২০১৮ সালের এই দিনেই বাংলাদেশ দেখেছিল এ যুগেও বেঁচে আছে রফিক, সালাম, বরকতদের উত্তরসূরীরা । এ প্রজন্মের তরুণরা তাদের নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। দ্রোহ, তারুণ্য আর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তাদের ক্ষিপ্রতা ও একাগ্রতা ছিল চোখে পড়ার মত। ন্যায় বিচারের দাবিতে তাদের আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে !
ঐতিহাসিক কিশোর বিদ্রোহের ৩য় বর্ষপূর্তি আজ।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাইয়ের আজকের দিনেই ঐতিহাসিক ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল । এক ঝাঁক কিশোর কিশোরী রাজপথে নেমে ক্ষয়ে পড়া একটি রাষ্ট্র যন্ত্রকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল এই রাষ্ট্র যন্ত্রের সব কটি পিলারই ক্ষয়ে পড়েছে।
তাদের মানববন্ধন, মিছিল, রাস্তা অবরোধ, গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা, রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে দেশবাসী অনুধাবন করেছিল রাষ্ট্র হিসেবে কতটা ভঙ্গুর, অগোছালো ও বেপোরোয়া আমরা।
ঠিক তিন বছর পর ২০২১ এর আজকের দিনটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাংলাদেশে অর্ধ সহস্র দিন যাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। ৫০০ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যেতে পারছে না। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহকে নিয়ে কি করতে চাচ্ছে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন রূপরেখাও দিচ্ছে না ।
অথচ সম্প্রতি ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ব্যবস্থাগুলো শেষ পদক্ষেপ হিসেবে নেওয়ার বদলে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হলেও বার ও রেস্তোরাঁগুলো খোলা ছিল।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য সংক্রমণ শূন্যের কোঠায় আসার অপেক্ষায় থাকা উচিৎ নয় উল্লেখ্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সংক্রমণের প্রধান চালিকাশক্তিগুলোর মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রশমন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি সামাল দেওয়া সম্ভব। স্কুল খুলে দেওয়া বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঝুঁকি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এবং যে কমিউনিটিতে স্কুল অবস্থিত সেখানকার মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনা করে নেওয়া উচিত।’
‘স্কুলগুলো পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করা যায় না। বৈশ্বিক পর্যায়ে টিকা ঘাটতি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। এ অবস্থায় টিকাদানের ক্ষেত্রে সম্মুখ সারির কর্মী, মারাত্মক অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া অব্যাহত থাকবে। স্কুলে প্রবেশের আগে টিকাদান বাধ্যতামূলক না করাসহ সব স্কুলের উচিত যত দ্রুত সম্ভব ব্যক্তিগতভাবে স্কুলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা।’
এমতাবস্থায় দেশ ও জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে আবারো তারুণ্য দীপ্ত এই কিশোর শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এবারের দাবি শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার দাবি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি ।
আমি স্বপ্ন দেখি একুশ শতকের এই দূর্বার কাফেলাকে নিয়ে। দেশ আমার দায়িত্বও আমার । এই ধ্বসে পড়া রাষ্ট্র মেরামতে তারুণ্যের এই দ্রোহই, ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করবে ইনশাআল্লাহ । যুগে যুগে এই বাংলার মাটি উপহার দিয়েছে এমন দূর্দমনীয় বিপ্লবী তারুণ্য।
লেখক,
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন