শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ রমজান, ১৪৪৫ হিজরি | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | বসন্তকাল | বিকাল ৪:৩২

শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ রমজান, ১৪৪৫ হিজরি | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | বসন্তকাল | বিকাল ৪:৩২

করোনাকালে  মুখ ও দাঁতের যত্ন: ডাঃ মুহাম্মাদ মহিউদ্দিন

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram
  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১২:০৮ অপরাহ্ণ
  • বিকাল ১৬:২৮ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৮:১৫ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৯:২৮ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারিতে অনেক সেবার মতো স্বাস্থ্যসেবাও চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারসহ স্বাস্থ্যকর্মী হিমশিম খাচ্ছেন। সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে অনেকেই অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে ঘরে বসে কীভাবে মুখ এবং দাঁতের যত্ন নেবেন, দন্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়টি কেমন তার ওপরেই আমার এই আলোচনা।

ডেন্টিস্ট্রি, ডেন্টাল বাংলায় দন্তচিকিৎসা। ডেন্টাল চিকিৎসা এবং ডেন্টাল সহায়ক (ডেন্টাল হাইজিন, ডেন্টাল টেকনেশিয়ান, পাশাপাশি ডেন্টাল থেরাপিস্ট) নিয়ে গঠিত।
দন্তচিকিৎসার ইতিহাসে দেখা গেছে, অসুস্থতা ও রোগের সঙ্গে সঙ্গে দন্তচিকিৎসারও পরিবর্তন ঘটেছে। খ্রিষ্টপূর্ব থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দন্তচিকিৎসার ইতিহাস মানবসভ্যতার ইতিহাসের মতো প্রাচীন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০০ অব্দে, সিন্ধু সভ্যতার প্রথম দিকে দাঁত ড্রিল করার প্রমাণ মেলে। ১৯ শতকের সময় মানুষ সুষম স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। জন এম হ্যারিস ১৮৪০ সালে ওহাইওয়ের বেনব্রিজে বিশ্বের প্রথম ডেন্টাল স্কুল স্থাপন করেন। বর্তমানে এটি এখন ডেন্টাল জাদুঘর।
২০তম শতাব্দীর শুরুর দিকে, বিশেষ করে ইউরোপ এবং আমেরিকার উন্নত দন্ত গবেষণা কেন্দ্রগুলো খোলা হয়েছিল, পাশাপাশি এগুলো আধুনিক হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। ২০তম শতাব্দীর মাঝামাঝি নতুন জৈব দন্তচিকিৎসা শুরু হয়েছিল। এই অগ্রগতি, রসায়ন, জেনেটিক্স এবং রেডিওগ্রাফিকের বিকাশের পাশাপাশি আধুনিক দন্তচিকিৎসা এবং দন্তচিকিৎসার ওষুধকে নেতৃত্ব দেয়।
বাংলাদেশের মেডিকেল এবং ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি), বাংলাদেশ মেডিকেল কাউন্সিল আইনের অধীনে গঠিত হয়েছিল। এই আইনটি ১৯৭৩ সালে করা হয়েছিল সুতরাং এটি বাংলাদেশ মেডিকেল কাউন্সিলের ১৯৭৩, (Act of 1973) আইনও বলা হয়। এর কাজটি হলো মেডিকেল ও ডেন্টাল গ্র্যাজুয়েটদের বাংলাদেশে চিকিৎসা এবং ডেন্টিস্ট্রি অনুশীলনের জন্য নিবন্ধন দেওয়া।
