি আর হুমকি ধামকি না খাদ্য সামগ্রী, ওষুধ পথ্য নিয়েও তাদের পাশে যান।
হে বঙ্গীয় প্রশাসক!
আর ওমর ফারুক (রা:) কে একটু পইড়েন। দেইখেন ওনি কিভাবে তার বিশাল সাম্রাজ্যকে ডিল করেছেন। ওনার যুগান্তকারী ঘোষণা ছিল, আমার আওতাধীন এলাকার একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় তাহলে কিয়ামতের দিন এর জন্য আমি ওমরকে জবাব দিতে হবে। তো আসেন ওমর (রা:) কে পাঠ করি। ওমরের মত প্রশাসক হওয়ার চেষ্টা করি। মানবিক প্রশাসক হওয়ার চেষ্টা করি।
আপনার আওতাধীন প্রতিটি মানুষের জিম্মাদার আপনি। তাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা, দুবেলা দুমুঠো ভাতের খোঁজ নেয়ার মহান দায়িত্ব আপনার। অসুস্থ মানুষটিকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার ওয়াদা দিয়েই আপনি জনগণের সেবক হয়েছেন। জনগণকে প্রতিপক্ষ বানানো এটা আপনার দায়িত্বশীলতার সাথে সাংঘর্ষিক।
জনগণকে ভালো রাখাই যদি আপনার দায়িত্ব হয় তাহলে লাঠি দিয়ে খেদিয়ে নয় অসহায় মানুষের মুখে খাদ্য নিশ্চিত করার পরে লাঠি আর গ্রেফতারের হুমকি দিয়েন। মানুষ করোনা মহামারী থেকেও লকডাউন মহামারীতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। পারলে তাদের দুঃখ কষ্ট লাঘব করেন না হয় লকডাউনের খোমাটা দেখাইয়েন না । এমনিতেই ঘর পোড়া তার উপর আবার আলু পোড়া দিয়েন না।
লেখক
এম এম শোয়াইব
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।