ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেছেন, দেশের সবকিছু স্বাভাবিক হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলায় অভিভাবকগণ চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে এখন চিন্তাভাবনা করতে হবে। মাদরাসা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আসা উচিত সরকারের। কওমী মাদরাসাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের টিকাদান দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে জাতিকে মূর্খ বানানোর পাঁয়তারা করছে সরকার। শিল্প কল-কারখানা, মার্কেট, শপিংমল এমনকি পর্যটন কেন্দ্রগুলোও খুলে দেয়া হয়েছে। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সরকার ভয় পাচ্ছে কেন?
১২ আগস্ট ২০২১ এক বিবৃতিতে মুফতী ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি আরো বলেন, মহামারি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষার সঙ্গে জড়িত সবকিছুতেই বিপর্যয় নেমে এসেছে। লাগাতার ১৮ মাস ধরে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। মাঝখানে কিছুদিন কওমি মাদরাসা চালু থাকলেও গত এপ্রিল থেকে আবারো তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আলিয়া মাদরাসাও খোলেনি গত ১৮ মাসে। স্কুল, কলেজ ও আলিয়া মাদরাসার সকল ধরণের পরীক্ষা বন্ধ। গত বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অটো পাস দেয়া হয়েছে। এ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এখনো হয়নি। পরীক্ষা হবে কি না, তাও স্পষ্ট নয়। শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল ছেড়ে এবারও অটো পাসের অপেক্ষায়।
তিনি বলেন, দেশের প্রায় ৪ কোটি ছাত্র-ছাত্রী নিয়মতান্ত্রিক লেখাপড়া থেকে শুধু বঞ্চিত হচ্ছে তাই নয়, অনেকের শিক্ষাজীবনই শেষ হয়ে গেছে। অনেকে নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। মাদকাসক্ত হয়েছে অনেক ছাত্র-ছাত্রী। অনলাইনে পড়াশুনার অজুহাতে ছাত্র-ছাত্রীদের একটি বিপুল অংশ অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন গেমসে আসক্ত হয়ে গেছে। মোবাইল আসক্তি তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এসব বিপর্যয়তো শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সংক্রান্ত। এর বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে আর্থিক বিপর্যয়েও লাখ লাখ পরিবার পথে বসেছে। সরকার বারবার বলছে, “আগে জীবন রক্ষা, তারপর শিক্ষা”। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে লাখ লাখ নন-এমপিও শিক্ষক বেকার হয়ে গেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু না থাকাতে তারা বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। সম্মানিত শিক্ষকগণ চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকারের উদাসীনতা, অদূরদর্শিতা ও খামখেয়ালীতে দেশের শিক্ষাখাত আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার কিন্ডার গার্টেন এবং প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, দেশে লাখ লাখ পরিবার আছে যাদের জীবন জীবিকা শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। লাখ লাখ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে শিক্ষা উপকরণকে কেন্দ্র করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাতে সেসব ব্যবসায়ীরা আজ বিপর্যস্ত। তাদের দিকে সরকারেরও কোনো নজর নেই।
তিনি বলেন, সরকার চাচ্ছে সবাইকে ভ্যাকসিন দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে। কিন্তু ভ্যাকসিন নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সহসাই সবাই ভ্যাকসিন পেয়ে যাবে, এমন আশা করা যায় না। ভ্যাকসিন নিয়ে তেলেসমাতি চলছে। আর সময় না বাড়িয়ে অতিদ্রুত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন। এজন্য যা যা করণীয় তাই করুন। অন্যথায় সরকারের অদূরদর্শী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক এবং ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীগণ নিরবে বসে থাকবে না।