যেহেতু বর্তমান অবস্থায় সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে স্বাস্থ্যকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন সুতরাং আলোচ্য বিষয়টি জেনে বাসায় দন্তচিকিৎসা করতে পারি। বেশির ভাগ ডেন্টাল চিকিৎসা সাধারণত দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি হলো ডেন্টাল কেরিজ (দাঁত ক্ষয়) এবং অন্যটি হলো পেরিওডেন্টাল ডিজিজ (মাড়ির রোগ বা পাইওরিয়া)। আমেরিকার ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ডেন্টাল চিকিৎসাগুলোর মধ্যে দাঁত পুনরুদ্ধার, নিষ্কাশন বা দাঁত অস্ত্রোপাচার এর মাধ্যমে অপসারণ, স্কেলিং, রুট প্লানিং এবং এন্ডোডোনটিক রুট ক্যানেল চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত।
এখানে একটি মজার বিষয় হলো, দাঁতের অবস্থান এবং রোগের সঙ্গে সঙ্গে মানবজাতির স্বাস্থ্যের অবস্থানের এক বা একাধিক গভীর সম্পর্ক বোঝা যায়। যেমন আপনার শরীরে ডায়াবেটিস, সিলিয়াক ডিজিজ বা মরণব্যাধি ক্যানসার আছে কি না, তা দাঁতের রোগ থেকে বোঝা যায়। অনেক গবেষণায় এও প্রমাণিত হয়েছে যে মাড়ির রোগ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, পাকস্থলীর সমস্যা, চোখের সমস্যা এমনকি অকালজন্মের ঝুকির সঙ্গেও জড়িত।
লেখক
এখন আসি মহামারির সময়ে দাঁত ও মুখের রোগের বিভিন্ন দিক এবং এর সমাধানে করণীয় নিয়ে। আমরা শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যে ভাবে যত্ন নেই, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দাঁতের সংরক্ষণ বা দাঁতের চিকিৎসার ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্ব দিই না। বলতে গেলে ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝি না’। কিন্তু বিশেষজ্ঞের মতে, শরীরের যেকোনো অঙ্গের মতো দাঁতের সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। সহজ করে বলি দাঁতের রোগের সঙ্গে শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সমধর্মী সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, আপনার দাঁতের সমস্যা হলে মুখের লাবণ্য হারানোর সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য চিবিয়ে খেতে পারবেন না, ফলে আপনার পাকস্থলীতে সমস্যা দেখা দেবে। শরীরের লিভার এবং কিডনির সঙ্গে দাঁতের রোগের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যদি ক্রনিক ডেন্টাল ডিজিস থাকে, এ কারণে লিভার এবং কিডনির ক্ষতি হতে পারে। একবার আপনার লিভার এবং কিডনির ক্ষতি হলে যে অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা করতে হবে, তা থেকে দাঁতের যত্ন নিলে স্বাস্থ্য ব্যয় এবং খরচ উভয়ই অনেক কম হবে। একবার দাঁতের সমস্যা বা ইনফেকশন হলে মাথাব্যথা, চোখে কম দেখা, কানের সমস্যাসহ বিশেষজ্ঞের মতে অনেক সময় চোখে যেকোনো অপারেশন করা যায় না। দ্য ইউএস পাবলিক হেলথ সার্ভিস এবং আমেরিকান হেলথ রিসার্সে দেখা গেছে, হার্টের সমস্যা যেমন ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট থাকলে দাঁতের সার্জারির সময় হার্টের বিশেষ সমস্যা হতে হতে পারে। কারণ ডেন্টাল সার্জারিতে ব্যাকটেরিয়া রক্তে প্রবেশ করায় হার্টের বিশেষ ক্ষতি সাধন করতে পারে।
দ্য ইউএস ন্যাশনাল হেলথ অব সায়েন্স এবং দ্য আমেরিকান মেডিকেল ও ডেন্টাল রিসার্সে মার্কিন বিজ্ঞানীরা নতুন এবং চমকপ্রদ তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তারা দেখেছেন, যাদের ক্রনিক ডায়াবেটিস এবং লিভারের সমস্যা আছে, তাদের মুখে দুর্গন্ধ হয়। তাদের মতে দুর্গন্ধ দূরীকরণের জন্য লিভার এবং ডায়াবেটিসের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে দন্তেরও চিকিৎসা প্রয়োজন।
