তিউনেসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ সেনাবাহিনীর সহায়তায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিশাম মেশিশিকে বরখাস্ত করেছেন। এ ছাড়া সরকার ভেঙে দিয়ে পার্লামেন্ট স্থগিত করেছেন প্রেসিডেন্ট। গত রোববার ও গতকাল সোমবার এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপকে সামরিক অভ্যুত্থান বলে আখ্যা দিয়েছে দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগে দেশব্যাপী সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। এর জেরে গত রোববার প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত করেন প্রধানমন্ত্রীকে। রোববার থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের জন্য পার্লামেন্ট স্থগিত করেন তিনি। এরপর পার্লামেন্টের স্পিকার রাশেদ ঘানুচির ডাকে রাস্তায় নেমে আসেন সরকার–সমর্থকেরা। এতে গতকাল রাজধানী তিউনিসে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া করোনা মোকাবিলায় বিধিনিষেধও বাড়িয়েছেন। কিন্তু তাঁর এই চেষ্টা খুব কাজে আসেনি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিউনিসিয়ায় অনেক দিন ধরে চলছে রাজনৈতিক সংকট। এই সংকটের সূত্রপাত ২০১১ সালে। ‘আরব বসন্ত’ নামের গণ-আন্দোলন তখন শুরু হয়েছিল এই দেশ থেকে। পরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ওই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
সম্প্রতি দেশটিতে করোনার সংক্রমণ লাগামছাড়া হলে সমস্যা প্রকট হতে থাকে। করোনার টিকাদান কার্যক্রম নিয়ে তালগোল পাকানোর কারণে গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়।
দেশজুড়ে অসন্তোষের মুখে রোববার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন দলনিরপেক্ষ প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী মেশিশিকে বরখাস্ত করার কথা বলেন। একসঙ্গে পার্লামেন্টের সব কার্যক্রম স্থগিত করেন তিনি। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সাবেক অধ্যাপক কাইস সাঈদ ভাষণে বলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় এখন থেকে তিনি নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, তবে প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ক্ষমতাসীন দল আন নাহদা। গতকাল নিজেদের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে দলটি বলেছে, ‘বিপ্লব ও সংবিধানের বিরুদ্ধে এবং এই বিপ্লবকে যাঁরা রক্ষা করবেন, সেই আন নাহদার সদস্য ও তিউনিসিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করছেন কাইস।
তিউনিসিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছিল শুধু পররাষ্ট্রের বিষয়গুলো দেখভাল করা। সামরিক বাহিনীও প্রেসিডেন্টের অধীনে। নির্বাহী দায়িত্ব পালনের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। টিকাদান কার্যক্রম নিয়ে সরকারের সৃষ্ট সংকটের কারণে গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট কাইস এই কার্যক্রমের দায়িত্ব তুলে দেন সেনাবাহিনীর হাতে। আর তা নিয়েই মূলত প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর বিরোধ চরমে পৌঁছায়।