একজন মেডিকেল প্রাক্টিশনার হিসেবে আমি অনেক দন্ত রোগীকে দেখেছি, দাঁতব্যথা নিয়ে এলে চিকিৎসার পরিবর্তে দাঁত তুলে ফেলতে আগ্রহী। সে ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো মাথাব্যথা হলে যেমন আমরা মাথা কেটে ফেলি না তেমনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিকিৎসার মাধ্যমে দাঁতের ব্যথা বা দাঁতের সমস্যা সম্পূর্ণরূপে ভালো করা সম্ভব। আমাদের শহরে তো বটেই, এমনকি জেলা শহরেও রোগাক্রান্ত দাঁতকে দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ ও সবল রাখতে সব আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। মনে রাখতে হবে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত টেকনলোজি ব্যবহার করে এবং রেজিস্টার্ড ডাক্তার দ্বারা জীবাণুমুক্ত পরিবেশের মাধ্যমে দাঁতের চিকিৎসা করা উচিত।
এখন আসি দাঁতের ও মুখের সাধারণ রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের উপায়সমূহে। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘Your Mouth: A Gateway to Your Body’s Health’. অর্থাৎ মুখ দিয়ে যা কিছু খাই, তাই আমাদের পাকস্থলীতে যায়। করোনাভাইরাসের অন্যতম প্রবেশদ্বার মুখ। সুতরাং মুখ এবং দাঁতের সুস্থতার সঙ্গে সারা শরীরের সুস্থতা জড়িত। অন্যভাবে বলি মুখের সুস্থতার সঙ্গে দেহের সুস্থতা জড়িত। যেমন ব্রেস্টফিডিং মহিলা যা খাবে বা যা গ্রহণ করবে, তা খাদ্য চক্রের মাধ্যমে বাচ্চার দেহে প্রবেশ করে, সুতরাং নিজে সুস্থ থাকলে হবে না অন্যকে সুস্থ রাখার জন্য হলেও মুখ ও দাঁতের যত্ন নিতে হবে।
দাঁত এবং মুখে যে যে রোগ হয় তার অন্যতম মুখে ঘা। এটি আবার দুটি কারণে হতে পারে—স্থানীয় কারণ, অন্যটি সাধারণ কারণ। স্থানীয় কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ডেন্টাল ক্যারিজ বা দন্তক্ষয়, অনেক সময় ফিলিং করার ক্ষেত্রে বা জন্মগতভাবে মানুষের আঁকাবাঁকা দাঁতের কারণে, ঘর্ষণে মুখে ক্ষত বা ঘা হতে পারে । অনেক সময় ভিটামিন ‘বি’ ডেফিসিয়েন্সি কারণে মুখে ঘা হতে পারে, এখানে বুঝতে হবে রোগীর আসলে কী কারণে ঘা হয়েছে এবং তা সঠিকভাবে শনাক্ত করে সে অনুসারে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মুখের ঘা যদি তিন সপ্তাহের বেশি হয়, অর্থাৎ ২১ দিনের বেশি হলে, অবশ্যই বায়োপসি করতে হবে অর্থাৎ উক্ত জায়গা থেকে একটি ছোট মাংস নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোনো ক্যানসারের জীবাণু আছে কি না।
দাঁত এমন একটি অঙ্গ, যা মানুষ সারা জীবন সব সময় ব্যবহার করে। তাই এই ব্যবহারের ফলে এক বা একধিক দাঁত দুর্বল বা অসুস্থ হতে পারে। আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েসনের মতে, সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশের সাহায্যে জীবাণুমুক্তকরণ চিকিৎসাপদ্ধতিতে রূট ক্যানেল দ্বারা একটি অসুস্থ দাঁতকে বেদনাহীন ও সুস্থ দাঁতে রূপান্তর করা সম্ভব। পরবর্তী সময়ে দুর্বল দাঁতে ক্যাপ পরানোর মাধ্যমে সুস্থ্ দাঁতের মতো কার্যকর করা যায় এবং দাঁত ভেঙে গেলেও এই চিকিৎসা করানো সম্ভব, যা একজন দক্ষ চিকিৎসক দ্বারা করানো উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, তৃতীয় বিশ্বে যে ধরনের ক্যানসার হয়, তার মধ্যে মুখের ক্যানসার অন্যতম। বিশেষ করে যারা তামাক, জর্দা বা গুল ব্যবহার করেন। তাদের গবেষণা মতে এটা প্রমাণিত, একমাত্র যারা ধূমপান করেন প্রতিটি শলাকা ব্যবহারে রয়েছে ৭ হাজার ৫০০ রাসায়নিক পদার্থ এবং এর মধ্যে ৭০টি হচ্ছে ‘ক্যাসেনাল জেনিক’ বা ক্যানসার সৃষ্টির অন্যতম কারণ। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন জোর দিয়েই বলছে, করোনাভাইরাসের সাথে ধূমপানের একটি সমধর্মীয় সম্পর্ক রয়েছে। আমার পরামর্শ হলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বদভ্যাসগুলো বর্জন করতে হবে।
দাঁতের প্রচলিত অনেক রোগের মধ্যে ডেন্টাল ক্যারিজ অন্যতম প্রথাগত দাঁতের সমস্যা। এটির জন্য গতানুগতিক চিকিৎসা হলো ফিলিং করা। দাঁতের যে অ্যানাটমিক্যাল গঠন, তাতে সাধারণত খাবার ভেতরের দাঁতে লেগে থাকে, ফলে ওখানে ক্যারিজ বেশি হয়। অনেক সময় ক্যারিজ বেশি হলে রুট ক্যানেল করে ক্যাপ পরিয়ে অনেক দিন রোগাক্রান্ত দাঁত টিকিয়ে রাখা যায়। এটি সাধারণত ফুড হ্যাবিট এবং মুখ অপরিষ্কার থাকার কারণ হয়ে থাকে। তাই যথাসম্ভব মুখের হাইজিন এবং আদ্রতার সচেতনতা মেনে চলা উচিত। আমাদের মুখের যে অ্যানাটমিক্যাল গঠন তাতে লালা প্রথাগতভাবে সামনের চোয়ালের নিচে জমা হয়, ফলে বেশির ভাগ ক্যালকুলাস বা দাঁতের হলুদ রঙের পাথর সামনের পাটির দাঁতের সঙ্গে বেশি করে জমা হয়, এগুলো অপসারণ না করলে আস্তে আস্তে ভালো দাঁতকে ক্যালকুলাস নষ্ট করে দিয়ে কেভিটিস ক্রমান্বয়ে ডেন্টাল ক্যারিজ সৃষ্টি করে। আলট্রাসনিক স্কেলিং দ্বারা এই নষ্ট দাঁতকে সুস্থ রাখা ও সঙ্গে সঙ্গে মুখকে সুস্থ রাখা সম্ভব। তাই পরামর্শ হলো প্রতি ছয় মাসে একবার দন্ত  প্র্যাকটিশনার দ্বারা দাঁতের পাথর অপসারণ করা উচিত।
আরও একটি সাধারণ সমস্যা হলো মুখে দুর্গন্ধ। এটি সাধারণত দুটি কারণে হয়। একটি স্থানীয় কারণ, যেমন গামের সমস্যা বা মাড়ির সমস্যা। এতে মুখে গন্ধ হয়, এ ছাড়া মুখের ঘা থেকেও দুর্গন্ধ হতে পারে। অন্য আরও একটি কারণ হলো যদি অন্য রোগ থাকে যেমন আপনার পাকস্থলীতে সমস্যা, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি হলেও মুখে দুর্গন্ধ হবে। বেশির ভাগ মানুষই দিনে দুবার ঠিকমতো ব্রাশ করেন না, জ্যাঙ্ক ফুড বেশি খান, ধূমপান করেন, জর্দা-গুল ব্যবহার করেন। এগুলো থেকেও মুখে দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। অনেক সময় অনেকের টনসিলের সমস্যা থাকে, গ্যাসের সমস্যা থাকে এগুলো থেকেও মুখে দুর্গন্ধ হয়, সুতরাং আমাদের কাছে একজন পেশেন্ট আসলে তার ইতিহাস জেনে এবং ডায়াগনোসিস করে আমরা ভালো করে বুঝতে পারি কী কারণে মুখে দুর্গন্ধ হচ্ছে এবং সে অনুসারে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে থাকি।
এখন আসি দাঁতের যত্নে কি করণীয়? ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘Prevention is better than cure’ অর্থাৎ প্রতিষেধক অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা, দ্য ন্যাশনাল রিসোর্স কাউন্সিল অব ইউএসএ, দ্য ন্যাশনাল হেলথ অব সায়েন্স (ইউএসএ), দ্য ইউএস পাবলিক হেলথ সার্ভিস, দ্য আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোশিয়েশনের বিভিন্ন প্রতিবেদন ভিন্নভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যার চুম্বক অংশ নিম্নে সবার জন্য তুলে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
মহামারির এ সময় বাড়িতে বসে অন্য রোগের মতো মুখ এবং দাঁতের যত্ন এভাবে নিতে পারেন— “
১.
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে অবশ্যই ব্যক্তিগত সুরক্ষাব্যবস্থা মেনে, ছয় মাসে একবার দন্ত  প্র্যাকটিশনারের কাছে গিয়ে মুখ এবং দাঁতের পরীক্ষা করা, বিশেষ করে যাদের দাঁতে ক্যালকুলাস বা প্লাক পড়ে এবং যাঁদের হার্ট, বহুমূত্র, অধিকন্তু লিভার সমস্যা আছে।
২.
করোনাভাইরাস বিস্তারে মুখ অন্যতম একটি মাধ্যম সুতরাং পূর্ণভাবে বাড়িতে মুখ এবং দাঁতের যত্ন নিতে হবে, অবশ্যই দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করা উচিত এবং  মিসওয়াক ও করতে পারেন! মিসওয়াকের  বৈজ্ঞানিক অনেক উপকারিতা রয়েছে   ( যেমন মুসলিমগন বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে মিসওয়াক করে থাকেন )   যারা ব্রাশ করতে  অসুবিধা ফিল করেন তারা মিসওয়াকের  সাথে টুথ পেস্ট ব্যবহার করতে  পারেন।   বিশেষ করে সকালে এবং রাতে খাবারের পরে, সফট টুথ ব্রাশ দিয়ে দাঁত এবং জিব পরিষ্কার করা উচিত। উল্লেখ্য যে আমরা যারা দাঁত ব্রাশ করি, কিন্তু সাধারণত জিব ব্রাশ করি না বা পরিষ্কার করি না, এই জিবের ওপরে সাধারণত সবচেয়ে বেশি ময়লা পড়ে। আমাদের জিবের ওপরে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র আছে, এখানে হাজার হাজার খাদ্যকণা জমে, এগুলো জমে জমে ‘Volatile Sulfur Compounds’ নামে একধরনের গ্যাস তৈরি করে, এই গ্যাসই মূলত দুর্গন্ধের জন্য দায়ী, সুতরাং মাড়ি এবং দাঁত পরিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে জিবও পরিষ্কার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে বাজারে ভালো ব্র্যান্ডের ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে এবং অবশ্যই আপনার টুথব্রাশ ৩ থেকে ৪ মাস পর পর পরিবর্তন করতে হবে এবং বাজারে জিব পরিষ্কার করার অনেক উপকরণ আছে, তা ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে সাময়িকভাবে দাঁত মাজার ব্রাশ দিয়েও পরিষ্কার করা যেতে পারে।
৩.
অনেকের দেখা যায় দাঁত ব্রাশ করলে বা এমনি এমনি মাড়ি হতে রক্ত বের হয়। এটা দুটো কারণে হয়, স্থানীয় কারণ, যেটাকে আমরা বলি ডেন্টাল প্লাক, এটা স্কেলিং দ্বারা সারানো যেতে পারে, আরও একটি হলো অজানা কারণ, যেমন কারও রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে বা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস থাকলে সুতরাং সঠিক ডায়াগনোসিস দ্বারা বোঝা যাবে এর কারণ এবং সে অনুসারে রোগীর চিকিৎসাব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। সাধারণ কারণের জন্য আমরা যে ধরনের ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকি তা হলো: বাজারে অনেক ধরনের মাউথওয়াশ পাওয়া যায়, এগুলো সাধারণত মানুষ ব্যবহার করে থাকে, যার বেশির ভাগই অ্যালকোহল যুক্ত, আমার পরামর্শ হলো, এগুলো বর্জন করে বাসায় তৈরি অল্প গরম লবণ মিশ্রিত পানি দিয়ে গারগেল করা যেতে পারে এবং কুলি করা যেতে পারে, এতে মুখ এবং জিবগহ্বরে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না, ফলে রোগীর অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে দাঁত থেকে রক্ত পড়া আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায় এবং করোনা রোগীদের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত কার্যকরী হিসেবে পৃথিবীতে প্রমাণিত হয়েছে। এখানে অবশ্যই একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আপনার মাড়িতে বা মুখে ঘা আছে কি না, যদি থাকে তবে অবশ্যই পরীক্ষা করে আপনার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
৪.
প্রত্যেক মানুষকে অবশ্যই করোনাকালীন সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত, বিশেষ করে সবুজ শাকসবজি, ভিটামিন সি এবং প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে জ্যাঙ্ক ফুড পরিহার করতে হবে। সঙ্গে আমার পরামর্শ হলো সব ধরনের চিনি–জাতীয় খাবার বর্জন করা উচিত। বিশেষ করে যাদের মুখগহ্বর শুষ্ক থাকে এবং মুখে পর্যাপ্ত লালা জমে না, সাধারণত তাদের, দাঁতের রোগের সঙ্গে সঙ্গে মুখে দুর্গন্ধ হয়। এ থেকে বাঁচার জন্য সাময়িকভাবে সুগারলেস চুইংগাম বা লজেন্স খাওয়া যেতে পারে বা মুখে এলাচি বা লবঙ্গ চিবানো যেতে পারে।
৫.
তামাকের সঙ্গে ফুসফুসের ক্ষতি এবং এর সঙ্গে করোনা রোগের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে সুতরাং সম্পূর্ণরূপে পান, সুপারি, জর্দা এবং নিকোটিন পরিহার করতে হবে। এগুলোর ফলে দাঁতে ও জিবে নিকোটিন জমে, উক্ত কারণে মুখে পর্যাপ্ত লালা জমতে বাধা দেয় এবং দাঁতের নানা রোগ হয় সুতরাং পান, সুপারি, জর্দা এবং নিকোটিন এগুলো সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা উচিত।
৬.
নারীরা যখন গর্ভবতী হন, তখন আমরা সাধারণত পরামর্শ দিই পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণের জন্য, কারণ গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের হাড় এবং দাঁতের ভিত্তিরচিত হয়, সুতরাং অনাগত বাচ্চার সুস্থ এবং স্বাভাবিক হওয়ার জন্য মায়ের বিশেষ যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
৭.
শিশুর ৬ মাস বয়সেই দুধ দাঁত আসতে থাকে কোনো কারণে যদি এটি না আসে এবং ৬ থেকে ৭ বছরে এই দুধদাঁত পরে স্থায়ী দাঁত আসে এই চক্র যদি না সম্পূর্ণ হয়, তবে দেরি না করে অবশ্যই একজন দন্ত চিকিৎসকের সঙ্গে  যোগাযোগ  করা উচিত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
৮.
বাংলাদেশের অনেক মানুষের পেটে আলসার, গ্যাস এবং বদহজমের সমস্যা রয়েছে এবং যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তাদেরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা প্রয়োজন, কারণ এসব রোগের সঙ্গে দাঁতের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় এও দেখা গেছে যারা রেগুলার ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল ব্যবহার করে, তাদের মুখের এবং দাঁতের বিভিন্ন অসুখের জন্য এগুলো দায়ী, সুতরাং এগুলো বর্জন করতে হবে।
৯.
গর্ভাবস্থায় মা যদি কোনো কারণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকেন, তাঁদের বাচ্চার দাঁতে সমস্যা হতে পারে, সুতরাং যাঁরা এই সমস্যায় পড়ে গেছেন, তাঁদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, আধুনিক চিকিৎসা দ্বারা সম্পূর্ণভাবে এই সমস্যাগুলো ভালো করা যায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ   ডেন্টিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং আপনার সমস্যার সমাধান করুন।
১০.
অনেকে আমার কাছে আসেন দাঁতের হলুদ বর্ণের সমস্যা নিয়ে, যেটি ব্লিচিং দ্বারা সম্পূর্ণরূপে সাদা করা সম্ভব, সুতরাং নানা ধরনের ডেন্টাল চিকিৎসা দ্বারা বৈজ্ঞানিক উপায়ে এই সমস্যা থেকে সম্পূর্ণরূপে ভালো হওয়া সম্ভব।
১১.
এখন পৃথিবীব্যাপী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব হয়েছে এবং তার ওপরে যুক্ত হয়েছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সুতরাং চিকনগুনিয়া বা ডেঙ্গু হলে রক্তে প্লাটিলেট কমে, অতএব এটি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দাঁত বা মাড়ি হতে রক্ত পড়তে পারে এই অবস্থায় প্লাটিলেট স্বাভাবিক হওয়ার চিকিৎসা করতে হবে এবং এরপর যাদের দাঁতের সমস্যা আছে তারা দাঁতের চিকিৎসা করতে পারেন।
সর্বোপরি দন্ত চিকিৎসক  হিসেবে বলতে পারি, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম দিতে হবে। কারণ দাঁতের সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গভীর এবং সুস্পষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। সুতরাং দাঁত ভালো থাকলে দেহের প্রবেশ পথ ভালো থাকবে এবং করোনাভাইরাস ও প্রবেশ করতে পারবে না ইনশা আল্লাহ । তাই উন্নত বিশ্বে বলা শুরু হয়ে গেছে, ;Celebration of Birthday once in a year but go to dentist twice in a year’। বছরে দুবার ডেন্টিস দ্বারা মুখ ও দাঁতের পরীক্ষা করে আল্লাহর  রহমতে সুুুস্থ  জীবন যাপন করা সম্ভব। এখন ডেন্টিস্টের কাছে গেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে যেতে হবে।
একজন মেডিকেল প্র্যাকটিশনার হিসেবে এই মহামারির সময় আমার পরামর্শ হলো, প্রথমত আপনি  আল্লাহ তায়া’লার উপর আপনার বিশ্বাস আরো মজবুত  করুন। জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালন করা ও   রাসূলের   আদর্শ বাস্তবায়নে নিজেকে প্রস্তুত করুন।  দ্বিতীয়ত    ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ মেনে চলুন, ঘরে থাকুন, আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হোন শারীরিক  দূরত্ব বজায় রাখুন, বিষোদগার কিংবা ঘৃণা-বিদ্বেষ না ছড়িয়ে বরং করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে   বেশি বেশি আল্লাহর  নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুন।  যাঁরা ফ্রন্টলাইনে আছেন, তাঁদের সমর্থন করুন, সহায়তা করুন।  আপনার প্রতিবেশী কেউ আক্রান্ত হলে তাকে সাহস দিন, সহায়তায় এগিয়ে আসুন । আপনার সুস্থতায় সচেতন হোন ,  পরিবার ও প্রতিবেশীকে সচেতন করুন ,  মহান আল্লাহ তায়া’লার   হুকুম  পালনে সকলকে উৎসাহিত করুন।  এবং উপরিউক্ত পরামর্শগুলো মেনে চলুন। আমি বিশ্বাস করি সুদিন আর বেশি দূরে নয়, করোনা মহামারি থেকে আল্লাহ   আমাদের কে অচিরেই মুক্তি দিবেন  ইনশা আল্লাহ  এই শুভ কামনায়, সবাইকে ধন্যবাদ।
লেখকঃ  কনসালটেন্ট
ইনসাফ  ডেন্টাল কেয়ার
সদর রোড , বরিশাল
Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on pinterest
Share on telegram

Leave a Comment

সর্বশেষ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

এইচ এম মাহমুদ হাসান-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেছেন, দেশবিরোধী সকল আধিপত্যবাদী শক্তিকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিতে হবে। দেশ স্বাধীন হয়েছে দিল্লির গোলামির জন্য নয়; মাথা উঁচু করে নিজের অধিকার আদায়ের জন্য। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের হাতেই আজ স্বাধীনতা ও দেশ বিপন্ন।

দিল্লির গোলামীর জন্য মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেনি-ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তর

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে

  • ফজর
  • যোহর
  • আসর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যদয়
  • ভোর ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ
  • দুপুর ১২:০৮ অপরাহ্ণ
  • বিকাল ১৬:২৮ অপরাহ্ণ
  • সন্ধ্যা ১৮:১৫ অপরাহ্ণ
  • রাত ১৯:২৮ অপরাহ্ণ
  • ভোর ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